মুম্বাই হামলার আসামি ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি কার্যকর

ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে ১৯৯৩ সালের মার্চে ধারাবাহিকবোমা হামলার অন্যতম আসামি ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি কার্যকর করেছে ভারত।

>>আইএএনএস/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2015, 03:48 AM
Updated : 1 August 2015, 12:14 PM

বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নাগপুরের কারাগারে ইয়াকুব মেমনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। এদিন ছিল তার ৫৪তম জন্মদিন।

১৯৯৩ সালে মুম্বাইয়ের (তখন বোম্বে নামে পরিচিত ছিল) শেয়ার বাজার, একটি জনপ্রিয় সিনেমা হল ও দুটি মার্কেটে সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়, যাতে অন্তত ২৫৭ জন নিহত হয় এবং ৭১৩ জন আহত হন।

এর কয়েক মাস আগে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মুসলমানদের হত্যার প্রতিশোধ নিতেই ওই হামলা চালানো হয়। 
ইয়াকুবের ভাই ‘টাইগার’ মেমন এবং মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম ওই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন বলে পুলিশের ধারণা।

‘টাইগার’ মেমন ও দাউদ ইব্রাহিম পলাতক। কথিত আছে, তারা এখন আছেন পাকিস্তানে।
  
নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ১৯৯৪ সালে পাকিস্তান থেকে ভারতে ফিরে আসেন ইয়াকুব। এর কয়েকদিন পরই তাকে আটক করা হয়। 
 
ইয়াকুবের দাবি, তিনি আত্মসমর্পণ করেন। আর পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়।

এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অন্যদের শাস্তি কমে যাবজ্জীবন হয় ২০১৩ সালে। তবে ‘হামলা পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার’ দায়ে ইয়াকুব মেমনের ২০০৭ সালে পাওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে ‍মুম্বাইয়ের বিশেষ আদালত।

আদালতে বেশ কয়েকটি আবেদন করার পর এব্ং বিভিন্ন আদালতে তার ক্ষমার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হল।

এসব প্রক্রিয়ার মধ্যে মুম্বাই হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, মহারাষ্ট্রের গভর্নর এবং ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনও রয়েছে। 

মেমনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর তার ময়নাতদন্ত হয় কারা হাসপাতালে। নাগপুর সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি দল তার ময়নাতদন্ত করেন।

প্রথম দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেমনের লাশ আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। তারা কারাগার চত্বরেই একটি স্থানে তাকে দাফন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কিন্তু ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পর মেমনের ভাই সুলাইমান জেল কর্তৃপক্ষের কাছে লাশ হস্তান্তরের আবেদন জানান। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, তারা মেমনের শেষকৃত্য মুম্বাইয়ে করতে চান।

সুলাইমানের আবেদন দ্রুততম সময়ে বিধি অনুযায়ী গৃহীত হয়। তবে শর্তাধীন তার লাশ হস্তান্তর করা হয়।

 এরপরই মেমনের লাশ নাগপুর বিমান বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিমানে করে তার লাশ নিয়ে মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার তার দাফন হওয়ার কথা রয়েছে।

মেমনের বাড়ি মুম্বাইয়ের মাহিম এলাকাসহ শহরের অন্যান্য স্থানেও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাদনাভিস এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দেবেন বলে জানা গেছে।

মেমনের ফাঁসির কয়েক ঘণ্টা আগেও এটি রদ করার জন্যে আইনি লড়াই চলে।

১৯৯৩ সালের মুম্বাই হামলার একমাত্র এবং প্রথম ব্যক্তি মেমন যার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হল। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ১১ জনের শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল বিশেষ টাডা আদালতের একজন বিচারক মেমনের মৃত্যুপরোয়ানা জারি করেন এবং ৩০ জুলাই তার দণ্ড কার্যকরের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল।

দণ্ড কার্যকরের জন্য মহারাষ্ট্র সরকার প্রায় তিনসপ্তা আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে।

মেমন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের গভর্নরের কাছেও প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়। এরপর পুনরায় সুপ্রিম কোর্ট ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানালে তাও প্রত্যাখ্যাত হয়।

মেমনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ১৪ পিছিয়ে দিতে সুপ্রিম কোর্টে করা সর্বশেষ আবেদন বৃহস্পতিবার সকালে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।