প্রাথমিকভাবে সাত জেলার ১০৫ জন শিশু প্রিজমের জন্য তৈরি করছে ভিডিও কনটেন্ট। ইউনিসেফের সহায়তায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের উদ্যোগে গত ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর থেকে এসব ভিডিও সংবাদ, প্যাকেজড প্রতিবেদন, বি-রোলস ও সংবাদ প্রতিবেদন পাঠক-দর্শকের কাছে পৌঁছাচ্ছে প্রিজমের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
এসব ভিডিও কনটেন্ট দেখানোর জন্য মঙ্গলবার প্রিজমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে একাত্তর টিভি, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, চ্যানেল২৪, দেশ টিভি, নিউজ২৪ ও যমুনা টিভি।
আরও পাঁচটি টেলিভিশন প্রিজমের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বলে আয়োজকদের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন।
সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর শীর্ষ ব্যক্তিরা বলছেন, প্রিজমের এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে শিশুরা যেমন নিজেদের তৈরি করে এগিয়ে নিতে পারবে, তেমনি তাদের অধিকার আদায়ের পথও সুগম হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে থাকা শিশুদের তৈরি ভিডিও সংবাদ এখন প্রিজমের মাধ্যমে দেশের প্রধান টেলিভিশনগুলোতেও দেখানো হবে।
এ কারণে এ অনুষ্ঠানকে দেশের গণমাধ্যমে শিশুদের ‘নতুন ইতিহাস সৃষ্টির যাত্রা’ অভিহিত করেন বেগবেদার।
তিনি বলেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে মিলে ইউনিসেফ শিশুদের জন্য একটি ‘জায়গা’ তৈরি করছে, যেখানে তারা তাদের ভাবনাগুলো তুলে ধরতে পারবে, ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের প্রত্যাশার কথা জানাতে পারবে এবং যেসব বিষয় শিশুদের জীবনে প্রভাব রাখে সেসব বিষয়ে নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের মতামত তুলে ধরার সুযোগ পাবে।
“আমরা আশাবাদী, এই অনন্য উদ্যোগের মধ্য দিয়ে আমরা তাদের দেখব, যাদের কেউ দেখে রাখেনি; তাদের কথা শুনব, যাদের কথা না শোনাই থেকে গেছে। শিশুদের জন্য একটি সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব হবে, যাতে তারা শিশুদের নিয়ে সংবাদে ভূমিকা রাখতে পারে; বাংলাদেশে শিশু অধিকার সমুন্নত রাখার প্রক্রিয়ায় আরও গতি আনতে পারে।”
এ উদ্যোগের অংশীদার হওয়ায় দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিভিশন স্টেশনগুলোকে ধন্যবাদ জানান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
তিনি বলেন, “এই শিশুদের নিয়ে আমরা গর্বিত, যারা এ উদ্যোগের প্রাণ। তাদের হাত দিয়ে যেসব কাজ আমরা পাচ্ছি, অনেক ক্ষেত্রে তা মূলধারার টিভি পেশাদারদেরও লজ্জায় ফেলে দেবে।”
শিশুদের জন্য বিশেষায়িত ওয়েবসাইট হ্যালোর সাফল্যের পর শিশুদের জন্য ভিডিও সংবাদ সেবা ‘প্রিজম’ নিয়ে আসার প্রেক্ষাপট অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
তিনি বলেন, “অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখেছি, অনেক সময় অনেক বিষয় শিশুদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখাও গুরুত্বপূর্ণ।”
‘কর্মনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের’ ছাপ রেখে হ্যালোর শিশু সাংবাদিকরা ‘বেশ কিছু চমৎকার কাজ’ করেছে জানিয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, অনেক দিন ধরে চলে আসা ‘অনেক বাজে রেওয়াজ বন্ধ হয়েছে’ এই শিশুদের করা প্রতিবেদনের কারণে।
“যেমন গ্রামের স্কুলের মাঠ দখলমুক্ত হয়েছে, অনুপস্থিতির জন্য একটি স্কুলে বড় অংকের জরিমানা করা বন্ধ হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ হয়েছে ক্লাসরুমের শারীরিক শাস্তি।
“আসলে অনেক দিক দিয়ে শিশুরা আমাদের চেয়েও ভালো। তারা এতো আন্তরিকতা দিয়ে কাজটি করে, যা প্রায়ই বড়দের কাছ থেকে পাওয়া যায় না।”
প্রিজমের সঙ্গে যুক্ত হওয়া টেলিভিশন স্টেশনগুলোর প্রতিনিধিদের পক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু।
তিনি বলেন, “আমরা শিশুদের জন্য এ ধরনের কাজে সব সময় সহযোগিতা করতে চাই, সব সময় করে যাব। তাদের ভাবনার কথা, তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরে শিশু অধিকার সুনিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।”
তার বক্তব্যের সমর্থনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক ওয়েবসাইটগুলোতেও একই ধরনের ‘স্পেস’ দেওয়ার কথা বলেন।
প্রিজমের মতো ‘ভালো উদ্যোগ’ এগিয়ে নিতে সংবাদ মাধ্যমগুলো কীভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে- সে বিষয়েও কথা বলেন একাত্তর টেলিভিশনের মোজাম্মেল বাবু।
দুটি টেলিভিশনে কাজ করার সময় শিশুদের নিয়ে এ ধরনের আয়োজনে যুক্ত থাকার কথা জানিয়ে এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন দুটি ঘটনা তুলে ধরেন, যেখানে শিশুদের কাজ বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক প্রশংসা এনে দিয়েছে।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার পর এ উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেন অন্যরাও। দেশ টিভির সম্পাদক সুকান্ত গুপ্ত অলক বলেন, “শিশুদের চোখে আমরা দেশকে দেখব।”
তিনি বলেন, শিশুরা সাংবাদিকতা করবে ‘তাদের মতো করে’। তাদের মতো করে তারা নিজেদের সমস্যার কথা, অধিকারের কথা তুলে ধরবে।
“শিশুদের তুলে আনা প্রতিবেদনে সমাজে প্রভাব পড়বে; কর্তা ব্যক্তিদের নজর কাড়বে। এ কাজে নতুন করে অনুরণন হবে।”
শিশুদের জন্য সংবাদে তাদের অধিকারের কথা, সমস্যার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি শিশু সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন নিউজ২৪ এর কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর সামিয়া রহমান।
টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সঙ্গে প্রিজমের যোগাযোগের মধ্য দিয়ে শিশু সাংবাদিকতার অভিযাত্রা ‘আরও একধাপ এগিয়ে গেল’ বলে মন্তব্য করেন যমুনা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম।
আর শিশুদের কথা সবার কাছে পৌঁছানোর সুযোগও এর মধ্য দিয়ে অনেক সম্প্রসারিত হলো বলে মনে করে হ্যালোর শিশু সাংবাদিক সাদিক ইভান।
অনুষ্ঠানের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সে বলে, “মূল ধারার গণমাধ্যমে শিশুদের বিষয়ে সব খবর সেভাবে আসে না। আমাদের রিপোর্ট, প্রিজমের রিপোর্ট টেলিভিশনে সম্প্রচার হলে শিশুদের বিষয়গুলো সবার সামনে আনা আরও সহজ হবে।”