সঠিক খাদ্যে ওজন নিয়ন্ত্রণ

খাওয়া ছেড়ে নয়, সঠিক খাদ্যাভ্যাসে শরীরের বাড়তি মেদ কমানো উপায়।

নাইব মুহাম্মদ রিদোয়ানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2015, 11:57 AM
Updated : 7 May 2015, 11:57 AM

স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটের সাম্প্রতিক গবেষণায় ওজন কমাবে এরকম বেশ কয়েকটি খাবারের কথা বলা হয়েছে। চলুন দেখে আসি বাড়তি ওজন কমাতে নিয়মিত খাবার হিসেবে কী কী গ্রহণ করা উচিত।

ডিম

ডিম একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যা সকালের নাস্তার জন্য উপযুক্ত। ‘আমেরিকান কলেজ অফ নিউট্রিশন’ থেকে সম্প্রতি একটি গবেষণা চালানো হয়। এতে অংশগ্রহণকারী কিছু নারীদের ডিম, টোস্ট সঙ্গে লো-ক্যালরি সম্পন্ন জ্যাম খেতে দেওয়া হয় এবং বাকিরা পাউরুটির সঙ্গে চিজ এবং দই খান। ৩৬ ঘণ্টা পর দেখা যায় প্রথম ক্ষেত্রে যেসব নারীরা ডিম খেয়েছিলেন তারা পরে অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক কম খাদ্য গ্রহণ করেছেন। উভয়ক্ষেত্রে খাদ্যে ক্যালরির পরিমাণ সমান হলেও ডিম খাওয়ার ফলে প্রথমক্ষেত্রে নারীদের ক্ষুধা কম লেগেছে।

ডিম।

গ্রিন টি

গ্রিন টিতে কাটেচিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শারীরবৃত্তীয় কাজের হার দ্রুত করে শরীর থেকে বাড়তি মেদ পোড়াতে সাহায্য করে। আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা নিয়মিত গ্রিন টি পান করেন তাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক কম।

জাম্বুরা

ওজন কমানোর জন্য জাম্বুরা হতে পারে আদর্শ খাদ্য। জাম্বুরায় ফাইটোকেমিকল থাকে যা শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং ক্যালরিকে চর্বির বদলে শক্তিতে পরিণত করে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্ক্রিপস ক্লিনিক’য়ের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা প্রতিবার খাবার আগে অর্ধেক জাম্বুরা বা ৮ আউন্স পরিমাণ জাম্বুরার রস পান করেছেন তাদের ওজন অন্যদের চেয়ে দ্রুত কমেছে। তবে কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ রয়েছে যা নিয়মিত সেবন করলে জাম্বুরা খাওয়া ঠিক নয়। তাই খাদ্য তালিকায় জাম্বুরা রাখার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

লালমরিচ

প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় লালমরিচ যোগ করার মাধমে ওজন কমানো সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েয়োমিং বিশ্ববিদ্যালয়ের করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, লাল মরিচে ‘ক্যাপসাইসিন’ নামক উপাদান শরীরে তাপ উৎপাদন বাড়িয়ে শক্তিক্ষয় করে। ফলে দেহে অতিরিক্ত চর্বি জমে না।

শিম বা মটরশুঁটি

আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকল নিউট্রিশনে প্রকাশিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের করা গবেষণা থেকে জানা যায় শিম বা মটরশুঁটিজাতীয় খাবারে ‘কোলেকেস্টোকিনিন’ নামক পাচকীয় হরমোন রয়েছে যা ক্ষুধা নিবারক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত মটরশুঁটিজাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।  

দারুচিনি

রচয়িতা লিন্ডা রেক্টর-পেইজ তার ‘ওয়েট লস অ্যান্ড সেলুলাইট কন্ট্রোল’ বইতে জানান, চা বা কফির সঙ্গে সামান্য দারুচিনি মিশিয়ে নিলে তা প্রতিদিনের খাদ্যের সঙ্গে চিনি গ্রহণের চাহিদা কমিয়ে দেয়। এছাড়াও টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে কোলেস্টেরল এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে দারুচিনি খুবই উপকারী বলে ভিন্ন আরেকটি গবেষণায় জানা গিয়েছে।

সালাদ

বেশি করে সালাদ খাওয়ার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সালাদ কম ক্যালরি সম্পন্ন খাদ্য। এছাড়া সালাদ দ্রুত হজম হয়না বলে সহজে ক্ষুধা লাগেনা। ‘পেন স্টেট ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা ৪২ জন নারীকে নিয়ে একটি গবেষণা চালান। এতে দেখা যায় যারা বেশি পরিমাণে সালাদ খেয়েছেন তারা পরে অন্যদের চেয়ে শতকরা ১২ শতাংশ কম পরিমাণে পাস্তা খেয়েছেন।

চর্বিহীন গরুর মাংস

চর্বিহীন গরুর মাংস

এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনইস’য়ের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যেসব নারী চর্বিহীন গরুর মাংস এবং দুধের মতো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেছেন তারা দ্রুত ওজন কমাতে এবং পেশি গঠন করতে পেরেছেন। অন্যদিকে যারা ভাত এবং পাস্তার মতো জটিল শর্করা গ্রহণ করেছেন তারা খুব বেশি ওজন কমাতে সক্ষম হননি। 

অলিভ ওয়েল

এক্সট্রাভার্জিন অলিভ অয়েলে মনোস্যাচুরেইটেড ফ্যাট থাকে যা শরীরের মেদ পোড়াতে সাহায্য করে। অস্ট্রেলিয়ার ‘কারটেইন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি’ পরিচালিত গবেষণায় কিছু নারীদের চর্বির উৎস হিসেবে অলিভ অয়েল এবং ক্রিম দেওয়া হয়। যারা ওলিভ ওয়েল গ্রহণ করেন তাদের শরীরে মেদের পরিমাণ দ্রুত কমে যায়। ‘জার্নাল ফর ডায়বেটিস’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, অলিভ ওয়েল শরীরে মেদ জমতে বাধা সৃষ্টি করে।

বাদাম

সাধারণত বাদাম খাওয়ার ফলে শরীরে মেদ জমে। তবে পরিমিত বাদাম খেলে অন্যান্য খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা নিয়মিত বাদাম খান তারা দিনের ভারি খাবারের মাঝের সময়টায় তুলনামূলক কম খান। 

শাকজাতীয় খাবার

সালাদ।

শাক, পাতাকপি এবং লেটুসে ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম থাকে। তবে এসব খাদ্যে আঁশ, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।

দই

দইয়ের মধ্যে বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যা অন্ত্র সুরক্ষিত রাখে। এছাড়াও এটি ল্যাপ্টিন প্রতিরোধ করে শরীরে চর্বি জমতে বাধা দেয় বলে জানিয়েছে ‘মেডিকল কলেজ অফ উইসকনসিন’।

ভিনিগার

২০০৫ সালে সুইডিশ গবেষকরা দেখতে পান ভিনিগারের মধ্যে যে অ্যাসিটিক অ্যাসিড রয়েছে যা পাকস্থলী থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রে খাদ্য স্থানান্তরের প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। ফলে খাদ্য বেশিক্ষণ পেটে থাকে এবং ক্ষুধা কম লাগে।

ডার্ক চকলেট

যারা চকলেট ভালোবাসেন তারা ডার্ক চকলেট খাওয়ার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ‘ইউনিভার্সিটি অফ কোপেনহেগেন’য়ের একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথমভাগের অংশগ্রহণকারীদের ডার্ক চকলেট এবং বাকিদের সমপরিমাণ মিল্ক চকলেট দেওয়া হয়। এতে দেখা যায় যারা ১০০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খেয়েছেন তারা পরবর্তীতে সময়ে বাকিদের চেয়ে ১৫ শতাংশ পিৎজা কম খেয়েছেন।

তাই ওজন কমানোর জন্য হুট করে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে না দিয়ে বরং সঠিক খাদ্য বেছে নিতে হবে। এক্ষেত্রে এই খাবারগুলো ভালো ফল বয়ে আনতে পারে।

ছবি: রয়টার্স।