তিনি বলেছেন, সরকারি নজরদারির উপর নির্ভর না করে ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে, নিজেদের মধ্যে একটি নজরদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
“বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অবস্থা ততোটা খারাপ নয়, যতোটা খারাপভাবে আমাদের চিত্রিত করা হয়। মূল সমস্যা হচ্ছে, আমরা সেলফ সেন্সর করি। আমরা নিজেরাই অনেক সময় অনেক কিছু করতে চাই না, কারণ আমাদের অনেক রকম সমস্যা আছে।
“গণমাধ্যমের মালিকানায় বড় ধরনের সমস্যা আছে। আমরা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কথা বলি, কিন্তু গণমাধ্যমের মালিকানায়ও দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে, গণমাধ্যমে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে।
শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রে দৃর্বৃত্তের মতো আচরণ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনীতিবিদরা যেমন দুর্বৃত্তের মতো আচরণ করেন অনেক ক্ষেত্রে, তেমনি গণমাধ্যমের মালিকানার ক্ষেত্রেও সে সমস্যাটা হয়েছে।
“যে কারণে মূলধারার গণমাধ্যম অনেক কাজ ঠিকভাবে করতে পারে না। সেখানেই ব্লগারদের ভূমিকাটা উঠে আসে, ব্লগাররা সেই জায়গাটা নিতে পারেন।”
‘নাগরিক সাংবাদিক হিসেবে ব্লগারদের নৈতিক দায়িত্ব’ বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কার্যত কোনো সেন্সরশিপ নেই।
“গণমাধ্যমে যেটা রয়েছে সেটা সেলফ সেন্সরশিপ। কেন আমরা সব কথা লিখতে পারি না সেটা আমাদের নিজেদের সমস্যা।”
মূলধারার গণমাধ্যমের সেলফ সেন্সরশিপের কারণে তৈরি হওয়া শূন্যস্থান ব্লগাররা পূরণ করতে পারেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ জন্য আপনাদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে।”
রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় অনেক ধরনের সমস্যা থেকে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পরিষ্কার করে একটি জিনিস বোঝা দরকার যে, দুটি বিষয় রয়েছে- যার একটি হলো সেলফ সেন্সরশিপ, আরেকটি সেলফ রেগুলেশন। আমরা যদি নিজেদের ঠিকমতো রেগুলেট না করি, কোনো ক্ষেত্রে রাশ টেনে না ধরি তাহলে কেউ না কেউ, না হলে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের অঙ্গগুলো তার কর্তৃত্বের থাবা আমাদের উপর বসাবে।”
ব্লগারদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্যান্য অধিকার নিয়ে ‘ব্লগারদের অধিকার’ শীর্ষক একটি পুস্তক প্রকাশ করেছে ‘আর্টিকেল ১৯’।
দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্লগারদের অধিকার সমুন্নত এবং সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্র ও নীতি নির্ধারকদের করণীয় সম্পর্কে দেশের ভেতর এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ব্লগারদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্য ও সুপারিশমালাই পুস্তকের বিষয়বস্তু।
বাংলাদেশে ব্লগারদের নিরাপত্তা সংকটের কথা উল্লেখ করে আর্টিকেল ১৯'র প্রধান তাহমিনা রহমান বলেন, “রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবেই নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে ব্লগারদের। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কোনো কারণে নিরাপত্তা যদি বিঘ্নিত হয়েই যায়, তাহলে তার বিচার করার দায়িত্বও রাষ্ট্রের।”
বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন জাতীয় সম্প্রচার আইনের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রহমান।
তিনি বলেন, তথ্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত তথ্য যারা পড়বেন, সেই জনগণের কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। ব্লগাররা কোনো ভুল তথ্য পরিবেশন করলে সেক্ষেত্রে তাকে কীভাবে জবাবদিহিতা করা হবে, সেই ক্ষেত্রটি ঠিক করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ব্লগার আরিফ নুর, নিশাত জাহান, নেপালে ইউনেস্কোর গণমাধ্যম ও যোগাযোগ সমন্বয়ক লক্ষণ দত্ত পান্ত ও আলোকচিত্রী শহীদুল আলম।
সেমিনারে ভিন্ন ভিন্ন অংশে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অনলাইন ক্ষেত্র, ব্লগারদের নিরাপত্তা, বাকস্বাধীনতা ও ব্লগারদের দায়দায়িত্ব বিষয়ে আলোচনা হয়।
সেমিনার ও মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন আর্টিকেল ১৯’র প্রধান তাহমিনা রহমান।