খবরের পেছনে ছুটে ঈদ পার

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্যান্য জরুরি সেবাখাতের সঙ্গে একদল গণমাধ্যমকর্মীরও ঈদ কেটে যায় খবরের সংগ্রহ আর প্রকাশের কাজে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অফিসের কাজের ব্যস্ততায় শেষ হয় তাদের ঈদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2017, 01:16 PM
Updated : 26 June 2017, 02:29 PM

সাধারণত এক ঈদে অফিসের ছুটি মেলে গণমাধ্যমের কর্মীদের।টেলিভিশন-রেডিও, অনলাইন কিংবা সংবাদপত্রের এই কর্মীদের অনেকে মানুষের তথ্যের চাহিদা মেটাতেই নিজেদের মধ্যে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করেন; কেউ কেউ আবার কাজের মধ্যেই খুঁজে পান আনন্দ।

টেলিভিশনে কাজ করার আগে ঈদে বাড়ি যাবেন না, সেটা ভাবতেই পারতেন না এনটিভির নিউজরুম এডিটর মোনাজ্জিল রিয়াদ; কিন্তু এখন কেবল এক ঈদে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পান তিনি।

মোনাজ্জিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদ বাড়িতেই করতাম সবসময়। প্রথম প্রথম ঈদে বাড়ি যাব না, সেটা মেনে নিতে অনেক কষ্ট হতো। এখন মানিয়ে নিয়েছি। কলিগ আর বন্ধু কিংবা সিনিয়রদের সঙ্গে মিলে ঈদ পার করে দিই।”

বিগত কয়েক বছর ধরে অধিকাংশ ঈদে অফিসের কাজে ঢাকায় থাকতে হয় দৈনিক সমকালের প্রতিবেদক এসএম মুন্না মিয়াকে; ঈদের পর ছুটি নিয়ে পরিবারের কাছে যান তিনি।

তিনি বলেন, ঈদ ছুটির পরদিন প্রকাশিত পত্রিকায় ঈদের সময়ে বিনোদনকেন্দ্র কিংবা ঈদে উৎসবমুখর পরিবেশ তুলে ধরার দায়িত্ব পড়ে তার উপর। কয়েক বছর ধরে করেও আসছেন তিনি।

“অফিসের কাজ করছি সারাদিন। অনলাইন সংস্করণে খবরও পাঠিয়েছি। বিকালে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বের হব। অফিস আর পরিবারের সঙ্গে আলাদাভাবে সময় কেটে যায়।”

পত্রিকার জন্য কেবল কয়েকজন রিপোর্টার মাঠে থাকলেও অনলাইন সংস্করণের জন্য তাদের সঙ্গে সহ-সম্পাদকদেরও অফিসে সময় দিতে হয় বলে জানান তিনি।

মুন্না মিয়ার মতো প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কমল জোহা খান জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতের খবর সংগ্রহ আর অফিস সহকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে দিন পার করে দেন; বিকালে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিকল্পনা আছে তার।

“সকাল বেলা থেকে এখনো পরিবারের সান্নিধ্য পাইনি। ছেলেরা এক জায়গায়, আমি অন্য জায়গায়। ঈদের প্রধান জামাত কভার করার পর অফিসে খাওয়া-দাওয়া করেছি, ছবি তুলেছি। বিকেলে পরিবারকে সময় দিব,” বলেন জোহা।

ঈদের সকালে জাতীয় ঈদগাহের বাইরে কর্মব্যস্ত দুই সংবাদকর্মী

ঈদের সময় অফিসের কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে নেওয়ার কথা জানান চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নিজস্ব প্রতিবেদক শামীমা সুলতানা।

বিগত কয়েকবছর কেবল এক ঈদে ছুটি পাওয়ার অভ্যস্ততায় অফিসের কাজের সঙ্গে পরিবারকে সময় দেওয়ার বিষয়টি মিলিয়ে নেন তিনি।

“যেমন, আজকে সকাল থেকে ঈদের দিনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি জানিয়েছি দর্শকদের। এরপর বিকালে পরিবারের সঙ্গে সময় দিব। এতে কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাই আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা।”

তার প্রায় ৪০ শতাংশ সহকর্মী এক ঈদে ছুটির পান না বলে জানান শামীমা।

প্রতিবছর এক ঈদে ছুটি কাটালেও ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ অফিসে সহকর্মীদের নিয়ে আনন্দঘন সময় পার করার কথা জানান নিউজ টোয়েন্টিফোরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রামিম হাসান ও যমুনা টেলিভিশনের নিজস্ব প্রতিবেদক মনিরুল ইসলাম।

রামিম বলেন, “অফিসের কাজে আমাদের থাকতে হয়। কিন্তু ভিন্নভাবে উপভোগের সময় থাকে এই সময়ে। হয়তো বাড়ির পরিবেশ পাই না, কিন্তু অফিস কলিগদের সঙ্গে কিংবা কাজের মধ্যে সেই আনন্দ ভাগ করে নেওয়া যায়।”

সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলে কাজের স্বার্থেই কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কর্মীকে কেবল এক ঈদে ছুটি দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

মনির বলেন, “মানুষের উৎসবের সঙ্গে আমরা থাকি, খারাপ সময়ের সঙ্গেও আমাদের থাকতে হয়। মানুষের তথ্যের চাহিদা মেটানোর স্বার্থে এক ঈদ উৎসর্গ করা। তবে ঈদের সময় উপভোগের ব্যবস্থা আমরা নিজেদের মতো করে নিই।

“কারণ অফিস আমাদের রিয়েল ফ্যামিলি না হলেও সেকেন্ড হোম তো অবশ্যই।”

প্রতিবার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ঈদ করলেও এবার অফিসের কাজে ঢাকায় ঈদ করছেন অনলাইন পত্রিকা ঢাকা টাইমসের প্রতিবেদক তানিম আহমেদ।

সোমবার সকালে জাতীয় ঈদগাহে প্রধান ঈদ জামাতের সংবাদ সংগ্রহের সময় তিনি বলেন, “অফিস ভাগাভাগি করে ছুটি দিয়েছে। বাড়ি যাওয়া হয়নি। কাজের মধ্যে থেকে ঈদ পার করছি।”