বিবিসি বলছে, সোমবার প্রকাশিত তালেবানের নতুন নেতা মোল্লা আখতার মনসুরের এক জীবনীতে মোল্লা ওমর ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল মারা গেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কৌশলগত কারণে ওমরের মৃত্যুর বিষয়টি গোপন রাখে তালেবান। তখন শুধু অল্প কয়েকজন তালেবান নেতা ওমরের মৃত্যুর বিষয়টি জানতেন।
চলতি বছরের জুলাইয়ে আফগান গোয়েন্দা সংস্থা পাকিস্তানের একটি হাসপাতালে মোল্লা ওমর মারা গেছেন বলে জানায়। এর আগ পর্যন্ত ওমরের নামে দাপ্তরিক বিবৃতি প্রকাশ করা অব্যাহত রেখেছিল তালেবান।
৩০ জুলাই তালেবানের পক্ষ থেকে ওমরের মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়া হয়। কিন্তু কখন, কোথায় বা কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। শুধু অসুখে ভুগে তার মৃত্যু হয়েছে এবং ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের পরেও তিনি আফগানিস্তানেই ছিলেন বলে দাবি করে তালেবান।
ওমরের মৃত্যুর খবরটি কেন চেপে রাখা হয়েছিল, আখতারের জীবনীতে তাও পরিষ্কার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠীটি।
জীবনীতে বলা হয়েছে, “ইসলামিক আমিরাতের (তালেবান) সর্বোচ্চ নেতৃত্ব পরিষদের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা ও স্বীকৃত ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা মিলে মৃত্যুর দুঃখজনক এই খবরটি গোপন রাখার এবং অপূরণীয় ক্ষতির এই বিষয়টি ইতোমধ্যেই দলের অল্প যে কয়েকজন সহকর্মীকে জানানো হয়েছিল তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।”
“এই সিদ্ধান্তের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, ২০১৩ সালকে মুজাহিদ ও বিদেশি দখলদারীদের মধ্যে শক্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত বছর হিসেবে বিবেচনা; কারণ বিদেশি দখলদারীরা ২০১৪ সালের শেষে তাদের চালানো সব ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল।”
সর্বোচ্চ পরিষদের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোল্লা ওমরের মৃত্যুর পরও তার নামে বিবৃতি প্রকাশ করতে থাকে তালেবান।
মৃত্যুর তিন মাস পর অগাস্টে এক বিবৃতিতে তালেবান জানায়, ঈদ উপলক্ষে দেওয়া বক্তৃতায় মোল্লা ওমর বলেছেন, “ইসলামি শরিয়াভিত্তিক একটি বহুদলীয় সরকার গঠনের জন্য আফগান জনগণের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছার চেষ্টা করছে তালেবান।”
২০১৪ সালের অক্টোবরে মোল্লা ওমরের নেতৃত্বের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার দায়ে পাকিস্তান তালেবানের মুখপাত্র শহিদুল্লাহ শহিদ ও অন্য পাঁচজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়।
২০১৫ সালের এপ্রিলে সবাইকে বিস্মিত করে মোল্লা ওমরের একটি জীবনী প্রকাশ করে তালেবান। সর্বোচ্চ নেতার নেতৃত্বের ১৯ বছর উপলক্ষে জীবনীটি প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করে তালেবান।
এতে বলা হয়, মোল্লা ওমর আফগানিস্তানের প্রতিদিনের ও বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে “সজাগ” রয়েছেন।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুলাইতে বলা হয়, আফগান সরকারের সঙ্গে তালেবানের শান্তি আলোচনায় মোল্লা ওমরের সমর্থন আছে।
ওই মাসেই আফগান গোয়েন্দা সংস্থা মোল্লা ওমর মারা গেছেন বলে দাবি করার পর ৩০ জুলাই তা স্বীকার করে তালেবান।
আফগান গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যানুযায়ী, মোল্লা ওমর পাকিস্তানের করাচির একটি হাসপাতালে শারীরিক অসুস্থতায় মারা যান। মোল্লা ওমর সেখানে আছেন এটি সব সময়ই অস্বীকার করে এসেছে পাকিস্তান।