মুক্তির আহ্বান

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2016, 01:45 PM
Updated : 15 Dec 2016, 02:00 PM

ঘাতকের হানায় যখন ক্ষত-বিক্ষত চারদিক, সে সময় বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে যোগ দিতে ঢাকা থেকে নিজের এলাকা কুমিল্লায় পাড়ি জমান মিজানুর রহমান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে এরইমধ্যে ভারতে চলে গেছেন সব সহপাঠী।

মিজানুরও সে পথ ধরেন, যোগ দেন মেঘালয়ের হাপানি ক্যাম্পে। শুরু হয় রণাঙ্গনের ট্রেনিং। ১০ জুন থেকে এক মাসের ট্রেনিংয়ে রপ্ত করেন হ্যান্ড গ্রেনেড আর থ্রি নট থ্রি রাইফেল চালানোর কৌশল। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের সহযোদ্ধাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে কিছুদিন বাবুর্চিদের সঙ্গে কাজ করেন তিনি।

প্রশিক্ষণ শেষে এবার যুদ্ধে যাওয়ার পালা। কিন্তু সীমান্ত ঘিরে রেখেছে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেখান থেকে তাদের না হটিয়ে কিছুতেই নিজেদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। জুলাইয়ের ২৫ তারিখ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা মিলে ঠিক করলেন রণকৌশল। ধ্বংস করতে হবে বর্ডার ঘিরে রাখা পাকিস্তানি আর্মির তিনটি বাঙ্কার। সিদ্ধান্ত হল তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে তারা চালাবেন গেরিলা আক্রমণ।

মিজানুর কাঁধে তুলে নিলেন এক পেটি গ্রেনেড। শুরু হল অপারেশন। সারা রাত ধরে চলা যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী যখন বিপর্যস্ত, ঠিক তখন সকাল ৭টা কিংবা ৮টার দিকে যখন ভোরের আলোয় আলোকিত চারদিক, মিজানুরের শরীরে একটার পর একটা গুলি লাগতে শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনীর লক্ষ্যে পরিণত হয়েছেন তিনি।

প্রথমে ডান পায়ে, পরে বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ মিজানুর যখন লুটিয়ে পড়েন মাটিতে, তার পিঠ বিদ্ধ করে হানাদারদের ছোড়া বুলেট। রক্তাক্ত এই যোদ্ধার মাথায় তখন একটাই প্রতিজ্ঞা ভর করে-‘যা কিছুই হোক না কেন, দেশকে ভালোবাসলে শুধু সামনে এগোতে হবে, পিছু হটা যাবে না।’ শুধু এই প্রতিজ্ঞার জোরেই রক্তাক্ত শরীর নিয়ে মিজানুর এগিয়ে যান সামনে।

যুদ্ধ শেষে সহযোদ্ধারা উদ্ধার করে তাকে নিয়ে যান একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এরপর দীর্ঘ সময় চিকিৎসা শেষে ৩ মার্চ নরসিংদী নিয়ে আসা হয় তাকে। তখনও শয্যাশায়ী মিজানুরের পুরোপুরি সংজ্ঞা ফেরেনি। এর কয়েকদিন পর তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেন ঢাকা মেডিকেলের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ২০ নম্বর সিটে। বঙ্গবন্ধুর  ঘনিষ্ঠ বন্ধু চিকিৎসক মাহমুদ আলীর তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধে তার সেক্টর কমান্ডার মেজর হায়দার, প্লাটুন কমান্ডার সুবেদার চান মিয়া ও গ্রুপ কমান্ডার সেরাজুল ইসলামকে আজও তার মনে পড়ে।

বর্তমানে শারীরিকভাবে অক্ষম এই মুক্তিযোদ্ধা অকুতোভয় চেতনায় জয় করেছেন দেশের স্বাধীনতা আর নিজের জীবনের সংগ্রাম।