এটা অন্য বাংলা: আনন্দবাজার

ভারতের হারকে ‘অঘটন বললে’ বাংলাদেশের গৌরবকে ‘অপমান করা হবে’ বর্ণনা করে ওয়ানডে ক্রিকেটে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের কথা তুলে ধরেছে ভারতের জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা।

সোশাল মিডিয়া ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2015, 06:41 AM
Updated : 19 June 2015, 08:16 AM

বৃহস্পতিবার সিরিজের প্রথম ম্যাচে অভিষিক্ত মুস্তাফিজুর রহমানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ায় ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে নিয়েও সমালোচনা করেছে পত্রিকাটি।

আনন্দবাজার লিখেছে, “দুই প্রতিবেশীর এক যুদ্ধকে কীভাবে ক্রিকেটের বাইশ গজ থেকে তুলে এনে জীবনের বাইশ গজে আছড়ে ফেলা যায়, দেখে নিল বৃহস্পতিবারের মিরপুর মাঠ।”

শুক্রবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদন অনেকেই ফেইসবুকে শেয়ার করেছেন, মন্তব্য করে অংশ নিয়েছেন আলোচনায়।  

এই ম্যাচে ভারতকে ৭৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা, যা সমর্থকরা দেখছেন বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ‘অন্যায়ভাবে হারানোর’ মধুর প্রতিশোধ হিসাবে।

আনন্দবাজার লিখেছে, “কোনও সন্দেহ নেই, চার মাস ধরে পুড়ে চলা এক অপমানের বৃত্ত এ দিন মিরপুর মাঠে শেষ করে ফেললেন এগারো বাঙালি। কাপ কোয়ার্টার ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নিয়ে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ‘মহাভারত’-কে ধুলোয় মিশিয়ে।

“বাংলাদেশ দেখিয়ে দিল, বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল ফ্লুক ছিল না। দেখিয়ে দিল, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ জয়কে আশ্চর্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার কোনও দরকার ছিল না।”

বৃহস্পতিবার মিরপরের জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের খেলার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের ধারাবাহিক সাফল্য নিয়েও প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভারতীয় পত্রিকাটি।

“এশীয় ক্রিকেটে তো বটেই, গোটা ওয়ান ডে পৃথিবীতেই তারা এখন দুর্নিবার শক্তি। যারা ইংল্যান্ডকে হারাতে পারে। পাকিস্তানকে পারে। ভারতকেও পারে।

পারে এক অজানা আতঙ্ককে লেলিয়ে দিয়ে।”

তরুণ পেসার মুস্তাফিজের স্তুতিতে আনন্দবাজার লিখেছে, “এত দিন পর্যন্ত মুস্তাফিজুরের নামি উইকেট বলতে ছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি যুদ্ধে শাহিদ আফ্রিদি আর মহম্মদ হাফিজ। আজ থেকে কত নাম জুড়ে গেল। রোহিত শর্মা। অজিঙ্ক রাহানে। রবীন্দ্র জাডেজা...।

সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ আরও বড় স্কোর করতে পারত বলেও মনে করেন আনন্দবাজারের প্রতিবেদক।

তিনি লিখেছেন, “এমএস ধোনির ভাগ্য ভাল, বাংলাদেশ সাড়ে তিনশোয় যায়নি। অথচ যাওয়ার যাবতীয় সম্ভাবনা ছিল।”

তিনি প্রতিবেদন শেষ করেছেন এইভাবে-  “ভারত শেষ পর্যন্ত সিরিজ জিতবে কি না সময় বলবে। কিন্তু এমএসডি একটা ব্যাপার বুঝে মাঠ ছাড়লেন। এটা আর অতীতের বাংলা নয়। অন্য বাংলা। নতুন বাংলা। শের-ই-বাংলা!”

বিতর্কে ধোনি

কেবল বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় নয়, ভারতীয় দলপতির অধিনায়কত্ব নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেছে আনন্দবাজার।

পত্রিকাটি লিখেছে, ভারত অধিনায়ক মাঠে যা করেছেন, তা তাকে সাধারণত করতে দেখা যায় না।

“মুস্তাফিজুরকে ভারত অধিনায়ক ধাক্কা মেরে বসলেন।... উনিশের পেসারকে মাঠের বাইরে চলে যেতে হল সঙ্গে সঙ্গে।... প্রত্যুত্তরটাও পেলেন ভারত অধিনায়ক। মুস্তাফিজুর ফিরে এসে ভারতকেই ম্যাচ থেকে ধাক্কা মেরে বার করে দিলেন।”

ধোনির এই আচরণে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়ার কথা তুলে ধরে আনন্দবাজার লিখেছে, “অনেকে বলতে থাকেন, ধোনির উপর শ্রদ্ধাটাই চলে গেল।”

হারের পর ভারতীয় খেলোয়াড়দের হতাশার চিত্রও তুলে এনেছে আনন্দবাজার।

“টিম ইন্ডিয়া এতটাই হতাশ হয়ে পড়ে ম্যাচ নিয়ে যে, তারা অভুক্ত থেকেই মাঠ ছাড়ে। যদিও নৈশভোজের যাবতীয় ব্যবস্থা ছিল স্টেডিয়ামে। এবং হোটেলে ফিরেও তারা অভুক্ত থেকে গিয়েছেন বলে খবর।

“পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে যে ভারত অধিনায়ককে দেখা গেল, মুখ তার যন্ত্রণায় বেঁকেচুরে গিয়েছে। বিশ্বকাপের পর ওয়ান ডে-তে এটা তার কামব্যাক ম্যাচ ছিল। এমএসডি রান পেলেন না। প্রয়োজনের দিনে দেশকে আবারও বাঁচাতে পারলেন না। অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠল।”

ম্যাচে ভারতের তিনজন পেসার খেলানোর সমালোচনা করেছে আনন্দবাজার। সেই সঙ্গে ধোনিকে প্রশ্ন করেছে, “প্রয়োজনের দিনে আরও একটু সাহসী কি হওয়া যেত না?”