শেষ হলো বাংলাদেশ ইন ফ্রেমস-৭

২৬শে মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনীর পর্দা নেমেছে ৩০শে মার্চ।

শরীফ আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2015, 11:49 AM
Updated : 31 March 2015, 11:51 AM

এবার রাজধানী ঢাকার দু’টি ভিন্ন জায়গায় প্রদর্শিত হয়েছে, আলোকচিত্রীদের সংগঠন টিটিএল’য়ের এই আয়োজন। আর তিনজন বিদেশি আলোকচিত্রীসহ এবারের আয়োজনে ১১৬জন আলোকচিত্রীর মোট প্রদর্শিত কাজের সংখ্যা ১৬০টি।

এর মধ্যে ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারিতে ১১৮টি ও পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারের কল্পনা বোর্ডিংয়ে ঝোলানো হয়েছিলো ৪২টি ছবি।

পেশা কিংবা নেশা দুইয়ের বিচারেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আলোকচিত্র মাধ্যম। হয়তো ভাষার রীতির কারণেই ‘নেশা’ শব্দটি পছন্দ হবে না বঙ্গীয় ব-দ্বীপের অধিবাসী অনেকেরই। তবে ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারিতে ভিন্ন মতের দেখা মিলল।

দৃক গ্যালারি, ধানমণ্ডি।

ছবি তোলার বিষয়টি মানুষের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা। তারপরও আমাদের মতো দেশে যে কয়টি সংগঠন ছবি তোলাকে মানুষের মাঝে জনপ্রিয় করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে ‘থ্রু দা লেন্স’ বা টিটিএল তাদের মাঝে অগ্রগামী। অনলাইনে আলোকচিত্র বিষয়ক সাইট ‘ফ্লিকার’কে কেন্দ্র করে যাদের জন্ম ২০০৭ সালের ২৬শে মার্চ।

এরপর ‘ভার্চুয়াল থেকে রিয়াল’ দু’জায়গাতেই সমানভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে টিটিএল। এরই মাঝে সৌখিন আলোকচিত্রীদের সংগঠনটি অবশ্য নানারকম উদ্যোগের মধ্য দিয়ে মানুষের আরও কাছাকাছি এসেছে।

প্রতি বছর আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা ঠিক তেমনি একটি উদ্যোগ। ২০০৯ সালে শুরু হওয়া  ‘বাংলাদেশ ইন ফ্রেমস’ শিরোনামের এই প্রদর্শনীর সপ্তম আয়োজন ছিল এবার। স্বাভাবিকভাবেই সময়ের সঙ্গে ব্যপ্তি বেড়েছে প্রদর্শনীর। সৌখিনদের পাশাপাশি প্রতিবারই পেশাদার আলোকচিত্রীদের কাজও জমা পড়ছে। 

কল্পনা বোর্ডিং, শাঁখারি বাজার

দৃক গ্যালারি, ধানমণ্ডি।

যারা আলোকচিত্র বিষয়ে আগ্রহী কোনো দলে ভীড়ে যেতে চান, তাদের জন্য আরও নানারকম আয়োজন নিয়মিতই করে আসছে বলে জানালেন, এবারের প্রদর্শনীর কো-অর্ডিনেটর সুদীপ্ত দাশ। মাসিক ‘ফটো ওয়াক’, ‘ফটো আড্ডা’ বা ‘অ্যানুয়াল সাফারি’র মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে মূলত আলোকচিত্রকে আরও জনপ্রিয় ও সহজলভ্য করে তোলার জন্য।

এছাড়া গেল বছর থেকে আলোকচিত্রের উপর বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ সব বইয়ের সমাহার নিয়ে ‘সচিত্র’ নামের ‘ফটোগ্রাফিক বুক শো’র আয়োজনও শুরু করেছে টিটিএল।

ঢাকার ডাকসাইটে গ্যালারি দৃকের পাশাপাশি পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শাঁখারি বাজারের কল্পনা বোর্ডিংয়েও এবার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিলো। দৃক গ্যালারির আয়োজন যতটাই আনুষ্ঠানিক, যতটা গুরুগম্ভীর শিল্পের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জায়গা, কল্পনা বোর্ডিং যেন ততটাই স্বতঃস্ফূর্ত। ব্যস্ত শাঁখারি বাজারের রাস্তার পাশেই এ যেন এক যজ্ঞ। প্রদর্শনী স্থলেই রয়েছে এক রিক্সা, বোর্ডিংয়ের রান্নার সরঞ্জাম এমনতর আরও নানান জিনিস।

দৃক গ্যালারি, ধানমণ্ডি।

নেদারল্যান্ডস থেকে বাংলাদেশ ঘুরতে এসেছেন ফন উইক। ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন পুরান ঢাকার অলি গলিতে। এখানে ওখানে  ধাক্কা খেতে খেতেই পৌঁছান কল্পনা বোর্ডিংয়ের প্রদর্শনীতে।

“আমি এদেশে এসেছি মানুষ দেখতে। অল্প ক’দিনের মাঝেই এখানকার মানুষ আমাকে মুগ্ধ করেছে। যা ভেবেছিলাম তার চেয়েও বেশি আন্তরিক বাংলাদেশের মানুষ। তাই আমার কষ্ট হচ্ছিলো দু’দিন বাদেই চলে যেতে হবে বলে। এই প্রদর্শনী দেখে যেন কষ্টটা অনেক কমে গেলো। যেইসব মানুষের সঙ্গে আমি স্বশরীরে দেখা করতে পারলাম না, ছবিগুলো যেন আমাকে তাদেরই দেখিয়ে দিল। অসাধারণ এই প্রদর্শনী, অসাধারণ এমন পরিকল্পনা।”

পাঁচদিনের এই প্রদর্শনীতে হয়ত লেন্সের ফাঁক গলে পুরো বাংলাদেশকে দেখা যায়নি। তাই বলে প্রতি বছর বদলে যাওয়া বাংলাদেশ বদলে যাওয়া পরিবেশ দেখার যে আয়োজন করে যাচ্ছে টিটিএল সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।            

ছবি: ফায়হাম ইবনে শরীফ।