মোহাম্মদপুরের কাবাব!

ক্রিকেট খেলায় যে দলেরই সমর্থক হোক না কেনো, প্রায় সব বাঙালিই এখানকার কাবাব একবার হলেও চেখে দেখেছেন।

মিথুন বিশ্বাস ও মামুনুর রশীদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2015, 12:12 PM
Updated : 28 March 2015, 12:12 PM

আর যারা এখনও খাননি তার একবার হলেও ঢুঁ দিতে পারে। তবে হজমশক্তি হওয়া চাই অটুট।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাইস্কুলের সামনের জায়গাটি প্রচলিতভাবে জেনেভা ক্যাম্প নামে পরিচিত। এই ক্যাম্পে বসবাসকারীদের অনেকেই গড়ে তুলেছেন বেশ কিছু কাবাবের দোকান। বহুদিন ধরেই ঢাকার ভোজন রসিকদের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে বলা যায়।

অনেক ভোজন রসিকদের বলতে শোনা যায়, এই আটকে পড়া পাকিস্তানী (বিহারী বলেই বেশি পরিচিত) যেভাবে কাবাব তৈরি করেন তা বোধ হয় এখন খোদ বিহারেও হয়না। অর্থাৎ একবারে ‘ইউনিক’ এই কাবাবের স্বাদ।  

এই দোকানগুলো বছর দশেক আগেও এসময়ের তুলনায় বেশ অপরিচ্ছন্ন ছিল। তারপরও যদি কেউ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খুঁজতে চান এই দোকানগুলোতে, খুব যে সফল হবেন তা বলা যাবে বলে মনে হয়না।

আর স্বাদের কথা বলতে গেলে শহীদুল জহিরকে ধার করে বলা যায়- ‘বুড়ো বিহারীর দোকানের’ কাবাবের মজাই আলাদা!  

এরকম কয়েকটি কাবাবের দোকান নিয়েই এই প্রতিবেদন।

রহিম ভ্যারাইটি কাবাব

সবমিলিয়ে ৪০ জনের বসার ব্যবস্থা আছে এখানে। তারা খোলা থাকেন বিকাল ৩টা থেকে রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত, জানান মোহাম্মদ হাবিব।

সুপের পাশাপাশি মিলবে টিক্কা, গরুর চাপ, মগজ, শামি কাবাব ইত্যাদি। ঠাণ্ডা পানীয় মিলবে কিছু।

মোহাম্মদ হাবিব কথার ফাঁকে জানান, ৫ জানুযারি থেকে শুরু হওয়া চলমান অবরোধের কারণে ব্যবস্যা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একদিকে ক্রেতা আসছেন কম আর অন্যদিকে খাবার সরবরাহকারীরা বাড়িয়ে দিয়েছেন দাম।

মুসলিম ভ্যারাইটি কাবাব অ্যান্ড সুপ

যদিও সবমিলে বসতে পারেন ৫০ জনের মতো। তবে দোকানটি দেখলে মনে হতে পারে এটি অনেক বড় রেস্তোরাঁ।

এখানকার ওয়াহিদ হোসেন বলেন, “যতলোক এখানে খেতে আসেন, তার থেকে বেশি লোক খাবার কিনে বাড়ি নিয়ে যান।”

হোসেন আরও জানান প্রায় ২৫ বছর আগে শুরু হয় এদের যাত্রা। তারপর থেকেই ঢাকার ভোজনরসিকরা বিভিন্ন জায়গা থেকে বার বার এখানে খাবার খেতে আসেন।

নিউ মুসলিম কাবাব অ্যান্ড চাপ

মোহাম্মদ রাজু হচ্ছেন এই দোকানের কর্ণধার। জানান পাশের দোকান মুসলিম ভ্যারাইটি কাবাব অ্যান্ড সুপের মালিক ওয়াহিদ হোসেন তারই বাবা।

বছর ১৫ আগে বাবার হাত থেকেই এর মালিকানা বুঝে নিয়ে চালাচ্ছেন এই কাবাবের দোকান। এখানে বসতে পারবেন ৫০জন। বিকাল ৩টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খাবার মিলবে এখানে।

মোস্তাকিম ভ্যারাইটি কাবাব ও সুপ

এই অঞ্চলের সবচাইতে জনপ্রিয় কাবাবের দোকান সম্ভবত এটি। ১৯৮২ সালে শুরু হওয়া এই দোকান এলাকার প্রথম বলে দাবি অন্যতম কর্ণধার আবদুল্লাহ আল মামুন। এই দোকান আবার এখানকার সবচাইতে বড় দোকান এটাও বলা যায়। এদের অবস্থান রাস্তার এপার-ওপার। একশ’ লোক একসঙ্গে বসতে পারবেন এখানে।

কাবাব, চাপ, সুপ ইত্যাদি বাদেও এখানে গরমের সময় বিশেষভাবে রাখা হয় লাচ্ছি, শরবৎ ও ফালুদা, জানান মামুন। ভালোকথা, এদের নিজস্ব পানের দোকান আছে।  যেখানে মিলবে প্রায় ৪০ রকমের পান।

মুরসালিন

কর্ণধার শাহ আলম জানান ছয় বছর ধরে এটি পরিচালনা করছেন তিনি। গরুর চাপ, বটি, ক্ষিরি ও মগজ ৬০ টাকা করে। খাসির চাপ, বটি ও মগজ ৭০ টাকা করে। মুরগি ফ্রাই ও বটি ১শ’ টাকা, গিলা কলিজা ৬০ টাকা আর কর্নসুপ ৩০ টাকা।

এই কর্নসুপ কোন ঘরানা মেনে তৈরি এই চিন্তা মাথায় আনলে লাভ কিছু হবে বলে মনে হয়না!

কাবাবের সঙ্গে লুচি খাওয়া এখানে জনপ্রিয়। ছোট আকারের জন্য দুই টাকা আর বড়র দাম পাঁচ টাকা।   

মনে রাখবেন এখানকার সবগুলো দোকানে খাবারের দাম কমবেশি একই রকম।

ছবি: শিশির।