এমন দৃশ্য দেখতে চাইলে যেতে হবে মৌলভী বাজার জেলার বাইক্কা বিলে। চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গলের পাশেই মাছ আর পাখির অভয়াশ্রম এই বিল।
ঢাকা থেকে বাইক্কা বিলের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার আর শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের পূর্ব পাশের প্রায় একশ হেক্টর আয়তনের জলাভূমিই বাইক্কা বিল। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় এই বিল মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। আইড়, মেনি, কই, ফলি, পাবদা, বোয়াল, রুই, গজারসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আছে এখানে। শুধু মাছই নয়, নানান রকম দেশি আর পরিযায়ী পাখিরও অভয়াশ্রম এই বিল।
বাইক্কা বিল প্রায় ৯৮ প্রজাতির মাছ ও ১৬০ প্রজাতির পাখির অভয়াশ্রম।
শ্রীমঙ্গল শহর ছেড়ে মৌলভীবাজার সড়কে প্রায় দশ কিলোমিটার পথ চলার পর মূল সড়ক ছেড়ে হাতের বাঁয়ে পাকা সড়কটি এঁকেবেঁকে চলে গেছে বাইক্কা বিলে। তবে এ পথে বরুনা বাজারের পর আরও দুই কিলোমিটার পাকা পথ। এর পরেই সড়কটি কাঁচা।
তবে শীতে গাড়ি চলাচলের উপযোগী থাকে এ পথ। কাঁচাসড়কে প্রায় তিন কিলোমিটার চললেই বাইক্কা বিলের প্রবেশ পথ।
সকালের নরম রোদে ডানা মেলে বসে থাকা কিংবা মাছের খোঁজে বিলের জলে লুটোপুটি খেতেও ক্লান্তি নেই তাদের।
গলাটা সাপের মতোই লম্বা বলে আরেকটি পাখির নাম সাপ পাখি, ইংরেজিতে বলা হয় ওরিয়েন্টাল ডার্টার। দেখতে অনেকটা পানকৌড়ির মতো এরা।
দৃষ্টিটা একটু বাড়িয়ে কচুরিপনার ভেতরে দিলে হয়তো চোখে পড়বে ডাহুক, জল মোরগ, দল পিপি কিংবা নেউ পিপি। খুব কাছে থেকেই দেখা যাবে গ্রেট এগ্রেট বা বড় বকের মাছ শিকার। একটু দূরে নজর দিলে হয়ত দেখা যেতে পারে গ্রে হেরন বা ধুসর বক কিংবা পার্পল হেরন বা বেগুনি বকও।
এ বিলে দেখা যায় পৃথিবীর বিপন্ন প্রজাতির পাখি ব্ল্যাক হেডেড আইবিস বা কালোমাথা কাস্তেচরা। দেখতে অনেকটা বড় বকের মতোই, শুধু মনে হবে কেউ যেন গলাটা ধরে আলকাতরায় ডুবিয়ে দিয়েছে।
অপেক্ষাকৃত কম পানির জায়গায় এরা কাদা ঘেঁটে খাবারের সন্ধানে ব্যস্ত থাকে।
বিলের দাপুটে পাখিরা হল শঙ্খচিল, ভুবন চিল, পালাসী কুড়া ঈগল, গুটি ঈগল ইত্যাদি। এ সময়ে আরও দেখা মিলবে বিলের অতিথি পাখি সরালি, মরচেরং ভুঁতি হাঁস, গিরিয়া হাঁস আর ল্যাঞ্জা হাঁসের ভেসে চলা। বিলের মধ্যে অপেক্ষাকৃত দূরত্বে দেখা মিলবে মেটেমাথা টিটি, কালাপাখা ঠেঙ্গী গেওয়ালা বাটান ইত্যাদি।
বাইক্কা বিলের পাখি বৈচিত্র্যের সামান্য কিছুই লিখে প্রকাশ করা যায়। বাকিটা চোখে দেখতে হলে সময় ঠিকঠাক করে চটজলদি বেড়িয়ে পড়তে হবে।
শীত চলে গেলে পাখিরাও কমে যায় বিল থেকে। বিলের পাখি উপভোগের জন্য দুটি পর্যবেক্ষণ বুরুজ আছে। নৌকায় ঘুরে বিল দেখা সাময়িক বন্ধ রেখেছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে সরাসরি শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টার প্রাইজ, এনা পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাস যায় শ্রীমঙ্গল। ভাড়া সাড়ে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা।
শ্রীমঙ্গল থেকে বাইক্কা বিলে যাওয়ার জন্য সরাসরি কোনো পরিবহন সেবা নেই। তাই যেতে হবে নিজস্ব কিংবা ভাড়া কারা গাড়ি করে।
শ্রীমঙ্গল থেকে সারাদিনের জন্য বাইক্কা বিলে যাওয়া আসার জন্য সিএনজি চালিত বেবি টেক্সির ভাড়া পড়বে ১ হাজার ২শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা। আর জিপ কিংবা মাইক্রোবাসের ভাড়া পড়বে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা।
কোথায় থাকবেন
বাইক্কা বিলের খুব কাছাকাছি থাকার ভালো কোন ব্যবস্থা নেই। সারাদিন ঘুরে শ্রীমঙ্গল শহরে এসে রাত কাটাতে পারবেন।
শ্রীমঙ্গলে থাকার ভালো মানের জায়গা ভানুগাছ রোডে টি রিসোর্ট। এছাড়া শহরের হবিগঞ্জ সড়কে আছে রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট, হবিগঞ্জ সড়কে টি টাউন রেস্ট হাউস, কলেজ রোডে হোটেল প্লাজ। এসব হোটেল- রিসোর্টে ৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকায় রুম পাওয়া যাবে।