রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে নার্সারি। তবে আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসের আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু গাছ বিক্রির দোকান। চাইলে এখান থেকে সংগ্রহ করা যায় মনের মতো বৃক্ষ।
গ্রিন ওর্য়াল্ড
একেবারে আগারগাঁও মোড়ে চৌরাস্তালাগোয়া এই নার্সারি। ম্যানেজার বাবুল হোসেন জানান দশ বছর ধরে চলছে এই ‘সবুজের’ কারবার।
টব, কীটনাশক, জৈবসার, মাটি ও অনান্য পরিচর্যার দ্রব্যও পাওয়া যায়। আরও পাওয়া যায় পরিচর্যাবিষয়ক বই।
হোসেন জানান, বাসাবাড়ির ভেতরে ও ছাদের জন্য গাছ নেওয়ার জন্যই বেশিরভাগ ক্রেতারা এখানে আসেন।
এমনই এক ক্রেতা লালমাটিয়া মহিলা কলেজের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক রেহানা বেগমের সঙ্গে কথা হল। জানালেন নিয়মিত এখানে এসে গাছ কেনেন। মাঝারি আকারের একটি বারান্দা নাকি একবারে ভরিয়ে তুলেছেন গাছে।
এই দাবি সমর্থন করেই ম্যানেজার হোসেন বলে ওঠেন, “উনি প্রতি ১৫ দিনে একবার করে আসেন।”
গাছের প্রতি এত ভালোবাসা, কীভাবে?
উত্তরে রেহানা বেগম বলেন, ‘‘দেখুন হাজার দুয়েক টাকা দিয়ে হয়ত ডিনার করলে পেট ভরবে, তবে গাছ হল মনের খোরাক।”
রেহানা বেগম অবশ্য একটা ছোট আবদার দিয়ে তার কথা শেষ করেন, “দাম যদি আর একটু কম হত তাহলে খুশি হতাম।”
আর হোসেন জানান, কয়েকশ’ প্রজাতির গাছ আছে এখানে।
ইউনিক নার্সারি
এই নার্সারিও নাকি চালু হয়েছে প্রায় ১০ বছর আগে। এমনই জানান নার্সারির রাজু ইসলাম।
তার দাবি এখানে তিনশ প্রজাতির উদ্ভিদ আছে। সপ্তাহে সাতদিন খোলা, সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আর ক্রেতা হিসাবে কারা আসেন? জানতে চাইলে ইসলাম বলেন, ৪ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৯০ বছরের মানুষও এখানে আসেন।
বহু প্রজাতির গাছ আছে এখানে, কয়েকটি গাছে তো ‘ঘটা’ করে ঝুলে আছে ফল! এক কর্মচারি জানান মালটা, লেবু, জাম্বুরার গাছ ক্রেতারা ফলবতী অবস্থায় কিনতে পারবেন সহজেই। আর কিছু গাছে ফুল আর ফল আসে বিশেষ ঋতুতে।
এখানে নাকি শুধু ৯০ প্রজাতির ফলের গাছ আছে। এর মধ্যে ডুরিয়ান, সান্তল, চেরি সাউথ-ইস্ট এশিয়া অঞ্চলের গাছ বলে জানা গেল। আর তাই দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। আর অস্ট্রেলিয়ান ফিংগার লাইম নাকি বেশ দামি!
গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া আরও হরেক রকম ফুলের গাছ রয়েছে থরে থরে সাজানো।
টমেটো, মরিচগাছ চোখে পড়ল প্রচুর। এখানে কিছু মসলার গাছও মিলবে— এলাচ, তেজপাতা, দারুচিনি ইত্যাদি। তবে এই নার্সারিতে ড্রামে রাখা গাছের সংখ্যা বিস্তর মনে হল।
এক কর্মচারি জানালেন ছাদে বাগান করতে পছন্দ করেন এমন লোকের আনাগোনা এখানে বেশি হয়।
বৃষ্টি নার্সারি
আড়াইশ প্রজাতির গাছপালা পাওয়া যাবে বলে জানান ম্যানেজার আবুল কালাম। জানালেন ছয়বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছে এই প্রতিষ্ঠান।
বেশ কিছু বনসাই আছে এখানে, টব, জৈবসার, রাসায়নিক সার ইত্যাদি দ্রব্যাদি মিলবে।
এখানকার এক ক্রেতা ড. মানিক চন্দ্র দাস জানান, চিকিৎসাবিদ্যা পড়ার আগে থেকেই সবুজের প্রতি আগ্রহ ছিল। প্রায় ৪০টিরও বেশি বনসাই করেছেন শখেরবশে।
তিনি আরও জানান চিকিৎসাবিদ্যা ছাড়াও তিনি বিশ্বাস করেন ‘সব রোগের উপশমই আছে’, গাছে। তাই প্রকৃতির প্রতি এই শ্রদ্ধা থাকবে অটুট, অমলিন!
কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারি
ম্যানেজার খন্দকার শরীফুল আলম জানান, তিনি কাজ করছেন ২৮ বছর ধরে। চারশরও বেশি প্রজাতির গাছ আছে এখানে। সপ্তাহে প্রতিদিন খোলা থাকে।
বৃক্ষমেলায় নাকি তাদের উপস্থিতি বেশ সরব দাবি আলমের। এমনকি দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবনের জন্য এখান থেকে বেশ কিছু গাছ নেওয়া হয়েছে মনোনীত ব্যক্তিদের মাধ্যমে।
এই বছরও নাকি পাঁচ থেকে সাতটির মতো বৃক্ষ গেছে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে, বলে জানান তিনি।
আগারগাঁও এলাকার সবচাইতে বড় আকারের নার্সারি। সবুজের এই বিশাল সারির সমারোহ দেখে অকারণ ভালোলাগা ঠেকানো কঠিন হতে পারে।
এখানকার মিজানুর রহমান জানান, দুই বছরের কিছু বেশি সময় ধরে এই ঠিকানায় আছে গার্ডেনিয়া নার্সারি।
একটি জিনিস বিশেষ চোখে পড়ার মতো, তা হল জলজগাছ। শাপলা, পদ্ম ইত্যাদি আছে এখানে।
আর ফুল, ফল, শোভাবর্ধনের জন্য ঝোলানো গাছ এবং বনসাই আছে বহু প্রজাতির।
চেরি টমেটো পাওয়া যায় শীতকালে, দাম ১শ’ টাকা।
শাপলা পড়বে ১ হাজার ৫শ’ টাকা। পদ্ম ২ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় মিলবে।
একটি বিশেষ বনসাই আছে এখানে বলে জানান রহমান। দাম যার ৪ লাখ টাকা।
এখানে কথা হল আমেরিকার হাওয়াই থেকে আসা একজন পর্যটক রেইমন্ড কাশিনস্কির সঙ্গে।
তিনি এখানে প্রচুর ছবি তুলছেন। নিজ ভূমেও রয়েছে বাগান, কারণ গাছ পোষা তার শখ।
তিনি জানান, ইমিগ্রেইশন অফিসে এসে বন্ধ দেখে আর অবরোধের জ্বালায় কোথাও নড়াচড়া করতেও সমস্যা। তাই ‘রাগ’ কমাতে সবুজের সমারোহ দেখছেন আর ছবি তুলছেন মনের সুখে। চোখেমুখে আনন্দ ভাবটি ছিল অকৃত্রিম।