ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণীরা তাদের মনের মতো পোশাক বানাতে ছুটে যান দর্জির দোকানে। আর তাই ঈদের পোশাক তৈরিতে দর্জিপাড়া এখন মহাব্যস্ত। বিরতিহীন সেলাই মেশিনের যান্ত্রিক শব্দ বলছে, দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। আর এই ব্যস্ততা চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত।
ঈদের সময়েতে নামকরা টেইলরশপগুলোতে দর্জিরা চরম ব্যস্ত সময় পার করেন। সাধারণত ১৫ থেকে ২০ রমজানের মধ্যে অর্ডার নিয়ে থাকেন। তারপরই টাঙিয়ে দেওয়া হয় নো এন্ট্রি। এরই মধ্যে অনেকেই টেইলার্সের দোকানগুলোতে ভিড় জমিয়েছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাদিয়া আক্তার শিমু বলেন, “আমার পোশাকগুলোতে সব সময় ভিন্নতার ছোঁয়া দিতে চাই। টেইলরশপগুলোতে নিজস্ব ধাঁচের পোশাকে সহজেই বানিয়ে নিতে পারি।”
‘দর্জিপাড়া’ খ্যাত রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর রমনা ভবন, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, গাউসিয়া, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও মিরপুরের বিভিন্ন টেইলার্সে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কাপড় তৈরি কারিগরদের এখন দম ফেলার সময় নেই। কাপড় সেলাইয়ের মেশিনের শব্দ একটানা একঘেয়ে, নাকি ছন্দময় তা চিন্তারও সুযোগ নেই তাদের।
বাংলাদেশ ড্রেস মেকার অ্যাসোসিয়েশনের সূত্র মতে, রাজধানীসহ সারা দেশে তালিকাভুক্ত লক্ষাধিক টেইলার্স রয়েছে। তবে মান ভালো টেইলার্সের সংখ্যা হবে হাজারের মতো। বাকি ৭৫ হাজার অতি সাধারণ মানের এবং ছোট পরিসরের।
তবে মুক্তা অভিযোগ করে জানান, তাদের কাছ থেকে বেশি মজুরি নেওয়া হচ্ছে। সুতির থ্রিপিসের জন্য নেওয়া হচ্ছে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। সিল্ক, জর্জেট, কাতান ও বেনারসি কাপড়ের মজুরি এ বছর অনেক বেশি। এসব কাপড়ের এক সেট থ্রিপিস বানাতে মজুরি লাগছে ৬শ’ থেকে ১ হাজার টাকা।
ঈদ উপলক্ষ্যে টেইলার্স মাস্টার ও সেলাই কারিগরদেরও সময় কাটছে রাজধানীতে ব্যাপক ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে। মৌচাক মার্কেটে অঙ্গশ্রী টেইলার্স, রোজিয়া লেডিস টেইলার্স ও সিটি কলেজ সংলগ্ন সিটি টেইলার্সসহ মহানগরীর বিভিন্ন টেইলার্সে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা যায়।
গত শবে বরাত থেকে শুরু হয়েছে, কাপড় কাটিং ও সেলাইয়ের কাজ। চলবে চাঁদ রাত পর্যন্ত। ঈদ সামনে রেখে দিনরাত ১৬ ঘণ্টা পরিশ্রম করছেন এখন তারা। তবে এবার ঈদ উপলক্ষে লং কামিজ, জিপসি, কোণা কাটা, আনার কলি, বাইশ কলি ডিজাইন নামে জামার কাপড়ের চাহিদা বেশি।
তিনি আরও বলেন, “রোজিয়া লেডিস টেইলার্সে ঈদ উপলক্ষ্যে জামা সেট প্রতি সেলাই মূল্য ডাবল করা হয়।”
“গত ঈদের চেয়ে এবারে ঈদে কাজের চাপ বেশি। রোজা শুরুর সাতদিন আগে থেকে কাজ শুরু হয়েছে এবং চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। তিনি আরও জানান, সালোয়ার কামিজ, লং কামিজ, জিপসি. কোণা কাটা ও চুরিদার পায়জামার চাহিদা এবার বেশি”, বললেন ফয়সাল।
এই দোকানের কর্ণধার তৈয়বুর রহমান বলেন, “এবার ঈদ উপলক্ষ্যে কাপড় কাটিং ও সেলাই মজুরি সাড়ে ৩শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৭শ’ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।”
উত্তরা আজমপুর লাম টেইলার্সের কর্ণধার লিটন আলী বলেন, “এবারে ঈদে সালোয়ার কামিজের চাহিদা বেশি। আমার প্রতিষ্ঠানে পাঁচজন সেলাই কারিগর রয়েছে। তারা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত কাজ করছে। দেড়শ থেকে আড়াইশ টাকা পর্যন্ত সেলাইয়ের মজুরি নেওয়া হচ্ছে।”
সেলাইয়ের খরচ
তিনি জানান, সেলাইয়ের ধরন ও নকশার ভিন্নতার জন্য মজুরি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। লং কামিজ বানাতে খরচ পড়বে সাড়ে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা। ডাবল কামিজ, সালোয়ারসহ সাড়ে ৬শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা। আনারকলি বানাতে খরচ পড়বে ৮শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা। ফ্রক কাটের সালোয়ার-কামিজে খরচ ৮শ’ থেকে ১ হাজার ৪শ’ টাকা। সুতি কাপড়ের সালোয়ার-কামিজের খরচ নকশাভেদে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। ব্লাউজ ডিজাইনভেদে ৩শ’ থেকে ৬শ’ টাকা।
লেইস ও ইয়োক
পছন্দের পোশাকে বৈচিত্র্য দেওয়ার ক্ষেত্রে লেইসের জুড়ি মেলা ভার। বৈচিত্র্যময় এসব লেইস বর্তমানে পোশাকের ফ্যাশনে অন্যতম অনুষঙ্গ। এক টুকরা লেইস ব্যবহারে পোশাক হয়ে উঠবে আরও বেশি আকর্ষণীয়।
বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইন ও নকশার লেইস। সাদামাটা লেইসের তুলনায় এখন পাথরের লেইসের চাহিদা বেশি বলে জানালেন চাঁদনী চক মার্কেটের লেইস ব্যবসায়ী আবদুল জলিল।
মুক্তা ও বিভিন্ন রং-বেরঙের পাথরের ব্যবহারে লেইসগুলো হয়ে উঠেছে নান্দনিক। লেইসের দরদাম নকশা আর কোয়ালিটির ওপর নির্ভর করে। পাথরের চওড়া লেইস গজপ্রতি আড়াইশ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা। ইয়োকের ওপর পাথরের কাজ করা লেইস পওয়া যায় সাড়ে ৪শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। এমব্রয়ডারি করা ইয়োক ১২০ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা। নেট লেইস ৫০ থেকে ৮০ টাকা। কাতানের লেইস ৩৫ থেকে ১২০ টাকা। বাহারি রংয়ের আকর্ষণীয় এসব লেইস চাঁদনী চক, গাউছিয়াসহ প্রায় সব থান কাপড়ের মার্কেটেই পাওয়া যাবে।
ছেলেদের পোশাক
“ঈদ হবে পাঞ্জাবি ছাড়া সে তো ভাবাই মুশকিল।” বলছিলেন কমলাপুরের সোহেল টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিকসের কর্ণধার মো. নুররুল ইসলাম মজুমদার।
ছেলেদের পাঞ্জাবি বানাতে খরচ পড়বে সাড়ে ৪শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। পায়জামার জন্য দিতে হবে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা। শার্ট বানাতে খরচ হবে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা। প্যান্ট সাড়ে ৪শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। কমপ্লিট স্যুট ৪ হাজার ৫শ’ থেকে ৭ হাজার টাকা। আর শুধু স্যুট বানাতে মজুরি লাগবে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫শ’ টাকা।
সেলাইঘরের খোঁজ খবর
রাজধানীর নিউমার্কেট, মৌচাক মার্কেট, চাঁদনী চক, ফরচুন মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেটে রয়েছে মেয়েদের বেশিরভাগ দর্জির দোকান। এছাড়া বসুন্ধরা সিটি, গুলশান, পিংক সিটি, ইউনিকর্ন প্লাজা, মিরপুর শাহ আলী, উত্তরা রাজউক কমার্শিয়াল মার্কেট, আমিন কমপ্লেক্স, রাজলক্ষি কমপ্লেক্স প্রভৃতি স্থানে মেয়েদের দর্জিঘর রয়েছে।
ইচ্ছা করলে বাড়ির কাছের লেডিস টেইলার্স থেকেও বানিয়ে নিতে পারেন পছন্দসই পোশাক। ছেলেদের জন্য সোহেল টেইলার্স, বেলমন্ট, স্টার টেইলার্স, ফ্রেন্ডস টেইলার্স, সিটি এলিগেন্স, দ্য রেমন্ড শপ, আইকন টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিক, সানমুন, টপটেন, ফেরদৌস, ডায়মন্ড প্রভৃতি টেইলার্স থেকে বানিয়ে নিতে পারেন আপনার চাহিদামতো ঈদ পোশাক।