কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র স্মৃতি

জন্মদিন আসে বারে বারে, মনে করাবারে— এ জীবন নিত্যই নূতন, প্রতি প্রাতে আলোকিত পুলকিত দিনের মতন।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2015, 07:57 AM
Updated : 8 May 2015, 11:46 AM

২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দ। কলকতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে এদিনে জন্মেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবির জীবনের অনেক সময় কেটেছে বাংলাদেশে। দেশের বিভিন্ন যায়গায় তাই রয়েছে কবির স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন স্থাপনা। জমিদারি পরিচালনা করতে এসে এসব জায়গায় থেকেছেন কবি, রচনা করেছেন তার মহামূল্য সাহিত্যকর্ম। কুষ্টিয়া শহর ও কুমারখালিতে আছে কবির স্মৃতিধন্য দুটি জায়গা।

শিলাইদহ কুঠিবাড়ি

কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার পদ্মার দক্ষিণ তীরে শিলাইদহ গ্রামে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি। জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। আগে এ এলাকার নাম ছিল খোরশেদপুর।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জোরাসাঁকোর ঠাকুর পরিবার গ্রামটি কিনে নেওয়ার সময় এখানে একটি নীলকুঠি ছিল। শেলি নামের একজন নীলকর এটি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। পদ্মা এবং গড়াই নদীর মিলিত প্রবাহের ফলে এই এলাকায় একটি ভয়াবহ ‘দহ’ বা ঘুর্ণিস্রোত সৃষ্টি হত। সেখান থেকে এই এলাকা শেলীদহ নামে পরিচিতি পায়। কালক্রমে শেলীদহ রূপ নেয় শিলাইদহে।

১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইল সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এই এলাকার জমিদারির মালিকানা পান। জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে সর্বপ্রথম তিনি শিলাইদহে আসেন ১৮৮৯ সালে। কৈশোর এবং যৌবনে প্রায়ই তিনি জমিদারি দেখভাল করতে শিলাইদহ আসতেন, থাকতেন এ কুঠিবাড়িতেই।

১৮৯১ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে অল্প বিরতিতে কবি নিয়মিত কুঠিবাড়িতে অবস্থান করেছেন। জানা যায় এ বাড়িতে বসেই কবি রচনা করেছেন তাঁর অমর সৃষ্টি সোনারতরী, চিত্রা, চৈতালী, কথা ও কাহিনী, ক্ষণিকা, নৈবদ্য ও খেয়া কব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতাসহ অনেক উল্লেখযোগ্য রচনা। কবিগুরুর নোবেল জয়ের হাতিয়ার ‘গীতাঞ্জলী’র ইংরেজি অনুবাদও শুরু করেন এখানেই। এছাড়া কবির উপস্থিতিতে এই বাড়িতে এসেছেন স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, প্রমথ চৌধুরী, মোহিতলাল মজুমদার, লেকেন্দ্রনাথ পালিত প্রমুখ প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গ।

প্রায় ১১ একর জায়গাজুড়ে বৃক্ষঘেরা সবুজ চত্ত্বরের ভেতরে দোতলা এ কুঠিবাড়ি। নীচতলা ও দোতলায় কেন্দ্রীয় হলঘরসহ মোট ১৫টি কক্ষ রয়েছে। ভবনের উপরে দৃষ্টিনন্দন পিরামিড আকৃতির ছাদ।

শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে সরকার গড়ে তুলেছে জাদুঘর। কবিগুরুর ব্যবহৃত নানান জিনিসপত্র, কবির নিজ হাতে আঁকা ছবি, আলোকচিত্র, পাণ্ডুলিপিসহ অনেক কিছুর দেখা মিলবে এ জাদুঘরে।

সপ্তাহের রবি ও সোমবার ছাড়া প্রতিদিন বেলা ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ জাদুঘর। রবি ও সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। কবির জন্ম ও মৃত্যু দিনে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় শিলাইদহে।

টেগর লজ

কুষ্টিয়া শহরে কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত একটি বাড়ি টেগর লজ। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ১৮৯০ সালের শেষের দিকে কুষ্টিয়া রেল স্টেশনের কাছে এই বাড়ি নির্মাণ করা হয়।

ভুসিমাল ও পাটের ব্যবসার জন্য কবি নিজে এ বাড়িতে ‘টেগর অ্যান্ড কোম্পানি’র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কলকাতা থেকে ট্রেনে কুষ্টিয়া এসে টেগর লজে বিশ্রাম নিয়ে শিলাইদহে যেতেন কবি। যাত্রাপথে কখনও কখনও এই বাড়িতে রাতও কাটিয়েছেন তিনি।

১৮৯০ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় এই বাড়িতে থেকেছেন কবি। দীর্ঘকাল অযত্নে পড়ে থাকার পর ২০০৪ সালে বাড়িটি কিনে সংস্কার করে কুষ্টিয়া পৌরসভা।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়কপথে সরাসরি কুষ্টিয়া যাওয়া যায়। রেলপথে খুলনাগামী ট্রেনে ভেড়ামারা নেমে সেখান থেকে কুষ্টিয়া সহজেই পৌঁছান যায়।

ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস বি পরিবহন, কেয়া পরিবহন, রেজিনা পরিবহন যায় কুষ্টিয়া। ভাড়া সাড়ে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা।

এছাড়া ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সপ্তাহের সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন চিত্রা এক্সপ্রেস, বুধবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৬টা ২০ মিনিটে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ভেড়ামারা যাওয়া যায়। ভাড়া ২৬৫ থেকে ১ হাজার ৯৮ টাকা।

কুষ্টিয়া থেকে শিলাইদহ যাওয়া যাবে অটো রিকশা, কিংবা মাইক্রোবাসে।

কোথায় থাকবেন

শিলাইদহে পর্যটকদের থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। দিন শেষে কুষ্টিয়া শহরে এসে থাকতে হবে। এ শহরে থাকার জন্য কয়েকটি হোটেল হল: হোটেল রিভারভিউ (০৭১- ৭১৬৬০), ফেয়ার রেস্ট হাউস (০৭১-৬১৪৭০), হোটেল গোল্ডস্টার (০৭১- ৬১৬৭৫), হোটেল আজমিরী (০৭১- ৬১১১৯৩), হোটেল পদ্মা (০৭১- ৭৩৬৭৮) ইত্যাদি। এসব হোটেলে দেড়শ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকায় কক্ষ আছে।

ছবি: হাসান আলী।