‘আই ওয়াজ টোল্ড টু সে দিজ’, ‘ট্র্যান্সফরমেশন’, ‘লার্নার’, ‘এ স্পেস ফর রেইনবো’, ‘ওয়াট ওয়াজ রিয়েলি হ্যাপেনিং দেয়ার’, ‘পোর্ট্রেট ফ্রম দ্যা মার্কেট’, ‘সাউন্ডস ফ্রম নোহোয়্যার’ - এবারের আয়োজনে প্রদর্শিত হওয়া ভিন্ন নামের এই শিল্পকর্মগুলোতে খুব পরিষ্কারভাবেই শিল্পীর দ্রোহের খোঁজ পাওয়া যায়।
শিল্প, সঙ্গত কারণেই সৃষ্টি হয়। একটি লম্বা যাপিতজীবনের গল্পের মধ্য দিয়ে, যেখানে ওই সময়ের ভাবনা-চিন্তার একটি নান্দনিক উপস্থাপনা পাওয়া যায়। নানান সময়ে, নানান স্থানে, ভিন্ন মানুষের কাছে শিল্প হিসেবে সমাদৃত হয়েছে এমন সৃষ্টিও, সৃজন হতে গিয়ে স্থান-কাল-পাত্রের অনেক চিহ্ন বহন করে। বিশেষ করে, সারা বিশ্বে আধিপত্যের রাজনীতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-সিন্ধু এই তিন নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা এই সভ্যতায় শিল্প চর্চায় এটি আরও মূর্ত।
এমন সময়ে বাংলাদেশে মিশ্র মাধ্যমের মতো জটিল ও নীরিক্ষাধর্মী প্রক্রিয়ায় শিল্পী মাহবুব রহমান ‘ডাস্ট টু ডাস্ট’ শিরোনামের প্রদর্শনীতে, যেই যাপিত জীবনের কথা বলতে চেয়েছেন সেটি রুঢ়। এখানে চরম অর্থনৈতিক অসাম্য যেমনভাবে ঔপনিবেশিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সমান্তরালে বেড়ে উঠেছে; ঠিক তেমনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেরণাও যুগিয়েছে অন্যায্যের এই ব্যবস্থা।
রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডে গার্মেন্টস মালিকের অন্যায্য আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে, কীভাবে একই সুঁতায় গাঁথা আছে পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্যের রাজনীতি তা একপ্রকার করুণ ও ব্যাঙ্গাত্মক রসের মাধ্যমেই হাজির করেছেন শিল্পী।
একইভাবে ইতিহাসের ফোঁড় খুঁজতে গেলে, কীভাবে নীলচাষের মধ্য দিয়ে নতুন শাসন চালু করেছিল ইংরেজরা তার নিদর্শন পাওয়া যায়। একজন নুরুলদীন কখন জোয়াল নিজের কাঁধে তুলে নেন, সে ইতিহাস হয়ত আর কিছুদিন পর আমাদের অনুজ প্রজন্মের কাছে গল্পের মতো মনে হতে পারে। আর সে জন্যই শিল্পকর্মে এর উল্লেখ থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যথার্থ গুরুত্বের সঙ্গেই বিষয়টি তুলে ধরবার চেষ্ঠা করেছেন শিল্পী।
তাই, পাশাপাশি গরু আর শুকরের অবস্থান নিয়ে, দ্ব্যর্থক কোনো বার্তা খুঁজে পাওয়া যায় না। ‘আই ওয়াজ টোল্ড টু সে দিজ’ শিরোনামের এই কাজটি ২০১১ ভেনিস বিয়েনালে প্রদর্শিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দেশে প্রদর্শিত হচ্ছে। তবে নতুন কোন ধারনার জন্ম না দিলেও, পশ্চিমা শিল্প-ধারনায় ধর্মের রাজনীতির এই ‘ফর্ম’ বা ভাষা বহুল ব্যবহৃত।
বরং চমকে উঠতে হয় ‘ওয়াট ওয়াজ রিয়েলি হ্যাপেনিং দেয়ার’ শীর্ষক কাজটি দেখে। আচ্ছাদিত ও অবনত শির আর হাঁটু মুড়ে পিছন ফিরে বসে থাকা এই শরীরের মাঝে দেখতে পাওয়া যায় অজস্র নাম। গুম কিংবা হারিয়ে যাওয়া মানুষেরা অথবা বন্দুকযুদ্ধে হারানো এমন অনেক প্রাণের প্রতিবিম্ব মনে হয় ওই শরীরকে।
‘ডাস্ট টু ডাস্ট’ নামের এই প্রদর্শনী নিঃসন্দেহে শিল্পীর বহুরূপী শিল্পচর্চার একটি উপস্থাপনা। যদিও প্রদর্শনীতে কাজের সময়কালকে ২০১০ থেকে ২০১৫ এর মধ্যে ফ্রেমবন্দী করেছেন। তবে এর মাঝে কোনোভাবেই ঐতিহাসিক পটভুমি অনেল্লেখ থাকেনি।
১১ই এপ্রিল শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে ২রা মে পর্যন্ত। আর প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত শিল্পী মাহবুব রহমানের এই প্রদর্শনী।
বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জের ঠিকানা: ৬০, রোড ১৩১, গুলশান সার্কেল ১, ঢাকা।
ছবি: ফায়হাম ইবনে শরীফ।