সানগ্লাসের খোঁজখবর

রোদের তাপে আমাদের ত্বকের যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি বাদ যায় না চোখ জোড়া। আর সূর্যের রশ্মি থেকে চোখ বাঁচাতে রোদ চশমা দারুণ উপকারী।

মামুনুর রশীদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2015, 11:42 AM
Updated : 3 May 2015, 01:49 PM

রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই বিভিন্ন চশমার দোকানে সানগ্লাস পাওয়া যাবে। নিউমার্কেট, ফার্মগেট, গুলিস্তান, এলিফ্যান্ট রোড ইত্যাদি এলাকায় দোকানের পাশাপাশি ফুটপাথেও সানগ্লাস বিক্রি করতে দেখা যায়।

এলিফ্যান্ট রোডের ওভারসি অপটিকসের ম্যানেজার সেলিম হোসেন বলেন, “নামীদামী ব্র্যান্ডগুলোর অরিজিনাল সানগ্লাসের সবচেয়ে বেশি কালেকশন পাওয়া যাবে গুলশানে। অতিরিক্ত দামের কারণে ধানমণ্ডি, এলিফ্যান্ট রোডের দোকানগুলোতে অরিজিনাল সানগ্লাসের কালেকশন কম।”

নন-ব্র্যান্ডের চশমাগুলো আসে মূলত চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও কোরিয়া থেকে।মডেল: মৌ।

ধানমণ্ডি সাত মসজিদ রোডের আই কিং দোকানের বিক্রয়কর্মী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, “রংয়ের ধরন অনুযায়ী মূলত তিন ধরনের সানগ্লাস বিক্রি করি আমরা। একই রংয়ের কাঁচের সানগ্লাস, একই রংয়ের হালকা ও গাঢ় শেইড কিংবা দুই রংয়ের শেইড দেওয়া সানগ্লাস এবং মার্কারি রংয়ের।”

“এদের মধ্যে হালকা ও গাঢ় রংয়ের শেইডযুক্ত সানগ্লাসগুলোই ক্রেতাদের বেশি পছন্দ। আর যারা সাইকেল বা মোটরসাইকেল চালান তাদের জন্য পাওয়া যাচ্ছে বিশেষ আকৃতির বাঁকানো রোদ চশমা।” বলেন তিনি।

জসিম উদ্দিন আরও জানান, বাংলাদেশে কোনো সানগ্লাস প্রস্তুতকারক বা আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান নেই। শো-রুমগুলোর মালিকরা নিজেরাই বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য সংগ্রহ করে থাকেন।

ওই সানগ্লাসগুলো যাচাই-বাছাই করার জন্য আলাদা লোক নিয়োগ করা হয়। তারা ত্রুটিপূর্ণ সানগ্লাসগুলো আলাদা করে থাকেন। আলাদা করা সানগ্লাসগুলো পাইকারি দরে ফুটপাথের দোকানদারদের কাছে বিক্রি করা হয়।

নন-ব্রান্ড সানগ্লাস

বিদেশি ব্র্যান্ডের সানগ্লাসের আদলে তৈরি কমদামী রেপ্লিকাগুলো দেখতে ফ্যাশনেবল। মডেল: দীপ্ত।

অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচাতে পারে এমন একটি কাঁচের দামই পড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। মডেল: সোনিয়া।

সাত মসজিদ রোডের টুডে ভিশনের বিক্রয়কর্মী মোহাম্মদ রিজওয়ান বলেন, “নন-ব্র্যান্ডের চশমাগুলো আসে মূলত চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও কোরিয়া থেকে। এদের মধ্যেও সাফারি, গলফ ভিশন, বেলং ইত্যাদি ব্র্যান্ডের চশমা ২শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকায় পাওয়া যাবে।”

“তবে সানগ্লাস বাজারের পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর রেপ্লিকাই বেশি আনা হয়। পণ্যের মান, ডিজাইন ও মডেল অনুযায়ী ৫শ’ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায় পাওয়া যাবে এই সানগ্লাসগুলো।” বললেন তিনি।

রিজওয়ান আরও বলেন, “বিদেশি ব্র্যান্ডের সানগ্লাসের আদলে তৈরি কমদামী রেপ্লিকাগুলো দেখতে ফ্যাশনেবল আর ধুলাবালি থেকে বাঁচালেও, অধিকাংশই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখ বাঁচাতে পারেনা। অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচাতে পারে এমন একটি কাঁচের দামই পড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। তাই অতি-বেগুনি রশ্মি প্রতিরোধকারী সানগ্লাস কিনতে চাইলে কমপক্ষে পাঁচ হাজার বাজেট রাখতে হবে।”

সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের জন্য নন-ব্র্যান্ডের বাঁকানো সানগ্লাসগুলোর দাম পড়বে ৩শ’ থেকে ১ হাজার টাকা, জানালেন রিজওয়ান।

ফুটপাথে দেড়শ’ থেকে ৭শ’ টাকার মধ্যেই নন-ব্র্যান্ডের সানগ্লাস কেনা যাবে। তবে এরজন্য দামদর করা এবং সানগ্লাসের গুণগত মান বিচার করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

ব্র্যান্ডের সানগ্লাস

রোদ আর ধুলাবালি থেকে চোখ রক্ষা করতে সাধারণ সানগ্লাসই যথেষ্ট। মডেল: প্রমা।

পরিষ্কার সুতি কাপড় দিয়ে মুছে রাখলেই ভালো থাকে সানগ্লাস। মডেল: মুন্না।

জসীম উদ্দীন বলেন, “ব্র্যান্ডের চশমার মধ্যে রে ব্যান, আরমানি, পোলিস, গুচি, ফাস্টট্র্যাক ইত্যাদি বেশি জনপ্রিয়। তবে দামি মডেলগুলো কম রাখি আমরা। আর বেশিরভাগই মূলত আসল সানগ্লাসের উন্নতমানের রেপ্লিকা। আর ক্রেতারা ব্র্যান্ড দেখে নয়, মূলত গুণগতমান দেখেই সানগ্লাস কিনে থাকেন।”

গুচির সানগ্লাসের দাম পড়বে ৮ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা। রে ব্যান ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা, আরমানি ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। কেলভিন ক্লেইন ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা, পোলিস আড়াই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।

এছাড়া ক্যারেরা, প্রাডা, পোর্শে, ডায়ার এগুলো পাওয়া যাবে ১ হাজার ৮শ’ থেকে ৮ হাজার টাকায়।

রিজওয়ান বলেন “ব্র্যান্ডের সানগ্লাসগুলো সবচেয়ে বেশি আনা হয় ইতালি থেকে। এছাড়া জাপান, ফ্রান্স, আমেরিকা থেকেও কিছু সানগ্লাস আনা হয়।”

সানগ্লাসের যত্ন

ব্যবহারের পর পরিষ্কার সুতি কাপড় দিয়ে মুছে রাখলেই ভালো থাকে সানগ্লাস, মাঝেমধ্যে পানি দিয়েও ধুয়ে নেওয়া যেতে পারে, এমনটাই জানান ওভারসি অপটিকসের সেলিম হোসেন।    

পাওয়ার সানগ্লাস

যাদের চোখে সমস্যা আছে তাদের জন্য সাধারণ রোদ চশমা খুব একটা উপযোগী নয়। তাই সেক্ষেত্রে চোখের পাওয়ার দিয়ে সানগ্লাস বানিয়ে নিতে হবে।

প্রায় সব চশমার দোকানেই সানগ্লাসে পাওয়ার বসানোর ব্যবস্থা থাকে। মডেল: সোনিয়া।

তবে পাওয়ার দিয়ে সানগ্লাস বানাতে গেলে সব ধরনের সানগ্লাসের ফ্রেইম বা রং বেছে নেওয়া চলবে না বলে জানান একজন বিক্রয়কর্মী।

বাঁকানো ফ্রেমগুলোতে পাওয়ার গ্লাস বসানো সম্ভব হয় না। তাই পাওয়ার মিলিয়ে সানগ্লাস বানাতে চাইলে প্রথমেই দোকানদারদের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে যে কোন ধরনের ফ্রেমগুলোতে পাওয়ার বসানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে পছন্দের তালিকা কিছুটা সংকীর্ণ হয়ে আসবে।

প্রায় সব চশমার দোকানেই সানগ্লাসে পাওয়ার বসানোর ব্যবস্থা থাকে। চোখের পাওয়ার ও গ্লাসের ধরন হিসেবে এর দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে বলে জানান সেলিম হোসেন।

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক।