নোটেশন রিকন্সট্রাক্টেড

বিমূর্ত শিল্পকলার প্রদর্শনী।

শরীফ আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2015, 11:59 AM
Updated : 29 June 2015, 03:26 PM

ক্যানভাসের মধ্য খুব পরিচিত সব মোটিফ দেখা যাচ্ছে, তবে ঠিক যেন চেনা রূপে নয়। অসংখ্য বিন্দু দেখা যাচ্ছে, সঙ্গে বেশ কিছু রেখা, মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি। অথবা পাখির চোখে দেখা পরিচিত কোনো গ্রামই কিনা কে জানে!

আর শিল্পীর ভাষায়, প্রকৃতির প্রেরণা থেকে সঙ্গীতকে ক্যানভাসে আঁকতে চেয়েছেন তিনি। ঢাকার ধানমণ্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে কাজী গিয়াসউদ্দিন তার ‘নোটেশন রিকন্সট্রাক্টেড’ শিরোনামে প্রদর্শিত কাজগুলো নিয়ে এভাবেই নিজের চিন্তার কথা বলেছেন। বিমূর্ত শিল্পের এক অসাধারণ প্রদর্শনী এখনও চলছে। 

বাংলাদেশের চিত্রকলা চর্চাকে এগিয়ে নিতে, পৃষ্ঠপোষকতার যে প্রয়োজন আছে সে কথা অনস্বীকার্য। তবে সেটি বজায় রাখতে প্রয়োজন, বিশ্ব জুড়ে সমকালীন যে শিল্পচর্চা চলছে তার সঙ্গে পরিচিতি থাকা ও পাশাপাশি নিজেদের কাজ নিয়ে বিশ্ব মঞ্চে হাজির থাকা।

শিল্পচর্চায় বাংলাদেশের শিল্পীদের অবদান তুলে ধরতে এবং একই সঙ্গে বিশ্ব মানচিত্রে পেশাদারি মনোভাব নিয়ে এই এলাকার শিল্পীদের হাজির করতে ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করেছিল বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টস বা বেঙ্গল শিল্পালয় নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠার প্রথম  বছরেই শিল্পী গিয়াসের একক প্রদর্শনী আয়োজন করেছিলো তারা।

এবার প্রতিষ্ঠার পঞ্চদশ বার্ষিকীতে কাজী গিয়াসউদ্দিনকে চতূর্থবারের মতো উপস্থাপন করছে বেঙ্গল।

শিল্পী গিয়াসউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে জাপানে থাকছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই তার কাজে সেই এলাকার প্রকৃতি-পরিবেশ, সংস্কৃতি তাকে প্রভাবিত করেছে। সেই ছাপ তার কাজেও রয়েছে। বরফ বা তুষারপাতের বিন্দু বিন্দু কণার মতোই তার ক্যানভাসে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য সাদা চিহ্ন। একই সঙ্গে স্থান পেয়েছে জন্ম থেকেই বেড়ে ওঠা চিরচেনা পরিবেশের অজস্র রংয়ের খেলা। বেড়ে ওঠা রঙিন এবং বৈচিত্র্যময় গ্রামীন পরিবেশে। তাই ক্যানভাসে রংগুলো এক অদ্ভুত মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জায়গা করে নেয়।

কখনও বৃষ্টি, কখনও বয়ে চলা জলধারা, আবার বাতাসে পাতার ভেসে বেড়ানোর পাশাপাশি প্রচলিত রূপকথাকে সঙ্গী করে আঁকেন তিনি। আফটার দা স্টর্ম, আনটোল্ড স্টোরি, পার্পেল নয়েজ, হুইসপার অফ দা উইন্ড, ব্লু হারমোনি, ড্রিম, মিথ— এমনি নামে সাজানো চিত্রগল্পগুলো যেন প্রতিদিন চোখের আড়ালে থাকা মূর্ততার কথা বলে।     

১৯৫১ সালে মাদারীপুর জেলায় জন্ম শিল্পী গিয়াসের। এরপর ১৯৭০ সালে, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ নামে পরিচিত তখনকার ‘বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়’ থেকে স্নাতক ও ১৯৭২ সালে চট্ট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালে জাপানের টোকিও ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ফাইন আর্টস এন্ড মিউজিক থেক্লে চারুকলায় পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন কাজী গিয়াসউদ্দিন। এ  পর্যন্ত দেশ ও দেশের বাইরে সব মিলিয়ে ৫৫টিরও বেশি একক প্রদর্শনীর আয়োজন করবার পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন বহু দলীয় প্রদর্শনীতেও। আর বর্তমানে জাপানে স্থায়ী হওয়ায় কাজ করবার জন্য বাংলাদেশ ও জাপান দুই জায়গাতেই সময় ভাগ করে নিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন গিয়াসউদ্দিন।

প্রকাশিত হয়েছে তিনটি বই। যেখানে যুক্ত আছে এনএইচকে, চিকুমা সোবো, স্কিরা এডিটর ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মতো প্রকাশনা সংস্থা। এছাড়া আসকা শিশা নামের একটি কোম্পানি মোজার্টের সুরগুলোকে তিনখণ্ডে ছত্রিশটি সিডিতে বের করবার কথা রয়েছে।

সেগুলোর প্রচ্ছদ হিসেবে তারা নির্বাচন করেছে শিল্পীর ‘কনটেম্পরারি মাস্টারস অব বাংলাদেশ: কাজী গিয়াসউদ্দিন’ বইয়ের পনেরোটি শিল্পকর্ম।

১৮ এপ্রিল ‘নোটেশন রিকন্সট্রাক্টেড’ শিরোনামে শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিনের শুরু হওয়া বিমূর্ত শিল্পকলার এই প্রদর্শনী চলবে ২৬ মে পর্যন্ত। প্রদর্শনীতে তেল ও জলরংয়ে আঁকা চিত্রকর্মের সংখ্যা ৩৯টি। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত এই বিমূর্ত আয়োজন। 

বেঙ্গল শিল্পালয়ের ঠিকানা: বাসা ৪২, রাস্তা ১৬ (নতুন), শেখ কামাল সরণী, ধানমণ্ডি, ঢাকা ১২০৯।

ছবি; ফায়হাম ইবনে শরীফ।