গ্রীষ্মকালীন সবজি

সুস্থ থাকতে চান? তবে মৌসুমিসবজি খান।

কামরুন নাহার সুমিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2015, 10:18 AM
Updated : 31 March 2015, 10:34 AM

বসন্ত শেষ না হতেই বাজারে দেখা মিলছে বিভিন্ন ধরনের গ্রীষ্মকালীন সবজি।

“প্রধানত মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, শসা, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, পটল, করলা ও চিচিংগা বেশি পাওয়া যায় বাজারে। তবে বিভিন্ন ধরনের কচু, ধুন্দুল, কাঁকরোল, বেগুন, ঢ্যাঁড়স আর শাপলাও পাওয়া যাবে এই সময়ে।” বললেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমীন।

তিনি এই সময়ের সবজির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেন, “গ্রীষ্মকালে সবজির বৈচিত্র্য কম থাকে। তবে পরিমাণে অনেক বেশি কিনতে পাওয়া যায়।”

সবজিগুলোর পুষ্টি উপাদান ও শরীরে এর উপকারিতা নিয়ে রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও পুষ্টিবিদ রেহানা বেগমের সঙ্গে কথা হয়।

তিনি জানান— শসা, টমেটো, পটল, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, কাকরোল ইত্যাদি গ্রীষ্মকালীন সবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, মিনারেল ও ভিটামিন এ, সিসহ নানান উপাদান। যা মৌসুমি রোগ প্রতিরোধসহ শরীর সুস্থ রাখতে বেশ কার্যকার।

টমেটো।

আর সুস্থ থাকতে দৈনিক চার থেকে পাঁচ
বা আড়াই থেকে তিনকাপ সবজি খাওয়া প্রয়োজন বলে জানান এই পুষ্টিবিদ। পাশাপাশি ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায় এসব সবজি পরিমাণে একটু বেশি খেলেও শরীরের তেমন ক্ষতি হয় না।

গ্রীষ্মকালীন সবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণে পানি। যা গরমকালের জন্য বেশ উপকারী। এ সময়ে ঘাম বেশি হওয়ায় শরীর থেকে প্রয়োজনীয় অনেক ‘নিউট্রিয়েন্ট’ ঘামের সঙ্গে বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে ভিটামিন, মিনারেলের ঘাটত হওয়ার পাশাপাশি দেখা দেয় পানি স্বল্পতা।

‘তরল’ এমন একটি খাদ্য উপাদান যা শরীরের পানি স্তর ঠিক রাখাসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ, ত্বক ও চুল ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মিষ্টিকুমড়াতে থাকা ক্যারোটিনয়েড উপাদান চোখের বিভিন্ন রোগ উপশমে সহায়তা করে। এমনকি চোখে ছানি তৈরি হতেও বাধা দেয় এ উপাদান।

শসা।

ঢ্যাঁরশ।

কম ক্যালোরি ও বেশি আঁশযুক্ত ঢ্যাঁড়স হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও শরীরের কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই সবজি মেয়েদের জন্য বেশ উপকারী। এতে থাকা ‘ফলেট’ উপাদান গর্ভধারণ করতে সাহায্য করে। আর গর্ভপাত হতেও বাধা দেয়। পাশাপাশি এতে থাকা ভিটামিন সি ‘কোলন’ ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

সাধারণত গ্রীষ্মকালে চিকেন পক্স, হাম ইত্যাদি রোগ বেশি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ‘অ্যান্টি-ডিজিজ’ হিসেবে পরিচিত করলা খেলে এসব রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এই সবজিতে থাকা ভিটামিন সি, মিনারেল ও রঞ্জক পদার্থও শরীরের জন্য বেশ উপকারী।

অন্যদিকে কাঁকরোলে থাকা ‘ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ও পলিপেপটাইড’ উপাদান গ্লাইকোজেন সিন্থেসিস করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতেও এটি বেশ কার্যকারী।

সবজিতে থাকা ভিটামিন সি দেহে কোলাজেন তৈরি করে মজ্জা গঠনে সাহায্য করে। যা হাড়ের‘জয়েন্টের ফ্লেক্সিবিলিটি’ বাড়ায় এবং আর্থ্রাইটিস কমায়।

কাঁকরোল।

এছাড়া সবজিতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই ত্বককে সূর্যের ক্ষরিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা করে। পাশাপাশি এর ‘অ্যান্টি-এইজিং প্রোপার্টি’ ত্বকে বয়সের ছাপ ফেলতে দেয় না।

সবশেষে শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করতে বেশি করে শসা খাওয়ার পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ। পাশাপাশি কিশোর-কিশোরীদের ব্রণ ওঠাসহ বিভিন্ন বয়সজনিত সমস্যা এড়াতেও সবজি খেতে হবে বলে জানান রেহানা বেগম।

ছবিঃ ফুয়াদ তানভির অমি।