‘বাঘ রক্ষায় তৎপর হওয়া চাই এখনই’

ধারণার চেয়ে কয়েক গুণ কম বাঘ সুন্দরবনে থাকার তথ্য জানার পর বিপন্ন এই প্রজাতি রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারকে এখনি পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন একজন প্রাণীবিজ্ঞানী।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2015, 06:21 PM
Updated : 28 July 2015, 02:51 AM

পায়ের ছাপ পর্যবেক্ষণ করে (পাগ মার্ক পদ্ধতি) এতদিন বলা হচ্ছিল, সুন্দরবনে সাড়ে চারশ’র মতো রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে।

কিন্তু ক্যামেরা পদ্ধতিতে বাঘ শুমারির পর দেখা যায়, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা একশ’র মতো। ২০১৩ সাল থেকে ক্যামেরা পদ্ধতিতে বাঘ শুমারির কাজ শুরু হয়ে গত এপ্রিলে তা শেষ হয়।

২৯ জুলাই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবসের ঠিক আগে এই তথ্য প্রকাশ পেল।

বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অঞ্চলের বন সংরক্ষক তপন কুমার দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “ক্যাপচার ক্যামেরা পদ্ধতিতে সুন্দরবনের বাংলাদেশ-ভারতে ৮৩ থেকে ১৩০টি বাঘের সন্ধান পাওয়া গেছে; এটার গড় হিসেবে বাংলাদেশ অংশে প্রকৃত বাঘের সংখ্যা ১০৬টি হতে পারে।”

“সনাতন পদ্ধতিতে পায়ের ছাপ দিয়ে বাঘ শুমারির চেয়ে এবার চার ভাগের একভাগে নেমে এল বাঘের সংখ্যা। এরপরও বৈজ্ঞানিক পন্থা হওয়ায় ক্যামেরা পদ্ধতির সংখ্যাই সঠিক,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের ফল প্রকাশ করা হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো মেথডই চূড়ান্ত বা সঠিক বলাটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

“বন বিভাগ আগে ৪৪০টি বলেছে, এখন ১০৬টি বলছে; সরকারিভাবে যা বলা হবে, তা আমাদের মানতে হবে। তবে বাঘ যে কমে যাচ্ছে এটাই সত্যি। চোরকারবারি আর খাবার সংকটে বাঘ কমছে।”

বাঘের সংখ্যা নিয়ে ‘আত্মতৃপ্তিতে’ না থেকে এখনই বাঘ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্টের এ প্রধান নির্বাহী।

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, “কমে যাওয়ার এ ট্রেন্ডে সবাইকে নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে বাঘ রক্ষায়। এ প্রাণীটির অবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে) রয়েছে বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে।”

বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ার বিদ্যমান প্রবণতার মধ্যে বিপন্ন এ প্রজাতিকে রক্ষায় এখনই সুন্দরবনে স্বাধীন ‘এন্টি পোচিং ইউনিট’ গঠনের দাবি জানান এই বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ।

পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সব ধরনের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে ‘স্বাধীন’ এই ইউনিট গঠনের সুপারিশ করেন তিনি।

অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, “বাঘ বাঁচলেই সুন্দরবন বাঁচবে।”

২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও ভারতের বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় পায়ের ছাপের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত জরিপে ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবনে ৪৪০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার গণনা করা হয়। এর মধ্যে ১২১টি পুরুষ, ২৯৮টি বাঘিনী এবং ২১টি শিশু বাঘ।

২০০৬ সালে ক্যামেরা ট্র্যাপিং ও আপেক্ষিক সংখ্যা পদ্ধতি অনুসরণ করে সুন্দরবনে এক শুমারিতে ২০০ বাঘ পাওয়া যায়।

অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, “কমে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ভাবতে হবে এরপর কী হবে! বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, খাবার কমে যাচ্ছে, চোরাগুপ্তা- এসবই বড় হুমকি বাঘের জন্য।”