গ্রীষ্মকালীন শাক

গরমকালে সুস্থ থাকতে চাইলে বেশি বেশি মৌসুমি শাকসবজি খান।

কামরুন নাহার সুমিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2015, 10:32 AM
Updated : 29 March 2015, 10:32 AM

“গ্রীষ্মকালীন শাকগুলোর মধ্যে ডাটাশাক, লালশাক, পাটশাক, পুঁইশাক ও কলমিশাকই প্রধান। পাশাপাশি নটেশাক, হেলেঞ্চা ও বথুয়াশাকও এই সময়ে পাওয়া যায়”, বলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রুহুল আমীন।

তবে ঢেঁকিশাক কেনার সময় সচেতন থাকার পরামর্শ দেন এই প্রফেসর। তিনি বলেন, “পরিত্যক্ত বা নোংরা জায়গায় করা ঢেঁকিশাকে আর্সেনিক ও অন্যান্য ক্ষতিকারক উপাদান থাকে। তাই বাড়িতে বা ভালো জায়গায় চাষ করা ঢেঁকিশাক খেতে হবে।”

আর এসব শাকের পুষ্টিমান ও উপকারিতা নিয়ে কথা হয় রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ‘খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান’ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও পুষ্টিবিদ রেহানা বেগমের সঙ্গে।

পালংশাক।

তিনি জানান, গ্রীষ্মকালে খাদ্যতালিকায় গাঢ় রংয়ের শাক রাখা প্রয়োজন। যাকে ‘গ্রিন লিফি ভেজিটেবল’ (
green leafy vegetables)
বলে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে ফলেট, ফাইবার ও বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থ থাকার কারণে এসব শাক নিউট্রেশনের ‘পাওয়ার হাউজ’ নামেও পরিচিত।

শাক ‘মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস’য়ের (micronutrients) অন্যতম উৎস। ভিটামিন এ, সি, ই ও কে’র পাশাপাশি  মিনারেল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিনয়েডে (carotenoid) ভরপুর এসব শাক। ক্যারোটিনয়েড শরীরের ভিটামিন এ তৈরিতে সহায়তা করে।

শাকে থাকা খাদ্যআঁশ শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আর ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে।

সুস্থ থাকতে দৈনিক চার থেকে পাঁচ ‘সারভিং’ বা আড়াই থেকে তিনকাপ শাক খাওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এই পুষ্টিবিদ। সাধারণত এ ধরনের শাককে ‘লো ক্যালোরি ফুড’ বলা হয়। ফলে পরিমাণে একটু বেশি খেলেও শরীরের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না বলে জানান তিনি।

আর প্রতিদিনের প্রয়োজন অনুসারের শাক খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা, রক্তচাপ কামানোসহ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে শাকে থাকা খাদ্যআঁশ ও অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টগুলো শরীরের শর্করা শোষণের মাত্রা ধীর করে দেয়। আর পটাশিয়াম রক্ত চাপ কমাতে ভূমিকা রাখে।

কলমিশাক।

পাটশাক।

এছাড়া সবুজশাকে থাকা আলফা লিপোইক (lipoeic) অ্যাসিড রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত হারে কমাতে সাহায্য করে। আর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে শাক। পাশাপাশি স্তন, ত্বক, পাকস্থলী ও কলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়তা করে।

পালংশাকে থাকা ‘ফ্লেইভনয়েড’ উপাদান শিশুর জন্য বেশ উপকারী। তবে পালংশাকে অক্সালিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকায় কিডনি ও বাত সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই শাক পরিমাণে কম খাওয়ার পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ।

এছাড়া প্রয়োজনের অতিরিক্ত শাক খাওয়া শরীরের জন্য ঠিক নয় বলেও জানান তিনি। এতে করে বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা ও হজমে সমস্যা হতে পারে। পাশাপাশি যারা আলসার ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্যও ক্ষতির কারণ হতে পারে।      

পুঁইশাক।

উঠতি বয়সে ব্রণ ও ত্বকের কালচেভাবসহ আরও নানান সমস্যা দেখা দেয়। তাই এসব সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে কিশোর কিশোরীদের বেশি করে শাক খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

শরীরের পাশাপাশি মন ভালো রাখতেও বেশ কার্যকর এসব শাক। এক্ষেত্রে শাকে থাকা ফলেট উপাদান শরীরে সেরোটিন(Serotonin) উৎপাদন করে। যা হতাশা কমাতে সাহায্য করে।

ছবি: ফুয়াদ তানভীর অমি।