বিজ্ঞাপনের আয় ‘ছাড়িয়ে গেছে’ সংবাদপত্রের বিক্রি

চলতি শতকে প্রথমবারের মতো বিশ্বে সংবাদপত্র বিক্রির আয় বিজ্ঞাপন থেকে আসা অংককে ছড়িয়ে গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2015, 07:07 AM
Updated : 3 June 2015, 02:41 AM

সংবাদপত্র ও প্রকাশকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ডব্লিউএএন-আইএফআরএ’  প্রকাশিত বার্ষিক এক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে চলমান ওয়ার্ল্ড নিউজ মিডিয়া কংগ্রেস, ওয়ার্ল্ড এডিটরস ফোরাম ও ওয়ার্ল্ড অ্যাডভারটাইজিং ফোরাম উপলক্ষে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ট্রেন্ড সার্ভে’ শিরোনামে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় বলে ‘ডব্লিউএএন-আইএফআরএ’ এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সংগঠনের মহাসচিব ল্যারি কিলম্যান প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করে সম্মেলনে বলেন, জরিপে যে তথ্য পাওয়া গেছে তার অর্থ হল, বিজ্ঞাপনের টাকার ভর্তুকিতে সংবাদপত্র ব্যবসার যে কাঠামো গড়ে উঠেছিল তার অবসান হয়েছে।

“আমরা এখন বলতেই পারি, পাঠকরাই এখন সংবাদপত্রের আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে সংবাদপত্রগুলো তাদের বিক্রি ও বিজ্ঞাপন মিলিয়ে আনুমানিক ১৭৯ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা এককভাবে পুস্তক প্রকাশনা, সংগীত বা চলচ্চিত্র শিল্পের আয়ের চেয়ে বেশি।

এই সময়ে সংবাদপত্র বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৯২ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ৮৭ বিলিয়ন ডলার এসেছে বিজ্ঞাপন থেকে।

এই প্রবণতাকে ল্যারি কিলম্যান অভিহিত করেছেন ‘বিজ্ঞাপনদাতানির্ভর সংবাদপত্র প্রকাশনা’ ব্যবসা থেকে ‘পাঠকনির্ভর সংবাদপত্র প্রকাশনা’ ব্যবসার দিকে যাওয়ার একটি ‘সাইসমিক শিফট’ হিসেবে। 

গত শতকে সংবাদপত্রের আয়ের ৮০ শতাংশও কখনো কখনো বিজ্ঞাপন থেকে এসেছে। তবে অঞ্চলভেদে এ অনুপাতের হেরফের হয়েছে। ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু বাজারে মোট আয়ের ৪০ শতাংশ এসেছে বিজ্ঞাপন থেকে। 

তবে সাম্প্রতিক এই জরিপে দেখা যাচ্ছে, সংবাদপত্র ব্যবসায় বিজ্ঞাপন থেকে আয় কমছে সারা পৃথিবীতেই। সেই তুলনায় বিক্রি থেকে আয় মোটামুটি স্থিতিশীল। 

কিলম্যান বলেন, যে কোনো পণ্যের প্রচারের জন্য এতদিন বিপণনকারীদের সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা ভাবতেই হত। কিন্তু সংবাদপত্র আর বিজ্ঞাপনদাতাদের এই ‘পারস্পরিক নির্ভরশীলতার যুগ’ শেষ হয়েছে।  বর্তমানে বিপণনের জন্য অন্তত ৬০ ধরনের বিজ্ঞাপনী মিডিয়া চ্যানেল রয়েছে। 

“তবে ২০১৫ সালে এসে এটা স্পষ্ট যে সংবাদপত্র শিল্প শেষ পর্যন্ত পতন আর হতাশার গল্পে পরিণত হবে না। প্রতিযোগিতার মধ্যেও সারা বিশ্বে সংবাদপত্রগুলো বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে নিজেদের গুরুত্ব ধরে রাখতে পেরেছে। তারা নতুন নতুন বাজার ও ব্যবসা কাঠামো খুঁজে বের করছে, যা সংবাদপত্রের প্রকাশনা ও ব্যবসার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মুদ্রিত সংবাদপত্রগুলো এখন সত্যিকার অর্থেই বহুমাত্রিক সংবাদমাধ্যম হয়ে উঠছে।”

‘ডব্লিউএএন-আইএফআরএ’ বলছে, ৭০টির বেশি দেশের সংবাদপত্র শিল্পের তথ্যের ভিত্তিতে তারা এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে, যা বিশ্বের সংবাদপত্র শিল্পের ৯০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।

ছবি: বিবিসি

ভবিষ্যৎ মোবাইলে

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের প্রতি দশজনের মধ্যে আটজন ঘুম থেকে ওঠার ১৫ মিনিটের মধ্যে তাদের ডিভাইস চেক করেন। প্রতিদিন গড়ে তারা মোবাইল ও ট্যাবলেটে চোখ রেখে ব্যয় করেন ৯৭ মিনিট।

আর বিশ্বে সামনের সারিতে থাকা সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশ পাঠকই আসেন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে।

ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো ডেস্কটপকে ছাড়িয়ে গেছে মোবাইল ফোন। পিউ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ২৫ সংবাদ সাইটের মধ্যে ১৯টির মোবাইল পাঠাকের সংখ্যা ডেস্কটপ পাঠাকের চেয়ে অন্তত ১০ শতাংশ বেশি। 

আর নিউজপেপার অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার তথ্য অনুযায়ী, সংবাদ পড়ার জন্য কেবল মোবাইল ফোনের ওপর নির্ভর করেন, এমন পাঠকের সংখ্যা এ বছরের মার্চে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বেড়েছে।

বাড়ছে ‘ডিজিটাল সার্কুলেশনও’

‘ডব্লিউএএন-আইএফআরএ’র প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে বিশ্বে ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন মানুষ মুদ্রিত সংবাদপত্র পড়েন। আর ডেস্কটপ কম্পিউটারে অনলাইন সংস্করণ পড়েন ৭৭ কোটি মানুষ। জরিপের তথ্যে দেখা গেছে, দুই ধরনের সংস্করণের পাঠকই পুরো বিশ্বে বাড়ছে।

২০১৪ সালে বিশ্বে মুদ্রিত সংবাদপত্রের বিক্রি বেড়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে ভারতসহ এশিয়ার সংবাদপত্রগুলো।

প্রাইসওয়াটারহাউকুপারসের (পিডব্লিউসি) তথ্য অনুযায়ী, পয়সা খরচ করে ইন্টারনেটে সংবাদপত্র পড়েন এমন পাঠকের সংখ্যা (পেইড ডিজিটাল সার্কুলেশন) গতবছর বেড়েছে ৫৬ শতাংশ, আর গত পাঁচ বছরে বেড়েছে ১৪২০ শতাংশ। 

এখনও বিশ্বে সংবাদপত্র ব্যবসার ৯৩ শতাংশ আয় হচ্ছে মুদ্রিত সংবাদপত্র থেকে। সেই সঙ্গে সংবাদপত্রগুলো এখন অনেক বেশি মাত্রায় দ্বিমাত্রিক বা বহুমাত্রিক বিজনেস মডেলের দিকে ঝুঁকছে।

প্রাইসওয়াটারহাউকুপারসের তথ্য অনুযায়ী, গতবছর ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের বাজার ৮ শতাংশ বেড়েছে, গত পাঁচ বছরে তা বেড়েছে ৫৩ শতাংশ হারে। তবে এখন পর্যন্ত ফেইসবুকের মতো সোশাল মিডিয়া এবং গুগলের মতো প্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানিগুলোই এর সুফল ভোগ করছে সবচেয়ে বেশি।

বিশ্বের বিজ্ঞাপন বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ এখনো টেলিভিশনের দখলে। আর ইন্টারনেট ২৪ শতাংশ, মুদ্রিত সংবাদপত্র ১৫ শতাংশ, বিভিন্ন মুদ্রিত সাময়িকী ৭ দশমিক ৩ শতাংশ এবং রেডিও ৭ শতাংশ বিজ্ঞাপন পায়।