বর্তমানে এই বিহারের একাংশে চলছে খনন কাজ।
স্থানীয়ভাবে নরপতির ধাপ নামে পরিচিত। মাটি চাপা পড়ে থাকা উঁচু টিলা আকৃতির এই এলাকা এক সময় ছিল বৌদ্ধ বিহার। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং’য়ের বিবরণে ভাসু বিহারের উল্লেখ আছে। ৬৩৯-৬৪৫ খৃষ্টাব্দে তিনি এ জায়গা পরিদর্শন করেন বলে জানা যায়।
ইতিহাস বলে সে সময়ে তিনি বিহারের সাতশত ভিক্ষুকে পড়ালেখা করতে দেখেছিলেন। তাঁর বিবরণের উপর ভিত্তি করেই স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম ভাসুবিহারকে বৌদ্ধ বিহার হিসেবে সনাক্ত করেন।
দুটি বিহারের মধ্যে একটি অপেক্ষাকৃত বড়, অন্যটি ছোট। বড় বিহারের আয়তন পূর্ব-পশ্চিমে ৫৬ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৪৯ মিটার। এর দক্ষিণ পাশের কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ পথ এবং চারপাশে ৩০টি ভিক্ষু কক্ষ আছে।
ভূমি পরিকল্পনা ও স্থাপত্য কৌশলে বড়টির অনুরূপ ছোট বিহার । এর আয়তন পূর্ব-পশ্চিমে ৪৬ মিটার ও উত্তর-দক্ষিণে ৪৯ মিটার। চারপাশে ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য ২৬টি কক্ষ এবং কক্ষগুলোর সামনের চারপাশে ঘোরানো বারান্দা আছে। পূর্ব পাশের কেন্দ্রস্থলে এর প্রবেশ পথ।
বিহার দুটির কাছেই উত্তরমূখী প্রত্নস্থল হচ্ছে একটি মন্দির। এর আয়তন পূর্ব-পশ্চিমে ২৭ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৩৮ মিটার। মন্দিরের কেন্দ্রস্থলে উঁচু বর্গাকার জায়গাটি মণ্ডপ। চারপাশে ধাপে ধাপে উন্নীত প্রদক্ষিণ পথ।
ভাসুবিহারে বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে আট শতাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্রোঞ্জের ক্ষুদ্রাকৃতির মূর্তি, বিভিন্ন রকম পোড়ামাটির ফলক, পোড়ামাটির সীলমোহর, পাথরের গুটিকা, লোহার রপরেক, মাটির গুটিকা, অলঙ্কৃত ইট, মাটির প্রদীপ ইত্যাদি।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮৬ সালের বিভিন্ন সময়ে এ জায়গায় খনন কাজ চলে। পরে ২০০৬-২০০৭ সালে খনন করে এখানে একটি বৌদ্ধ বিহার, একটি বৌদ্ধবিহারের অংশবিশেষ, দুটি বৌদ্ধ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষসহ নানান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শণের সন্ধান মেলে। এই বিহারের দৈর্ঘ্যে ৫৭ মিটার এবং প্রস্থে ৬১ মিটার। মাঝখানে একটি খোলা জায়গার চারপাশে ৩৭টি ভিক্ষু কক্ষ আছে। কক্ষগুলোর সামনে চারপাশে টানা বারান্দা। বিহারের পূর্ব দেয়ালের কেন্দ্রস্থলে এর প্রবেশ পথ।
বিহার ধাপে বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে এক হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরণের প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্রোঞ্জ নির্মিত ধ্যানমগ্ন বুদ্ধমূর্তি, রৌপ্য মুদ্রা, পোড়া মাটির ফলক, পোড়া মাটির সীল মোহর, ধুপদানী, পিরিচ, মাটির পাত্র, অলঙ্কৃত ইট ইত্যাদি। নানান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুযায়ী এই প্রত্নস্থলের সময়কাল খৃস্টীয় ৭ম-৯ম শতক।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে বগুড়া যায় এস আর, টি আর ও ডিপজল পরিবহনের এসি বাস। মহাখালী বাস স্টেশন থেকে যায় শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের এসি বাস, ভাড়া ৫শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা। এছাড়া কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে এস আর, শ্যামলী, হানিফ, কেয়া, ডিপজল ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও যায় বগুড়া। মহাখালী বাস স্টেশন থেকে বগুড়া যায় এস আর, শাহ ফতেহ আলী ও একতা পরিবহনের নন এসি বাস। ভাড়া সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা।
কোথায় থাকবেন
বগুড়া শহরে ভালো মানের আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শহরের ছিলিমপুরে হোটেল নাজ গার্ডেন, ফোন- ০৫১-৬২৪৬৮, ৬৩২৭২। এছাড়া বনানীতে পর্যটন মোটেল, ফোন ০৫১-৬৭০২৪-২৭। চার মাথার মোড়ে হোটেল সেফ ওয়ে, ফোন ০৫১-৬২৬৯০, ৬৬০৮৭। বনানী ফুলদিঘীতে হোটেল সিস্তা, ফোন ০৫১-৬৬৯৬৫, ৬৬৩১০। এসব হোটেলে ৫শ’ থেকে ৯ হাজার টাকায় বিভিন্ন মানের বিভিন্ন রকম কক্ষ রয়েছে।
প্রয়োজনীয় তথ্য
ভাসু বিহার ও বিহার ধাপ প্রত্নস্থল দুটি উম্মুক্ত। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত, যে কোনো সময়ই যাওয়া যায়। সপ্তাহের সব দিনই খোলা থাকে।