চোখে যখন প্রতিশোধের আগুন

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2016, 07:32 PM
Updated : 21 Dec 2016, 10:45 AM

১৯৭১ সালে ইমরুল চৌধুরীর বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। এত অল্প বয়সেই প্রত্যক্ষ করলেন ২৫ মার্চের কালো রাত। পথে পথে লাশের স্তুপ, রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়ির নৃশংস হত্যাযজ্ঞ দেখে অনেক ভেঙে পড়েছিলেন। তবে চোখের পানি মুছে সিদ্ধান্ত নেন, পাকিস্তানি বাহিনীকে সমুচিত জবাব দিতে হবে। যুদ্ধে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করেন তখন থেকেই।

ঢাকা থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কল্যাণপুরের ধান ক্ষেতের আল হয়ে তুরাগ নদী পার হলেন প্রথমেই। সেখানে শুনতে পেলেন জয় বাংলার ধ্বনি। দেখতে পেলেন লাল সবুজের মাঝে সোনালী দেশের মানচিত্র খচিত পতাকা আকাশে উড়ছে। এরপরে পাড়ি দিলেন অনেকটা পথ।

কিছু এলাকায় পাকিস্তানিদের অগ্নিসংযোগ, বাড়িঘর লুট এবং হত্যাযজ্ঞ নিজ চোখে দেখে আর স্থির থাকতে পারেন নি। ২৫ শে এপ্রিল মাকে জানিয়ে, বেড়িয়ে গেলেন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে। অনেক কষ্ট স্বীকার করে পৌছালেন কেচুউয়াডাঙা ক্যাম্পে। কিছুদিন পরে  বাছাই পর্বে অংশ নিতে তিনিসহ আরও অনেকেই উপস্থিত হলেন সেই ক্যাম্পে। তাকে নির্বাচন করা হলো, তবে বাধ সাধল ইন্টারমিডিয়েট পাস নিয়ে।

তিনি এ বিষয়ে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘যুদ্ধ করতে এসেছি। নিজ রক্তে দেশকে রজ্জিত করতে এসেছি। অফিসার হতে নয়।’ শেষ পর্যন্ত তাকে নেওয়া হলো। চাকুলিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক পরিত্যক্ত বিমানঘাটিতে শুরু হলো তাদের প্রশিক্ষণ। সেখানে মর্টার চালনাসহ বিভিন্ন বিস্ফোরক প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো। প্রশিক্ষণ শেষে প্রথম অপারেশন হিসাবে রাজশাহীর সীমান্ত এলাকাতে তাদের পাঠানো হয়। পদ্মা নদী পার হয়ে তারা এগিয়ে চললেন সামনের দিকে। লক্ষ্য ছিল মাইন পেতে পাকিস্তানি কনভয় আক্রমন এবং সেতু উড়িয়ে দেওয়ার। প্রস্তুতি পর্বে কিছু জটিলতা দেখা দেয়। তবে তারা মনোবল হারান নি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০ জনের দলটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এ্যান্টি ট্যাঙ্ক মাইনযুক্ত করে এক অভিনব কায়দায় উড়ানো হলো সেতু। কিন্তু এখানে যেমন সফলতা এলো, তেমনি তিনজন সহযোদ্ধাকে হারানোর বেদনাও সহ্য করতে হলো। পাকিস্তানি বাহিনীর অনুচর রাজাকাররা সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেয়। সেই বীরযোদ্ধাদের বেনোয়াট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং পরবর্তীতে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সহযোদ্ধাদের হারিয়ে প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলছিল ইমরুল চৌধুরীর মনে। এর জের ধরে পরবর্তী সময়ে এই বিশ্বাসঘাতকদের চরম শাস্তি দেন তারা।

এরপর পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা এলাকাতে বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বিচরণ করেন ইমরুল চৌধুরী। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত যুদ্ধের ময়দানে ছিলেন তিনি। উনিশ বছরের তরুণ তখন জানতেন না, এই যুদ্ধ ৯ মাস চলবে নাকি ২০ বছর। মনের ভিতর তার একটা চিন্তাই কাজ করত, নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও দেশকে স্বাধীন কর‍্তে হবে।