ঈদবাজারে ‘কিরণমালা’

প্রতিবারের মতো রাজধানীতে ভারতীয় টিভি সিরিয়ালে জনপ্রিয় চরিত্রের নামে পোশাক বিক্রি হচ্ছে। দামের কারণে মধ্যবিত্ত ক্রেতারা নাকানিচুবানি খাচ্ছেন।

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2015, 12:01 PM
Updated : 29 June 2015, 12:45 PM

ঈদ মানেই নতুন পোশাক, জুতা, অলঙ্কার। আপামস্তক প্রতিটি জিনিস চাই আনকোরা।

বৃষ্টি, মেঘ আর রাস্তায় জমে থাকা পানি উপেক্ষা করেই ঈদ বাজারে যাওয়া। গোদের উপর বিষফোড়ের মতো রাস্তার যানজটও কমাতে পারেনি ঈদবাজারের ভিড়। বিভিন্ন বয়সি ত্রেতাদের চাপে মার্কেটগুলোতে ধাক্কা লাগা ছাড়া হাঁটাই দুষ্কর।

প্রতিবারের মতো এবারও মার্কেটগুলোতে বলিউড আর ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের অভিনেত্রীদের নামের ট্যাগ ঝোলানো পোশাকের প্রাধান্য রয়েছে। ক্রেতাদের নজরও তাদের পছন্দের অভিনেত্রীর নাম ঝোলানো পোশাকগুলোর দিকেই।

রাজধানীর গাউছিয়া, নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায় চারদিকে কেবল কিরণমালা রব! কিরণমালা নামের পোশাকগুলোর চাহিদাই এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি।

প্রতিটা দোকানে ঢুকলেই ক্রেতাদের মুখে প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে, কিরণমালার দাম কত, বাচ্চাদের কিরণমালা আছে? ইত্যাদি। এছাড়াও সারারা, মৎস্যকুমারী, ফ্লোর টাচ ও রাজকুমারী পোশাকের চাহিদাও চোখে পড়ার মতো।

গাউছিয়ার নামিরা ফ্যাশনের বিক্রেতা মো. পার্ভেজ বলেন, “কিরণমালা হল কোটিসহ নকশা করা পোশাক। এবারের ঈদে এর চাহিদাই বেশি। দাম সাড়ে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।”

অঞ্জন্স নামের দোকানের বিক্রেতা সামেরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিরণমালার পাশাপাশি সারারা, মৎস্যকুমারী, স্টোনের কাজ করা ফ্লোর টাচ ও সুতির গোল ফ্রকের পোশাকেরও চাহিদা রয়েছে।

স্টোনের কাজ করা ফ্লোর টাচ পোশাকগুলোর দাম ২ হাজার ২শ’ থেকে ১২ হাজার টাকা এবং কিরণমালা, মৎস্যকুমারী পোশাকের দাম ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা।

লামাইয়া কালেকশনের বিক্রেতা আসিফ জানান, বনলতা ও স্কিন কামিজ— এদুটি পোশাকও রয়েছে ক্রেতাদের এবারের পছন্দ তালিকায়। যারা ফ্রক বা ভারি কাজ করা খুব একটা পছন্দ করেন না তাদের জন্য সুতির এই কামিজগুলো বেশ ভালো। বনলতার দাম ২ হাজার টাকা এবং স্কিন কামিজের দাম ১ হাজার ২শ’ ৫০ টাকা।

এই দোকানে কথায় হয় ক্রেতা সুফিয়া আফরোজের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “আমার জমকালো পোশাক খুব একটা ভালো লাগে না। তবে এবার স্টোন আর চুমকির কালেকশন বেশি। তাই নিজের মন মতো পোশাক পেতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। এখানের কয়েকটা কামিজ পছন্দ হয়েছে দামে বনলে কিনব।”

সাহিদা ফ্যাশনে কেবল মাত্র স্টোনের কালেকশন রয়েছে, জানালেন বিক্রেতা মো. মনির।

“দোকানে স্টোনের কাজ করা ফোর পিসের দাম শুরু ৮ হাজার টাকা থেকে। পোশাকগুলোর চাহিদাও অনেক। এর পাশাপাশি পাওয়া যাবে ফ্লোর টাচ নামের পোশাকগুলো। দাম ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।” বললেন তিনি।

নিউ মনিয়া দোকানের বিক্রেতা বিপ্লব বলেন, “হিন্দি সিরিয়ালের নামে পোশাক না করলে বিক্রি বাড়ে না।”

তিনি আরও বলেন, “কিরণমালা নামের পোশাকগুলোর দাম ৩ থেকে ৭ হাজার টাকা, রাজকুমারী সাড়ে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা, মৎস্যকুমারী পোশাক সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা।”

এসব জমকালো পোশাকের পাশাপাশি রয়েছে সুতি ও হালকা কাজের নানারকম থ্রি পিস। এর মধ্যে সেমি-লং, লং কামিজ ইত্যাদি বিভিন্ন স্টাইলের পোশাকের পসরা রয়েছে গাউছিয়ার প্রায় সব দোকানে। এই পোশাকগুলোর দাম ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা।

সুতি থ্রি পিসের দাম ১ হাজার ৫শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকা।

বিপ্লব বলেন, “কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ব্লকবাটিকের পাশাপাশি লং কামিজের প্রতি বেশ আগ্রহ আছে। কেউ কেউ কিরণমালা বা মৎস্যকুমারীও চান।”

গাউছিয়া মার্কেটের একজন ক্রেতা ফাতেমা বলেন, “এবারের কাপড়ের দাম অন্যবারের তুলনায় বেশি। নিজে কী কিনবো তা এখনও ঠিক করিনি। তবে দুই মেয়ের জন্য কিরণমালা পোশাক কিনতেই আসছি।”

নিউ মার্কেটের ক্লথ মিউজিয়াম দোকানের বিক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেণ, “এবার ভারতীয় ক্যাটালগের জর্জেটের পোশাক বেশ জনপ্রিয়। এর মধ্যে বিনয়, ফিওনা, কাসিন এইগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি।”

এসব পোশাকের দাম পড়বে ২ হাজার ৫শ’ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। এছাড়াও এখানে পাওয়া যাবে কটন, ইন্ডিয়ান বুটিকের পোশাক, দাম ১ হাজার ৮শ’ ৫০ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।

যদিও বুটিক বলতে যা বোঝায় এখানে তা নয়। বরং একই পোশাকের বিভিন্ন ‘কপি’ বিভিন্ন দোকানেই রয়েছে।

জরি সুতার কাজ করা লন পাওয়া যাবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় এবং ইন্ডিয়ান বোম্বে কটনের গজ পাওয়া যাচ্ছে প্রতি গজ ৬শ’ টাকায়।

ঘের দেওয়া কামিজের দাম ৩ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। ব্লকবাটিক লং থ্রি পিস ২ থেকে ৭ হাজার টাকা। কটনের থ্রি পিস ১ হাজার ৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা।

রয়েছে বাচ্চাদের লেহেঙ্গা, দাম ২ থেকে ৭ হাজার টাকা। লং ফ্রক ও ডিভাইডারের দাম ২ থেকে ৮ হাজার টাকা জানালেন, সাইয়ান ফেব্রিক্সের বিক্রেতা লাভলু।

কোয়ালিটি ফ্যাশন’য়ের বিক্রেতা মো. জসীম বলেন, “নিউমার্কেটে ঈদ বাজারে কিরণমালা পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও সোনাক্ষি, অপ্সরা, জি-নাইন’য়ের চাহিদাও অনেক।”

তার দোকানে কিরণমালা পোশাকের দাম ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।

কিরণমালা পোশাকের বিশেষত্ব জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পোশাকের আসলে নাম হয় না। সিরিয়ালে কিরণমালা কোটি পরে বলে কটিওয়ালা ফোর পিসের নাম দেওয়া হয়েছে কিরণমালা। ক্রেতারা এসে জিজ্ঞেস করে কিরণমালা আছে? তখন আমরা মন মতো নাম বলে দেই। নেটের ড্রেসের উপর পাথরের কাজ করা কোটি দেওয়া পোশাকই কিরণমালা নামে বেশি পরিচিতি পেয়েছে। তাছাড়া চরিত্রের জনপ্রিয়তাও এইসব নাম নির্ধারণের পেছনে একটি বড় কারণ। যে বছর যে চরিত্র যত বেশি জনপ্রিয়, ওই বছর ওই নানে পোশাক বেশি বিক্রি হয়।”

আবুল হোসেন নামের একজন ক্রেতা বলেন, “গতবার পাখি আর এইবার কিরণমালা বলে বাচ্চারা মাথা খারাপ করে ফেলছে। আর বাজারে সব কিছুরই আগুন দাম। তাই অনেক দামাদামি করে পোশাক কিনতে হচ্ছে।”

বাচ্চাদের স্কার্ট, ডিভাইডার ও ফ্রক পাওয়া যাবে ফ্যাশন টার্গেটে। দাম ১ হাজার ৪শ’ থেকে ৬ হাজার টাকা।

কিছুটা ভীড় এড়িয়ে কেনাকাটা করতে চাইলে চলে যেতে পারেন বসুন্ধরা সিটি মার্কেটে। এখানে ছোট বড় সবার জন্য রয়েছে নানান আয়োজন। এখানেও দেখা মিলবে কিরণমালা, মৎস্যকন্যা, রাজকুমারী, বোঝে না সে বোঝে না, এক পারিন্দা এবং স্টোন বসানো ফ্লোর টাচ পোশাকের। তবে দাম পড়বে গাউছিয়া, নিউমার্কেটের তুলনায় বেশি।

বসুন্ধরা সিটিতে ছোটদের মৎস্যকন্যা পোশাকের দাম ৯ হাজার টাকা জানান রিয়ামনি দোকানের বিক্রেতা। ললিতা ফ্যাশনে ওয়া যাবে কোটিসহ ফোরপিস, দাম ২১ হাজার ৭শ’ টাকা।

এছাড়াও বসুন্ধরা সিটিতে পাওয়া যাবে ফ্লোর টাচ ড্রেস, যার দাম ১০ হাজার টাকা।