ভুল বুঝে আক্কু চৌধুরীকে মুক্তিযোদ্ধারা ধরে নিয়েছিলেন

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2016, 06:23 PM
Updated : 22 Dec 2016, 06:24 PM

আখতার চৌধুরী। সম্ভ্রান্ত ও বিত্তবান পরিবারে জন্ম। বাবা সফল ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকার অভিজাত এলাকায় বেড়ে উঠেছিলেন তিনি, পড়াশোনাও মিলিটারি স্কুলে।

সময়টা ছিল ১৯৭১। এরই মাঝে ঢাকায় শুরু হলো, পাক হানাদারদের ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হত্যাযজ্ঞ। পরিবারের চাপ ছিল দেশের বাইরে চলে যাওয়ার ব্যাপারে। সামনে ছিল সুন্দর ভবিষ্যতের হাতছানি। পুরো পরিবার তৈরি ছিল সুইজারল্যান্ড যাওয়ার জন্য। কিন্তু আখতারের মন তাতে সায় দেয়নি। মা কে খুলে বলেন নিজের ইচ্ছের কথা। যুদ্ধে যাবেন তিনি। দেশ মায়ের ডাককে তো উপেক্ষা করা যায় না। বন্ধু আরিফসহ রওনা দিলেন কুমিল্লার দিকে। উদ্দেশ্য বর্ডার পার হওয়া। চান্দিনার কাছে এক অজানা জায়গায় রাত্রিযাপন করলেন। কিন্তু রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে কাদের যেন দেখতে পেলেন সেই রাতে। কেঁপে উঠল বুক। মুহূর্তেই ভুল ভাঙলো। ওরা মুক্তিযোদ্ধাদের দল। বিধির বাম হয়ত একেই বলে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ভাবতে লাগলেন রাজাকার, গুপ্তচর। তাদের ধরে নিয়ে গেল ওপারের ক্যাম্পে। শুরু হল জিজ্ঞাসাবাদ।

আরিফ, আখতাররা কিছুতেই বুঝাতে পারছিলেন না তাদের আসল পরিচয়। কিন্তু ভবিষ্যৎ তো অন্যভাবে লেখা ছিল। এ কারণেই আখতার চৌধুরীর হঠাৎ একজন পরিচিত মানুষের দেখা পেয়ে গেলেন। তার প্রিয় লুলু খালা। লুলু খালাও তাকে দেখে অবাক। বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘আরে তুই এখানে?' সুলতানা কামালকে আখতার চৌধুরী লুলু খালা নামেই ডাকতেন।

এরপর থেকে স্বপ্ন পূরণের সময় শুরু। যুদ্ধ জয়ের প্রতিজ্ঞা ছিল তাদের চোখে মুখে। ক্যাম্প থেকে দুই বন্ধু পাড়ি জমালেন কলকাতায়। এলগিন রোডে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাড়ির নিচতলায় বাংলাদেশ ইনফরমেশন ব্যাংকে যোগ দিলেন তারা। তাদের দায়িত্ব ছিল সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ্গুলো সংরক্ষণ করা। তারপর তারা এক সপ্তাহ ট্রেনিং নেন মেজর হুদার কাছে। ১৯৭১ এর নভেম্বর মাসে তারা সেক্টর ৯-এ যুদ্ধে যোগ দেন। সেক্টর ৯ এর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর এম এ জলিল।

আখতার চৌধুরী তার দলের অন্য সদস্যদের নিয়ে সাতক্ষীরা, খুলনা এলাকায় যুদ্ধ করেছেন। ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর তাঁরা সাতক্ষীরা মুক্ত করেন। যুদ্ধ ১৮ বছরের বালক আখতারকে পরিবর্তন করে পরিপূর্ণ যুবকে পরিণত করেন। তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন আক্কু চৌধুরী নামে।

আক্কু চৌধুরীর সেই যুদ্ধ আজও থামেনি। বর্তমানে তিনি আরও অনেকের সাথে মিলে গড়ে তুলেছেন একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।