শান্তি আলোচনায় ‘রাজি’ অনুপ চেটিয়া

উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে চলমান শান্তি আলোচনায় সম্মতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2015, 08:07 AM
Updated : 26 Nov 2015, 08:07 AM

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বুধবার আসামের রাজধানী গৌহাটির কেন্দ্রীয় কারাগারে অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বৈঠকের পর রাজখোয়া একথা জানান।

রাজখোয়া কারাগারের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা গৌহাটির কেন্দ্রীয় কারাগারে সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। অনুপ চেটিয়া শান্তি প্রক্রিয়ায় তার সমর্থন ব্যক্ত করেছেন এবং আলোচনায় অংশ নেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।”

১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার একটি বাসা থেকে অনুপ চেটিয়া ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়।

বাংলাদেশে ১৮ বছর কারাবন্দি থাকার পর গত ১২ নভেম্বর তাদেরকে ভারত সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আট বছর আগেই তাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়।

৪৮ বছর বয়সী এই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, ব্যাংক ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ২০০৫, ২০০৮ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন অনুপ চেটিয়া, যার আসল নাম গোলাপ বড়ুয়া। শরণার্থীর মর্যাদা পাওয়ার জন্য ২০০৮ সালে জাতিসংঘেও তিনি চিঠি লেখেন।

এরপর সাজার মেয়াদ শেষ হলেও আশ্রয়ের সেই আবেদনের কারণে হাই কোর্টের নির্দেশে আটকে থাকে তার মুক্তি। হাই কোর্টের আদেশে বলা হয়েছিল, রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগার থেকে ছাড়া যাবে না।

এরই মধ্যে ভারত সরকারের চাপে উলফার অবস্থান দুর্বল হতে থাকে। উলফা চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা বাংলাদেশে আটক হন। ২০০৯ সালের শেষ দিকে তাদের ভারতে হস্তান্তর করা হয়। সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার শর্তে তারা মুক্তিও পান। ২০১১ সালে তাদের সঙ্গে ভারত সরকারের শান্তি আলোচনা শুরু হয়।

২০১৩ সালে দেশটির গণমাধ্যমে খবর আসে উলফার সামরিক প্রধান পরেশ বড়ুয়া আসামের স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অনড় থাকলেও সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া সমঝোতার পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। সেসময় অনুপ চেটিয়াও বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য করা আবেদন প্রত্যাহার করে ভারতে ফেরার আগ্রহ দেখান।

বুধবার দিল্লি থেকে ফিরে বেলা পৌনে ৩টার দিকে উলফার কেন্দ্রীয় কমিটির ছয় সদস্য রাজখোয়া, গগৈ, শশধর, চিত্রবন, প্রণতিদেবী ও রাজু বরুয়ারা কারাগারে অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। সাক্ষাৎ শেষে তারা বিকাল সোয়া ৫টার দিকে বের হন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর।

এর আগে ১৯৯০ সালে শেষ বার উলফার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা একসঙ্গে বসেছিলেন। ২৫ বছর পরে বুধবার ফের কারাগারে মিলিত হন তারা। ছিলেন না কেবল পরেশ।

উলফার সহ-সভাপতি প্রদীপ গগৈ সাংবাদিকদের বলেন, “চেটিয়া গত চার বছরে হওয়া শান্তি আলোচনা সম্পর্কে বিশদে খবর নেন। রাজখোয়া আমাদের দাবি-সনদ তাকে পড়ে শোনান। অনুমতি না থাকায় তার হাতে সেটি তুলে দেওয়া যায়নি। তিনি শান্তি আলোচনায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে আলোচনায় থাকতে চেয়েছেন।”

আনন্দবাজার লিখেছে,“পরেশ বড়ুয়াকে বাদ দিয়ে কমিটি বা আলোচনা কোনোটাই পূর্ণ হয় না। আবার অুনপ চেটিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ পরেশ বড়ুয়ার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।”

এবার কি তাহলে অনুপ চেটিয়ার মাধ্যমে পরেশ বড়ুয়াকে আলোচনায় আনার চেষ্টা করা হবে- এ প্রশ্নে গগৈ বলেন, “পরেশ তো নিজের মতো দল করে পৃথক কমিটি করে দিয়েছেন।

“তবে আমরা সবসময় চাই, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এমন পরিবেশ তৈরি করুক— যেখানে বাইরে থাকা নেতারাও নিজেদের মত প্রকাশ করতে আসতে পারেন। অবশ্য পরেশকে ডাকার ব্যাপারে চেটিয়ার সঙ্গে আলোচনা হয়নি। তিনি যা ভালো মনে হয় করবেন।”

অনুপ চেটিয়া গত ২৩ নভেম্বর থেকে কেন্দ্র নয়, রাজ্য সরকারের হেফাজতে কারাবন্দি। তার বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের কাছে নয়টি মামলা আছে। আগামী ৫ ডিসেম্বর তাকে আদালতে হাজির করার কথা।

আনন্দবাজার লিখেছে, মঙ্গলবার উলফা ও কেন্দ্রের শান্তি আলোচনায় অনুপ চেটিয়া না থাকায় কার্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি। পরের বৈঠক ডিসেম্বরে। সেখানে তাকে হাজির করতে বদ্ধপরিকর উলফা। কিন্তু তা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে।

দিল্লির বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব মহর্ষি অনুপ চেটিয়ার মুক্তির জন্য আলোচনার মধ্যস্থতাকারী পি সি হালদারকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন।

তবে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বুধবার বলেন, “শান্তি আলোচনা সফল করার স্বার্থে চেটিয়ার আলোচনায় অংশ নেওয়া দরকার। এজন্যই আমরা তার প্রত্যার্পণের জন্য চাপ দিচ্ছিলাম। কেন্দ্র যেন অনুপ চেটিয়াকে শান্তি আলোচনা সফল করার স্বার্থে কাজে লাগায়।”