“আমার কিন্তু এসে খুব ভালো লেগেছে। বুঝতেই পারিনি কোনো গ্যালারিতে এসেছি বা প্রদর্শনীতে। এরকম আরও হওয়া প্রয়োজন। কারণ গ্যালারি কতগুলোই বা আছে ঢাকায়। এমন নতুন নতুন জায়গা তৈরি হলে তো শিল্পীদের জন্য খুবই ভালো। শিল্পীরা তো মানুষের জন্যই কাজ করে। হয়তো জীবিকার তাগিদে শিল্পকর্ম বিক্রিও করতে হয়। নিয়ম মেনে বড় বড় গ্যালারিতে কাজ তুলতে হয়। কিন্তু এখানের ব্যাপারটা আমার কাছে অনেক স্বতঃস্ফূর্ত মনে হয়েছে।”
ঢাকার ছোট্ট গ্যালারি অঙ্গনে নতুন এক ধরনের শিল্প প্রদর্শনীর জায়গা গড়ে উঠছে। বিভিন্ন ক্যাফে রেঁস্তোরা বা সাধারণ অর্থে একটু দামী ও বিশেষায়িত এইসব খাবারের দোকানে শিল্প প্রদর্শনীর সুযোগ পাচ্ছেন, মূলত তরুণ শিল্পীরা। শনিবার ২৩ মে, এমনি এক আয়োজন উদ্বোধন করতে এসে প্রতিক্রিয়া জানালেন শিল্পী হামিদুজ্জামান খান।
গ্যালারি বলতে মূলত ক্যাফে’র রসুইঘর ছাড়া বাকি সবটুকুই। ক্যাফের প্রবেশ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেই যেন এক অন্য ঢাকা। টাংস্টেনের হলুদাভ আলোতে খাবারের টেবিলের পাশাপাশি দেয়ালে ঝোলানো শিল্পীদের চিত্রকর্ম। এবারের এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন ২২ জন শিল্পী। কাজও রয়েছে ২২টি।
দলীয় এই আয়োজনে অংশ নেওয়া শিল্পীরা হলেন: আলাউদ্দিন আহমেদ, সাঈদ হাসান মাহমুদ, রশিদ আমিন, নাসিমা খানম কুইনী, আতিয়া ইসলাম অ্যানি, অনুকুল চন্দ্র মজুমদার, এ. আল মাহমুদ, ফাহমিদা এনাম কাকলি, আশরাফুল হাসান, মো আবদুল মোমেন মিল্টন, মোঃ হারুন-আর-রশিদ, আব্দুস সাত্তার তৌফিক, এ. এইচ ঢালি, আজমীর হোসেন, সৌরভ চৌধুরী, মঞ্জুর রশীদ, কুন্তল বাড়ৈ, এস.এম এহসান, নাইমুজ্জামান, মারিয়া মৌরি, বাপ্পী লিংকন রায় ও আনিকা তাসনিম অনুপ।
আনিকা তাসনিম অনুপ ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসে, চিত্রকলা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। কথা বলার সময়েই তার উচ্ছ্বাস টের পাওয়া যাচ্ছিল। হয়তো প্রকৃত অর্থে শিল্পীর জীবন যাপন করতে হলে, আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে, এই তরুণ শিল্পানুরাগীকে।
আজ শিল্পচর্চায় নিবিষ্ট হচ্ছেন এরকম তরুণরা, নিঃসন্দেহে তা সমাজের জন্য সুখবর। আর এরকম আয়োজনে যেসব প্রতিষ্ঠান, সংগঠন কিংবা ব্যক্তি মানুষেরা তাদের সাহায্য করছেন, দেশের শিল্পচর্চায় নিঃসন্দেহে তা অগ্রগামী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
স্টুডিও ফোর্টি এইট বারোজন শিল্পীদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি সংগঠন। মূল লক্ষ্যও কিন্তু শিল্পীদের ঘিরেই। শিল্পীদের কাজে সাহায্য করা, কোনো বিশেষ লক্ষ্যে শিল্পীদের সংগঠিত করা কিংবা সামাজিক ও পেশাদারি যেকোনো দায়িত্ব পালনে শিল্পীদের এক সুতায় গাঁথার কাজটি করে এই স্টুডিও।
একই সঙ্গে তারা বিশ্বাস করেন, বর্তমান সময়ে নানান সামাজিক সমস্যা বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছেন, তাদেরকে একটু হলেও হয়ত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন শিল্পীরা। নারীর বিরুদ্ধে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হচ্ছে ঘরে-বাইরে তার বিরুদ্ধে স্লোগান হয়ে রইবে এমন দলীয় প্রদর্শনী।
প্রদর্শিত শিল্পকর্ম মানুষের সুকুমার বৃত্তির চর্চাকে আরও সংহত ও সংঘবদ্ধ করবে।
ধানমণ্ডির এই ছিমছাম ক্যাফে গ্যালারিতে প্রদর্শনী চলবে ২৩ অগাস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
মূলত এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়েই দিয়েই এরিক’স বিস্ট্রোতে প্রতি তিনমাসে একটি করে প্রদর্শনী আয়োজন করবার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলো স্টুডিও ফোর্টি এইট।
এরিক বিস্ট্রো ক্যাফে গ্যালারির ঠিকানা: ফাতেমা আর্কেড, মিরপুর রোড, ধানমণ্ডি ৫, ঢাকা ১২০৫।
ছবি: ফায়হাম ইবনে শরীফ।