বনানীতে জর্জ’স লা ডলচে ভিটা

‘আভা গার্দ’ নিউ ওয়েভ সিনেমা নয়, বরং একটি পরিপাটি,  ছিমছাম রেস্তোরাঁ।

শরীফ আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2015, 02:16 PM
Updated : 22 May 2015, 02:28 PM

১৯৭০ এর দশকে ফেদেরিকো ফেলেনির ‘লা ডলচে ভিটা’ যেন এক মূর্ত ঘটনা। ১৭০ মিনিটের সেই রিল ঘুরেছে সারা দুনিয়াব্যাপী। রিলের ছন্দে বৈশ্বিক ‘কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি’তে আলোড়ন তুলেছিলেন ইতালিয়ান এই চলচ্চিত্র নির্মাতা। বাংলায় ‘মধুর জীবন’ হলেও, লা ডলচে ভিটা ছিল শ্লেষ মাখানো ‘নিউ রিয়ালিস্ট’ সিনেমা, যা ওই দশকে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি দেখা হয়েছে বলে পত্র-পত্রিকায় দাবি করা হয়।

ফেদেরিকো ফেলিনির ভাষায় সিনেমা বানানো এমন কাউকে সহসাই খুঁজে পাওয়া যায়নি বাংলাদেশে। আবার সাম্প্রতিককালে যা ঘটছে আশপাশে, তাতে ‘মধুর জীবন বা সময়’ কাটাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ এমনটাও দাবি করা যাচ্ছে না। তবে ঢাকার মানুষদের জন্য একটু হলেও, মধুর সময় কাটানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে ‘জর্জেস লা ডলচে ভিটা’য়।

‘আভা গার্দ’ নিউ ওয়েভ সিনেমা নয় এটি। তবে, ‘জর্জ’স লা ডলচে ভিটা’ নিঃসন্দেহে একটি পরিপাটি, সুন্দর, ছিমছাম রেস্তোরাঁ। কেনো সিনেমার সঙ্গে খাবার দোকানের এত কাসুন্দি গাইতে হল, তা বলতে গেলে ইতিহাস ধরে টান দিতে হবে হয়ত।

তবে সে আলোচনায় না গেলেও এ কথা বলাই যায়, শিল্পমান ও বাজার অর্থনীতির যোগসাজসের কারণে, সিনেমা নয়, বরং ভালো রেঁস্তোরায় যাওয়াই এখন ঢাকার শিক্ষিত, স্বচ্ছল শ্রেণির একটা অংশের বিনোদন মাধ্যম।

১৬ মে  বনানী ১১ নম্বরে অনানুষ্ঠানিকভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছে ‘জর্জ’স’য়ের এই দ্বিতীয় প্রচেষ্ঠা। দ্বিতীয় বলতেই হচ্ছে কারণ, এর আগে উত্তরাতে শুরু হওয়া ‘জর্জ’স ক্যাফে’ এরই মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে খাদ্যরসিকদের মাঝে। ঢাকায় যারা দেশি-বিদেশি কিংবা সহজ অর্থে বৈশ্বিক খাবারের খোঁজ রাখেন, তাদের অধিকাংশের কাছেই ‘জর্জস ক্যাফে’ পরিচিত ও পছন্দনীয় নাম।

আর এই নামের হোতা অর্থাৎ দু’জায়গাতেই প্রথম অংশ দখলে রাখা এই ব্যাক্তি জর্জ স্মিথ। দুই দোকানেই তার সঙ্গে অংশীদার হিসেবে যুক্ত আছেন আরও কয়েকজন বাংলাদেশি উদ্যোক্তা। এবারের নতুন এই রেঁস্তোরাতে ‘নিউট্রিশান’বা পুষ্টি বিজ্ঞান বিষয়ে নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক করা জর্জের সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী সাব্রিনা রশিদ, জামে রশিদ, আবদুস সাকুর চৌধুরী ও তানভীর রহমান।

উঁচু ইমারতের আট তলায় বাসা বেঁধেছে জর্জের রেঁস্তোরা গড়ার স্বপ্ন। রেঁস্তোরার অন্দরের সাজসজ্জা অবশ্যই ঘরের মতো নয়। আর এজন্যই হয়তো রেস্তোরাঁ হিসেবে আরও বেশি মানানসই। লম্বা কাচের ব্যবহারে প্রাকৃতিক আলোর রোসনাই ছড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আট তলার উপরে হওয়ায় সেই কাচ গলে পাখির চোখে অনেকখানি ঢাকা শহর দেখা যায় সেখান থেকে।

এটি একটি পূর্ণাঙ্গ রেস্তোরাঁ। অ্যাপেটাইজার, পাস্তা, সেকোন্ডি, পিৎজা, ডেজার্টস, হট বেভারেজ ও কোল্ড বেভারেজ – আপাতত এই কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে এখানকার খাবার। তবে কোল্ড ড্রিংক্স পাওয়া যায় না, জানালেন রেস্তোরাঁর সংশ্লিষ্টরা।

রেস্তোরাঁ যার, সেই জর্জ অবশ্য বেশ ব্যস্তই থাকেন রসুইঘরে। এখানকার তেল, ঝাল, মসলার স্বাদটা ভালোভাবেই নিয়ে রেখেছেন তিনি। মোটামুটি ভালো বোঝাপড়া রয়েছে বঙ্গীয় ব-দ্বীপের খাবার দাবার সম্পর্কে। আপাতত, ‘ইতালিয়ানো - নিউ ইয়র্কার’ স্বাদের খাবার পরিবেশন করলেও, তালিকায় বাংলাদেশি ফলমূলের খাবার-দাবার যোগ হবে, এমন পরিকল্পনার কথা জানালেন।

৬৫ জনের বসার ব্যবস্থা আছে তার দোকানে, যা কিনা প্রয়োজনে ভাড়াও নেওয়া যাবে।

কফির জন্য আস্থা রেখেছেন জনপ্রিয় ‘নর্থএন্ড’য়ের। আর অন্যান্য খাদ্য, দ্রব্য ও মাছমাংসের জন্য ‘ডিরেক্ট ফ্রেশ’, ‘ফার্ম ফ্রেশ ইনিসিয়েটিভ’ ও ‘সবুজ সাথী ডেইরি’র মতো দেশীয় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাজারের স্বাস্থ্যসম্মত উপাদানগুলো সংগ্রহের চেষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া সস, সসেজ কিংবা বিভিন্ন মসলার জন্য নিজের রসুই ঘরের উপরই আস্থা রাখছেন তিনি।

আপাতত সপ্তাহের প্রতিদিনই খোলা এই রেঁস্তোরা দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকছে।

জর্জেস লা ডলচে ভিটার ঠিকানা: বাড়ি ৯৬, রোড ১১, ব্লক সি, বনানী, ঢাকা ১২১৩।

ছবি: ফায়হাম ইবনে শরীফ।