রঙিন ঘরে হৃদয় দোলে

বিভিন্ন রং মানুষের মনের বিভিন্ন রকম প্রভাব ফেলে। সেদিকে খেয়াল রেখে রং বৈচিত্র্যের মাধুর্যে সাজিয়ে তুলতে পারেন ঘরের দেয়াল।

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2015, 12:45 PM
Updated : 30 March 2015, 12:55 PM

রং কখনও মানুষের মন ভালো করে প্রশান্তি আনে, আবার কখনও মনকে বিষণ্ণ করে তোলে। রংয়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিদিনের একঘেয়েমিভাব দূর করে কিছুটা বৈচিত্র্য আনা সম্ভব।

মানুষের মনের উপর রংয়ের প্রভাব সম্পর্কে কথা বলেন, বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নাসিমা নাসরিন।

তিনি বলেন, “রং মানুষের মনে কখনও প্রশান্তি আনে, আবার কখনও মন খারাপও করে দিতে পারে।  স্নিগ্ধ রং ব্যবহার করা হলে মন ফুরফুরে থাকে, মানসিক স্থিরতা আসে এবং খুব সহজেই ক্লান্তি দূর হয়। নীল, সবুজ, সাদা, হালকা গোলাপি, হালকা হলুদ ইত্যাদি স্নিগ্ধ বা শীতল রং।”

“অন্যদিকে লাল, কমলা, গাঢ় হলুদ ইত্যাদি উষ্ণ রং। এগুলো ব্যবহারের ফলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। যে কোনো আনন্দ অনুষ্ঠানে এই ধরনের রং ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া এসব রং ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো একটি জিনিসের প্রাধান্য সৃষ্টি করা যায়, আকর্ষণ বাড়ানো যায়, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে উষ্ণ রং ব্যবহার করে যে কোনো সময়েই উৎসবপূর্ণ আমেজ সৃষ্টি করা যায়”, বলেন নাসিমা নাসরিন।

ঘরের দেয়ালের রং মনের উপর প্রভাব ফেলে। তাই ঘরের দেয়াল রং করার আগে কোন রং কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে রাখা প্রয়োজন।

ঘরের দেয়ালের জন্য রং নির্বাচন সম্পর্কে নাসরিন বলেন, “ঘরের আকার যেমনই হোক রংয়ের মাধ্যমে পরক্ষভাবে ঘর ছোট বা বড় দেখানো সম্ভব। ছোট ঘর বড় দেখানোর জন্য সাদা, অফহোয়াইট, হালকা গোলাপি, হালকা নীল, হালকা সবুজ বা হালকা হলুদ রং ব্যবহার করা যেতে পারে।”

সারাদিন পর ঘরে ফিরে হালকা রংগুলো মনে প্রশান্তি আনতে সাহায্য করে। এই রংগুলো মানুষের মন শান্ত রাখে ও ক্লান্তি দূর করে। শীতল রং মন উদার করে বলে অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের রং মানসিক হীনম্মন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

ঘরে আরাম ও প্রশান্তির ফোটানোর পাশাপাশি একটু বৈচিত্র্য আনার জন্য ঘরের একটি দেয়ালে নীল, সবুজ বা বেগুনি রং করা যেতে পারে। এখন অনেকেই শখ করে ‘ওয়াল পেইন্টিং’ করেন। এতে ঘরের সৌন্দর্যে ভিন্নমাত্রা যুক্ত হয়।

“নব দম্পতিদের ঘরের একটি দেয়ালে যদি লাল রং বা লাল শেইডের কাছাকাছি যে কোনো রং ব্যবহার করা যায় তবে তা নতুন জীবনে আলাদা আমেজ যোগ করতে পারে”, বললেন বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক রুমানা বাসার।

লাল উত্তেজক রং। এর মাধ্যমে উৎফুল্লতা ফুটিয়ে তোলা যায়। তাই বসার ঘরের জন্য লাল রং বেছে নেওয়া যেতে পারে।

তবে লাল রং বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এই রং অপরিকল্পিত ব্যবহার বিপজ্জনক। এতে মনের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সঠিকভাবে ব্যবহার না করা গেলে অস্বস্তি ও মানসিক অস্থিরতা অনুভূত হয়, যা ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

শিশুর ঘরের জন্য রং বাছাই

ছোটদের ঘরের রং নির্বাচন প্রসঙ্গে রুমানা বাসার বলেন, “শিশুর মানসিক বিকাশে রং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই যতটা সম্ভব তাদের ঘরের জন্য প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এমন রং যেমন- সবুজ, নীল, আকাশি, লাল, হলুদ ইত্যাদি রংয়ের কাছাকাছি শেইড বেছে নেওয়া উচিত। তাছাড়া ছেলে শিশু ও মেয়ে শিশুদের ঘরের দেয়ালে রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের বয়স ও ব্যক্তিত্বের দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।”

রুমানা বাসার জানান, ছেলে শিশুদের ঘরে নীল বা আকাশি রং ব্যবহার করা যেতে পারে আর মেয়ে শিশুদের ঘরে হালকা গোলাপি, হালকা কমলা রং বেশি মানানসই। তবে এক্ষেত্রে শিশুদের পছন্দের দিকেও খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

শিশুদের ঘর সাজাতে নানা রংয়ের আসবাবপত্র বেছে নিলেও দেখতে ভালো দেখাবে।

রান্না ঘরে রংয়ের ব্যবহার

হালকা সবুজ, অফহোয়াইট ও হালকা হলুদ ব্যবহার করা হলে রান্নাঘর দেখতে উজ্জ্বল লাগবে। এছাড়াও পছন্দসই যে কোনো হালকা রংই রান্নাঘরে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি রান্নাঘরের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার প্রতিও বিশেষ নজর রাখার পরামর্শ দেন নাসরিন। কারণ প্রাকৃতিক আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রান্নাঘরের পরিবেশ সুন্দর রাখে।

ঘরে রঙিন আলোর ব্যবহার

অনেকেই অন্ধকারে ঘুমাতে পারেন না। এক্ষেত্রে তারা ঘরে মৃদু আলো রাখার জন্য কম পাওয়ারের বাতি ব্যবহার করে থাকেন।

এই আলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে নাসরিন নীল ও সবুজি আলো বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেন।

তিনি বলেন, “নীল ও সবুজ আলো চোখে প্রশান্তি আনে। শোবার ঘরে নীল আলো ব্যবহার করা হলে স্বপ্নীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে সবুজ আলো ব্যবহার করে ঘরে সজিব ও প্রাণবন্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়।”

লাল রংয়ের আলো উত্তেজনা ও রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি করে। তাই নববিবাহিতদের ঘরে লাল আলোর মৃদুবাতি ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করেন রুমানা বাসার।

এছাড়াও তিনি মধ্যবয়স্ক দম্পতি ও বয়স্কদের ঘরে সবুজ ও নীল আলোর বাতি ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

ছবি কৃতজ্ঞতায়: শারমীন আরা নিপা।