সোনারগাঁওয়ে কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে চলছে মাসব্যাপি লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2015, 09:03 AM
Updated : 29 Jan 2015, 09:08 AM

বাংলার হারিয়ে যাওয়া লোকজ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের স্বাদ পাওয়া যাবে এই উৎসবে। লোককারুশিল্প মেলা ছাড়াও এখানে দেখে আসতে পারেন প্রাচীন শহর ‘পানাম নগর’।

এবারের মেলা শুরু হয়েছে ১৪ জানুয়ারি, চলবে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

সোনারগাঁওয়ের লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরের চিত্র অন্যান্য সময়ের থেকে পাল্টে গেছে। এবারের লোকজ উৎসব ঘিরে নানানভাবে সাজানো হয়েছে এই জায়গা। শীতের ফুলে চারদিক ভরপুর।

প্রধান প্রবেশ পথ থেকে ফাউন্ডেশন চত্বরে ঢুকলে হাতের বাঁ পাশে বড় সর্দারবাড়ি, সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। এখান থেকে সামান্য পূর্ব দিকে লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের সামনে স্থাপতি হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য।

‘ওপেনটি বায়েস্কোপ’ গ্রামাঞ্চলের একটি ঐাতহ্যবাহী খেলা। এরকম অনেক গ্রামীণ খেলাই প্রদর্শিত হয় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ মেলা ও উৎসবটি। ছবিটি বুধবার তোলা। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

শুরুতেই দেখে নিতে পারেন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর। এগারোটি গ্যালারিতে প্রায় চার হাজার তিনশরও বেশি নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।

১নং গ্যালারিতে আছে কাঠ খোদাই ও কারুশিল্প, ২নং গ্যালারিতে বাংলার গ্রামীণ জীবযাত্রার চিত্র। ৩নং গ্যালারি সাজানো হয়েছে পটচিত্র ও মুখোশ দিয়ে। ৪নং গ্যালারি দেশের বিভিন্ন এলাকার নৌকা। ৫নং গ্যালারিতে রয়েছে বাংলাদেশের আদিবাসী। ৬নং গ্যালারিতে আছে লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও বাংলার পোড়ামাটির শিল্প। ৭ ও ৮নং গ্যালারিতে আছে যথাক্রমে লোহার তৈরি নিদর্শন ও তামা, কাঁসা, পিতলের তৈজশপত্র। ৯, ১০ ও ১১নং গ্যালারিতে আছে লোকজ অলঙ্কার, বাঁশ, বেত ও শীতল পাটি।

জাদুঘর দেখে চলে আসুন মেলা প্রাঙ্গণে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের হাতে গড়া লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বর এখন কারুশিল্পীদের মিলনমেলা। দেশের নানান প্রান্ত থেকে শিল্পীরা হাজির হয়েছেন তাদের ঐতিহ্যবাহী সব শিল্পকর্ম নিয়ে। আর সেসবের পসরা সাজিয়ে বসেছেন পুরো ফাউন্ডেশ চত্বরজুড়ে।

লোক কারুশিল্প মেলায় দেখা যাবে সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী কাঠের পুতুল আর দারুশিল্প। আরও আছে সেখানকার আরেক ঐতিহ্য জামদানী শাড়ি। এছাড়াও নরসিংদীর পাটের শিকা, রংপুররের শতরঞ্জি, ঝিনাইদহের সোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি, নকশীপাখা, পটচিত্র, টেপা পুতুল, যশোরের নকশীকাঁথা আরও কত কী!

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এ লোক কারুশিল্প মেলার একটি স্টলে কাঠ খোদাই করে নকশা করছেন দারুশিল্পীরা। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও লোক কারুশিল্প মেলায় রাজশাহীর সখের হাঁড়ি নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় একজন বিক্রেতা। বিরোধী জোটের টানা অবরোধের কারণে এ মেলায় দর্শক সমাগম অন্যান্য বছরের তুলনায় কম বলে জানালেন বিক্রেতারা। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

দেশের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তৈরি তাঁতের কাপড়ও আছে মেলায়।

ধামরাইয়ের তামা, পিতল আর কাঁসাশিল্প। কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা আর টাঙ্গাইলের বাঁশের শিল্পকর্ম, সিলেটের শীতলপাটি, নানান জায়গার মৃতশিল্প।

মুড়ি মুড়কি, মিঠাই, মুড়ালি, পিঠে-পুলি গ্রামীণ মেলার অন্যতম আকর্ষণ। আর এর সবকিছুই স্থান পেয়েয়েছে লোক কারুশিল্প মেলায়। মেলায় ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হলে পা চালিত নৌকায় ভেসে বেড়ানে পারেন ফাউন্ডেশনের লেকে।

কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের লোকজ উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে দেশের হারিয়ে যাওয়া নানান গ্রামীণ খেলা। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— ওপেনটি বায়েস্কোপ, কাবাডি, বৌচি, দাড়িয়াবান্ধা, মোরগ লড়াই। এসব আয়োজনও বেশ মজার।

হারিয়ে যেতে বসা বাংলার ঐতিহ্য পুতুল নাচও আছে মেলায়। এছাড়া মেলার অন্যতম আকর্ষণ পালাগান, বিয়ের গান, বাউল গান, জারি, সারি, মুর্শিদী, মারফতি, লালন, হাসনের গানসহ লোকসংগীতের বিশাল আয়োজন।

প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত অবধি মেলার মঞ্চে চলে এসব গানের আসর।

কীভাবে যাবেন

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এ লোক কারুশিল্প মেলার একটি স্টলে জামদানী শাড়ি দেখছেন দর্শনার্থীরা। ছবিটি বুধবার তোলা। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঢাকার গুলিস্তান থেকে বোরাক পরিবহন, সোনারগাঁও পরিবহন ইত্যাদি বাসে চড়ে নামতে হবে মোগরাপাড়া বাস স্টেশনে। ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

এছাড়া একই জায়গা থেকে দাউদকান্দি কিংবা মেঘনাগামী যে কোনো বাসেও মোগরাপাড়া যাওয়া যায়। মোগরাপাড়া থেকে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের রিকশা ভাড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা। 

প্রয়োজনীয় তথ্য

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন।

বুধ ও বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। তবে উৎসবের সময় পুরো সপ্তাহজুড়েই খোলা থাকে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন।

প্রবেশ মূল্য জন প্রতি ২০ টাকা। বিদেশিদের জন্য ১০০ টাকা। তবে শিশু ও প্রবীণদের কোনো প্রবেশ মূল্য নেই।