“মেঘ যখন বড় হবে, তখন যদি সে মা-বাবার বিচার চেয়ে নিতে পারে তাহলে হবে, না হয় কতদিন গেল এখনও তো কিছুই হলো না। প্রথম প্রথম মেঘ অন্যরকম হয়ে গেছিলো, কিন্তু এখন সে আল্লাহর রহমতে ভালো আছে।”
রাজধানী দৃক গ্যালারিতে বসে কথা হচ্ছিলো সাংবাদিক মেহেরুন রুনির মা নুরন নাহার মির্জার সঙ্গে। তিন বছর আগে ঢাকার রাজাবাজারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি। এরপর থেকেই এক দুঃসহ জীবন বয়ে চলছেন নুরন নাহার। বড় হচ্ছে সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মাহির সারোয়ার মেঘ। তবে আজও জানতে পারেনি কী কারণে, কার প্রতিহিংসার শিকার হল তার মা-বাবা।
গেলো দুবারের মতো এবারও সাগর-রুনির পরিবারের সদস্যরা প্রতিবাদী প্রদর্শনীর আয়োজন করলেন, ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারিতে। কারণ এখনও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। জানা যায়নি কারা তাদের হত্যাকারী। আর বিচারের প্রশ্ন এক্ষেত্রে অবান্তর। তাই ‘সাগর রুনি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করি’ প্রদর্শনীর শিরোনামেই এক ধরনের প্রতিবাদ লক্ষ করা যায়।
তবে তার এই ভাবনার সঙ্গে মিলে গেছে আরও অনেকের অভিব্যক্তি।
মঙ্গলবার প্রদর্শনীর উদ্বোধনী দিনে এই প্রতিবাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন - সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ড. ইফতেখারুজ্জামান, খুশি কবির, শহিদুল আলম, রেহনুমা আহমেদ, ফারজানা রুপা, মাহবুবুর রহমানসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা।
প্রদর্শনী ঘুরে প্রতিক্রিয়া জানান আইনজীবি ও পরিবেশকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, “জনমত সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আশা করছি জনমতের চাপেই রাজনৈতিক জবাবদিহিতার আরও বৃদ্ধি পাবে। যখন এ ধরনের ঘটনার সুষ্ঠূ বিচার পাওয়া যাবে। আর সেরকম অবস্থায় পৌঁছাতে এ ধরনের আয়োজন মানুষকে আরও সচেতন করে তুলবে। তাছাড়া এমন একটি ঘটনার বিচার হলে, আরও অনেকের জন্য এটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।”
ব্যতিক্রমী এই প্রদর্শনীতে সাগর-রুনির পুরানো ছবি, দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র, পরিবারের সংগ্রহ করা ভিডিও ক্লিপসহ আরও নানান কিছু উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রদর্শনীর আয়োজনে পুরো ঘটনার ভয়াবহতা ফুটে না উঠলেও, জঘন্যতম এই অপরাধের প্রতি মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা সৃষ্টি করবার প্রয়াস রয়েছে।
প্রদর্শনী আয়োজনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানাতে গিয়ে এভাবেই পুরো পরিবারের ভাবনার কথা বলেন, মেহেরুন রুনির ভাই, সাংবাদিক নওশের রোমান।
তিনি আরও বলেন, “কিছু কিছু জিনিস যেভাবে ছিল ঠিক সেভাবেই তুলে এনে রাখা হয়েছে গ্যালারিতে। আশা করছি এই প্রতিবাদের সঙ্গে সবাই একাত্মতা জানাবেন এবং প্রতিবাদের বার্তা পৌঁছে যাবে সরকারের কাছে।”
“প্রদর্শনীর আয়োজনে পুরো ঘটনার ভয়াবহতা ফুটে না উঠলেও, জঘন্যতম এই অপরাধের প্রতি মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা সৃষ্টি করবার চেষ্ঠা আছে এখানে।” এমনটাই বললেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ আহমেদ।
দৃক গ্যালারির ঠিকানা: বাসা ৫৮, রোড ১৫এ (নতুন) ধানমণ্ডি, ঢাকা ১২০৯।
ছবি: ফায়হাম ইবনে শরীফ।