গরমে সুতির শাড়ি

গরমে অনেকেই শাড়ি এড়িয়ে চলেন। তারপরও মাঝে মধ্যে শাড়ি না পরলেই নয়। আর এমন পরিস্থিতিতে সব থেকে আরামদায়ক সুতি শাড়ি।

ইরা ডি. কস্তাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2015, 10:41 AM
Updated : 7 May 2015, 10:55 AM

সুতি শাড়ি পরার বিষয়ে এবং রং বাছাই নিয়ে দেশীয় ফ্যাশন ঘর ‘বিবিয়ানা’র কর্ণধার লিপি খন্দকার বলেন, “এই গরমে শরীরে সহজে বাতাস চলাচল করার জন্য এবং ঘাম শুষে ‍নিতে পারে এমন শাড়িই বেছে নেওয়া উচিত। আর এ জন্য আমাদের দেশীয় তাঁতের সুতি শাড়ি যেমন, টাঙ্গাইলের তাঁত বা মনিপুরি তাঁতের শাড়ি পরা খুবই আরামদায়ক।”

তিনি জানান, সুতির তৈরি যেকোনো পোশাকে সহজে শরীরে বাতাস চলাচল করতে পারে তাই গরমে আরাম পাওয়া যায়। তাছাড়া এই কাপড়গুলোর শোষণ ক্ষমতাও বেশি। তাই ঘাম শুষে শরীর শুষ্ক রাখতেও সাহায্য করে।

গরমে গাঢ় রং এড়িয়ে কিছুটা হালকা রংয়ের পোশাক বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন লিপি খন্দকার।

তিনি বলেন, “গরমে যে কোনো রংয়ের হালকা শেইড দেখতে ভালো লাগে। এটি এক ধরনের মানসিক বিষয়। এই গরমে সাদা, লেমন, হালকা গোলাপি, হালকা হলুদ, আকাশি, হালকা সবুজ ইত্যাদি রংয়ের পোশাক পরলে দেখতে স্নিগ্ধ লাগে। অন্যদের চোখেও দেখতেও ভালো লাগে। আর হালকা রংয়ের কাপড়ে নিজেরও স্বস্থি অনুভূত হয়।”

বিবিয়ানা।

এ মৌসুমে হালকা কাজ বা নকশার শাড়ি বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন লিপি খন্দকার। এক্ষেত্রে এক রঙা জমিন, ছোট বা চিকন পাড় আর হালকা বা ছোট আঁচলের শাড়ি বেছে নেওয়া যেতে পারে। আর চাইলে হালকা প্রিন্ট বা জলছাপ, বাটিক বা ব্লক ইত্যাদিও বেছে নেওয়া যেতে পারে। তবে প্রিন্টের রং যেন বেশি গাঢ় না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলেন লিপি খন্দকার।

তিনি বলেন, “গরমে সুতির পোশাকই আরামদায়ক। তবে কোনো অনুষ্ঠান বা যদি রাতের আয়োজনে ভিন্ন কিছু পরতে চাইলে পিওর সিল্ক, মসলিন বা হাফ সিল্কের শাড়িও বেছে নেওয়া যেতে পারে।”

গরমে বাড়তি সাজ বা গয়না নিজের কাছেই বেশ অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এই সময় যতটা সম্ভব হালকা ও ছোট গয়না বেছে নেওয়া ভালো বলে জানান লিপি খন্দকার।

তিনি বলেন, “এই মৌসুমে উঁচু করে চুল বেঁধে, যেমন হাত খোঁপা বা বেণি করে কানে ছোট ঝুমকা, টপ বা অল্প ঝোলানো দুল পরা যেতে পারে। বর্তমান ফ্যাশনে গলায় চিকন ঝোলানো মালা বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া এখন বিভিন্ন ফ্যাশন ঘরগুলো সুতা, বাঁশ, কাঠ, মাটি ও কাপড় দিয়ে গয়না বানাচ্ছে। এই মৌসুমে সুতি শাড়ির সঙ্গে এসব গয়নাগুলোও বেশ মানানসই।”

“গরমে চুল ছেড়ে না রেখে বেঁধে রাখলেই বেশি ভালো লাগবে। আর এই সময় ভারি মেইকআপও বেমানান। হালকা সাজই গ্রীষ্মের জন্য সব থেকে বেশি উপযোগী। তাই যতটা সম্ভব ‘ন্যাচারাল লুক’-এই মৌসুমে বেশি ভালোলাগে।” বলেন লিপি খন্দকার।

কোথায় পাবেন

কে ক্রাফট।

বিবিয়ানা।

বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দামের ও মানের সুতি শাড়ি সহজলভ্য। দেশীয় ফ্যাশর ঘর, বিবিয়ানা, সাদা-কালো, দেশাল, কে ক্রাফট, অঞ্জনস্, নগরদোলা, যাত্রা, অরণ্য, বাংলার মেলা ইত্যাদিতে বিভিন্ন ধরনের সুতি শাড়ি পাওয়া যাবে।

সাধারণ তাঁতের শাড়ি থেকে শুরু করে ডিজাইনার সুতি শাড়ি, ব্লক বা বাটিক প্রিন্ট, অ্যাপ্লিক, এমব্রয়ডারি, হাতের কাজ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের শাড়িও আছে। তাছাড়া সুতি শাড়ির উপর হ্যান্ড পেইন্টের শাড়ির জনপ্রিয়তাও রয়েছে।

আজিজ সুপার মার্কেটের বিভিন্ন ফ্যাশনঘরগুলোতেও পাওয়া যাবে সুতি শাড়ির সম্ভার। তাছাড়া দেশীয় ব্র্যান্ড প্রাইড, বি প্লাস, বাংলার মেলা, নবরূপা, নারী মেলা ইত্যাদিতেও মিলবে বিভিন্ন ধরনের সুতি শাড়ি।

বাংলার মেলায় অ্যাপ্লিক করা সুতি শাড়ির দাম পড়বে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। ব্লকের উপর হালকা সুতার কাজ করা শাড়িগুলোর দাম সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৮শ’ টাকা। সাধারণ ব্লক, বাটিকের সুতি শাড়ি পাওয়া যাবে ১ হাজার ৩শ’ টাকার মধ্যেই।

বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের দেশী দশ শাখার কে ক্রাফট’য়ের ব্যস্থাপক নাসির বলেন, “আমাদের কাছে বিভিন্ন ধরনের তাঁতের শাড়ি রয়েছে। তাঁতেই ডিজাইন করা শাড়িগুলোর দাম পড়বে সাড়ে ৬শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা। তাঁতের উপর ব্লক করা শাড়ির দাম ১ হাজার ২৫০ থেকে ৩ হাজার টাকা। অ্যাপ্লিক, এম্ব্রয়ডারি এবং হাতের কাজের শাড়িগুলোর দাম আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা।”

দেশাল।

দেশাল।

‘দেশাল’ ফ্যাশন ঘরে এক রঙা সরু পাড়ের তাঁতের শাড়ির দাম সাড়ে ৯শ’ থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকা।

‘রঙ’ ফ্যাশন ঘরেও পাওয়া যাবে বিভিন্ন মানের সুতির শাড়ি। সাধারণ ব্লক প্রিন্টের সুতি কোটা শাড়ির দাম পড়বে ১ হাজার ২শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা। তাছাড়া ভারি কাজ করা এবং ভালো মানের শাড়িও রয়েছে এদের সংগ্রহে। শাড়ির মান ও কাজের উপর দাম নির্ভর করবে।

ফ্যাশন ঘর এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডের দোকান ছাড়াও রাজধানী এবং দেশের বিভিন্ন মার্কেটে পাওয়া যাবে বিভিন্ন মানের সুতির শাড়ি।

বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, হকার্স, চাদনীচক ইত্যাদি মার্কেটে টাঙ্গাইল তাঁত, মনিপুরি তাঁত, ব্লক, বাটিক, হাতের কাজ, হ্যান্ড পেইন্ট ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুতির শাড়ি পাওয়া যাবে। ৫শ’ থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হতে পারে শাড়িগুলোর। তবে এসব মার্কেট থেকে কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই দরকষাকষি করতে হবে।

যত্ন

দেশাল।

সুতি শাড়ির যত্নের বিষয়ে কে ক্রাফট’য়ের বসুন্ধরা শাখার ব্যবস্থাপক নাসির বলেন, “সুতি শাড়ি কখনও তীব্র খার ও ব্লিচযুক্ত ডিটারজেন্ট বা সাবান দিয়ে ধোয়া উচিত নয়। এতে রং উঠে যায় আর শাড়িও নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া কাপড়ে আলাদাভাবে ব্লিচ ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে কাপড়ের স্থায়িত্ব নষ্ট হয়।”

“কাপড় ধুয়ে চাইলে মাড় দেওয়া যেতে পারে। আর অবশ্যই ছায়ার মধ্যে বাতাসে শাড়ি শুকানো উচিত। সরাসরি রোদে শুকালে কাপড়ের রং জ্বলে নষ্ট হয়ে যায়। আর শুকানোর পর অবশ্যই আয়রন করে শাড়ি সংরক্ষণ করতে হবে।” বলেন নাসির।

ছবি সৌজন্যে: দেশাল, কে ক্রাফট ও বিবিয়ানা।