নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে মিলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রকাশিত বার্ষিক এই সাময়িকীকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অভিহিত করেছেন বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ইতিহাসে একটি ‘বিরাট ঘটনা’ হিসেবে।
“অত্যন্ত মোড় বদলকারী ঘটনার সাক্ষী হতে আজকে এখানে এসেছি। আমি মনে করি, এটা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য বিরল সম্মানজনক একটি অবস্থান যে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো পত্রিকা একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
মঙ্গলবার ঢাকার মহাখালীতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত এই প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। অবশ্য পত্রিকার স্ট্যান্ড আর বইয়ের স্টলে ‘টার্নিং পয়েন্টস’ পাওয়া যাচ্ছে এ মাসের শুরু থেকেই।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে পড়া যাচ্ছে এর ডিজিটাল সংস্করণ। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এই লাইসেন্সড ম্যাগাজিনের বাংলাদেশ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে ভার্চুয়াল ম্যাগাজিন ফরম্যাটেও। দুই পক্ষের লেখা নিয়েই বার্ষিক এ আয়োজন সাজানো হয়েছে।
এক সময়ের সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও সাবেক সাংসদ সারাহ বেগম কবরী ও সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ বেবীও এসেছিলেন এ অনুষ্ঠানে।
টার্নিং পয়েন্টসের এ সংখ্যার লেখকদের মধ্যে ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং প্রচারাভিযানের বাংলাদেশ সমন্বয়ক খুশি কবির; উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট সেলিমা আহমাদ; বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কন্ট্রিবিউটিং এডিটর আফসান চৌধুরী ও বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এই ম্যাগাজিনে এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত সাত বছরে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন; বলেছেন, ২০১৬ সালে আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে সব চাকা সঠিকভাবেই ঘুরছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে পুনর্মুদ্রিত একটি নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গ্রেপ্তার হয়ে ১১ মাস বিশেষ কারাগারে অন্তরীণ থাকার দিনগুলোর কথা স্মরণ করেছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ আলোকপাত করেছেন বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট ও উন্নয়নের সম্ভাবনার ওপর।
বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় অধিকার কর্মী খুশি কবির জলবায়ু পরিবর্তন আর পরিবেশের বাস্তবতা নিয়ে তার লেখায় তুলে এনেছেন জরুরি কিছু প্রশ্ন।
অসলো বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড জয়ী সেলিমা আহমাদ লিখেছেন বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের মডেল নিয়ে, যা এ দেশের পুরুষপ্রধান সামাজিক ব্যবস্থায় একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর যোগাযোগ ও বাণিজ্য সম্ভাবনার দিকগুলো সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক পর্যালোচনা করেছেন ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের বর্তমান উচ্চতা থেকে।
কামাল কাদির লিখেছেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সাফল্য ও সম্ভাবনা নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক সাহিত্য সমালোচক ও কবি কায়সার হক উঁকি দিয়েছেন বাংলাদেশের সাহিত্যের ইতিহাসে।
১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে নিরন্তর রাজনৈতিক সংঘাতে ক্ষত বিক্ষত হতে হতে এগিয়ে চলা এই জাতি নিজেদের ইতিহাসকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি দেশে গোঁড়ামি কীভাবে খুঁটি গেড়েছে, আর ধর্মীয় উগ্রবাদীরা কী করে মূল ধারার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে- সেসব প্রশ্ন এসেছে কয়েকটি নিবন্ধে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট আর মানব অস্তিত্ব নিয়ে বিজ্ঞান ভাবনা এবং ফুটবলকে ছাপিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে ক্রিকেটের জনপ্রিয় হয়ে ওঠার গল্পও তুলে এনেছে টার্নিং পয়েন্টস।
“এই দায়বদ্ধতাকে মাথায় রেখে নিজের বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত হয়ে নৈতিকতার বিষয়টা মাথায় রেখে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সরবরাহ করা একটা চ্যালেঞ্জ। এবং সেই চ্যালেঞ্জটাই ১০ বছর ধরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম পালন করছে। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
গণতান্ত্রিক পরিবেশের বিকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের কথাও এসেছে জাসদ সভাপতি ইনুর কথায়।
“বাংলাদেশে আমার জানা মতে, দেখা মতে বিকাশমান গণমাধ্যম, প্রসারমান গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে অনেকটা হাত ধরাধরি করে পাশাপাশি অবস্থান নিয়ে অতীতের জঞ্জালের বিরুদ্ধে একটা শক্ত অবস্থান নিচ্ছে। এটা একটা ভাল খবর এবং সুখবর।”
প্রদায়কদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দিতে এসে খুশি কবির টার্নিং পয়েন্টসের নিবন্ধগুলোর বিষয় বৈচিত্র্য তুলে ধরে বলেন, আজকের বাংলাদেশের একটি চিত্রই এসব লেখার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে।
টার্নিং পয়েন্টসকে তিনি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের প্রেক্ষাপটে একটি সত্যিকারের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ অভিহিত করেন।
“কোনো বাঁধা ছক নেই, সেন্সরশিপ নেই; অত্যন্ত সুসম্পাদিত। সত্যি চমৎকার একটি জার্নাল।”
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ এবং মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির পক্ষে দাঁড়ানো বিদেশি বন্ধু ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কলাম লেখক জুলিয়ান ফ্রান্সিসও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, “বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে যোগান দেওয়া লেখাগুলোতে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ২০১৫ সালের ঘটনাপ্রবাহ মূল্যায়নের পাশাপাশি ২০১৬ সালের সম্ভাবনার দিকে আলো ফেলার চেষ্টা হয়েছে।”
লেখার বৈচিত্র্য আর প্রাসঙ্গিক ছবির কারণে টার্নিং পয়েন্টস সংগ্রাহকদের আগ্রহের ম্যাগাজিনে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রকাশক।
বিশ্বের ২৪টি দেশে ১২টি ভাষায় টার্নিং পয়েন্টস প্রকাশিত হয় প্রতিবছর। এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশেই প্রথম একসঙ্গে মুদ্রিত ও ডিজিটাল ফরম্যাটে এই ম্যাগাজিন প্রকাশের অনুমতি দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি দেশের সবার সেরা, সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও সবচেয়ে বেশি আস্থাভাজন সংবাদ মাধ্যমকেই অংশীদার হিসেবে বেছে নেয়।
“তারা বাংলাদেশে আমাদের সঙ্গে আসায় আমরা অনন্দিত।”
নয় বছর আগে পাঠকদের জন্য দেশ-বিদেশের সর্বশেষ ঘটনার খবর ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ নিয়ে আসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম নিয়মিত নতুন নতুন সংবাদ সেবা উপহার দিচ্ছে।
দশ কোটি পেইজ ভিউ এবং ৭৫ লাখ ইউনিক ভিজিটর নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম পাঠকের কাছে বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সংবাদ প্রকাশক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।