দ্বীপগ্রাম কাট্টলি বিল

জলাভূমি আর নীল আকাশের নিচে নিঃশব্দেই জেগে আছে কাট্টলি বিলের অনেকগুলো দ্বীপ। কাপ্তাই লেকের বিস্তৃত জলরাশির মাঝখানে এই দ্বীপগুলোতে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি।

সমির মল্লিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2015, 10:30 AM
Updated : 12 Jan 2015, 11:34 AM

মাছ শিকারকে কেন্দ্র করে দ্বীপের বুকে গড়ে উঠেছে বাজার। জেলেদের নৌকা মেরামতের সরঞ্জাম আর শুটকিপল্লি গড়ে উঠেছে এই বাজারে।

কাট্টলি বিলের দূরত্ব রাঙামাটি সদর থেকে পানিপথে প্রায় চার ঘণ্টা। একমাত্র বাহন লঞ্চ বা দেশিবোট। আমাদের অবশ্য যাত্রাপথ ছিল লংগদু হয়ে। লংগদু থেকে কাট্টলি বিল দ্বীপের দূরত্ব প্রায় দুই ঘণ্টারমতো।

সকালের কুয়াশা মোড়ানা স্নিগ্ধতাকে সঙ্গী করে মোটরবাইকে রওনা হলাম দিঘীনালা থেকে। আঁকাবাঁকা সরু পাহাড়ি পথ পেরিয়ে এক ঘন্টায় পৌঁছে যাই লংগদু বাজারে। রাঙামাটির পুরানো বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম লংগদু বাজার। পাশেই মায়ানী মুখ, যেখানে কর্ণফুলীর উপনদী কাছালং মিশেছে।

মায়ানী নদীর মুখে গড়ে ওঠা মাইনী বাজার এই অঞ্চলের পুরান এবং প্রধান বাজার। বাজারের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী বাঙালি। মায়ানী মুখ পেরিয়ে রাঙামাটির দিকে যেতেই সুমদ্রের মতোই বিশাল জলরাশির বুকে দ্বীপের মতো কাট্টলি বাজার। চারপাশে লেকের নীল জলরাশি জুড়ে শীতের আগমনী জানিয়ে দেয় মিষ্টি কুয়াশা।

কাট্টলি বিল

লেকের এই অংশজুড়ে মাছধরা নৌকার সারি। পানকৌড়ি আর নানান জাতের পাখির ঝাঁক বিলের চারপাশে। আসলে শীতের পাখি দেখতেই কাট্টলি বিলে আগমন।

মাছের প্রাচুর্যের কারণে কাট্টলি বিল পাখিদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ছোট সরালি, টিকি হাঁস, বড় সরালি, মাথা মোটা টিটি, গাঙচিল, গাং কবুতর, চ্যাগা, চখাচখিসহ নানান প্রজাতির পাখির ঝাঁকে মুখরিত পুরো বিল। দেশিবোটে করে রওনা হলাম লংগদু ঘাট থেকে- যাত্রী সংখ্যা ১২জন। নীল জলরাশির বুক চিড়ে ঢেউ তুলে চলেছে ইঞ্জিনচালিত বোট। জল শুধু জল— পাড়ি  যেন গেছে ভেসে, মাঝপথে শুধু ছোট ছোট দ্বীপ আর দূরে পাহাড়ের সারি।

মাঝখানের এই দ্বীপগুলোতে মাত্র দু’একটি পরিবারের বসবাস। বর্ষায় এসব দ্বীপ পানির নিচে থাকে। তাই প্রত্যেক পরিবারের যোগাযোগের জন্য একটা করে নৌকা আছে।

জলের জীবন দেখতে দেখতে চলেছি কাট্টলি বিলের দিকে। দেখি দূরের পাহাড়গুলোকে চুম বুলিয়ে নীল মেঘ অবারিত জলরাশিকে নিজের রংয়ে রাঙিয়ে দিয়ে ভেসে বেড়ায়। জলের বুকে মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। বেশ কয়েক বছর ধরে অতিথি পাখির সমাগম ঘটে কাট্টলি বিলে।

কাট্টলি বিলে দ্বীপগ্রাম

এই বিলে পাখি শিকার কমে যাওয়ায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যাও বেড়েছে। পাখির ঝাঁক দেখলেই বোটের গতি কমানো হয় যাতে পাখি উড়ে না যায়।

দেখতে দেখতে দুপুর নাগাদ পৌঁছে যায় কাট্টলি বিলে। লেকের নীলাভ স্বচ্ছ ঠাণ্ডা জলে দীর্ঘ স্নান শেষে তিন থেকে চার পদের তাজা মাছ সমেত মধ্যাহ্ন ভোজ সারলাম বাজারের শাহজাহান ভাইয়ের দোকানে। পরিতৃপ্তির স্বাদ নিয়ে কাট্টলি বিল থেকে আবার যখন রওনা হলাম লংগদুর পথে ততক্ষণে সোনালী সূর্য সোনা রঙা আলোয় চরাচরকে মুড়িয়ে দিয়ে মুখ লুকিয়েছে পাহাড় ঘেষা লেকের জলে।

যেভাবে যাবেন

কাট্টলি বিল যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে রাঙামাটি অথবা লংগদু উপজেলা সদরে। ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস যায় রাঙামাটিতে। আর রাঙামাটি থেকে সকালে মারিশ্যা এবং লংগদুর পথে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে করে কাট্টলি বিলে যাওয়া যাবে।

কাট্টলি বিল

সবচেয়ে ভালো হয় যদি লংগদু হয়ে যান। এক্ষেত্রে রিজার্ভ দেশিবোট নিতে পারেন। ভাড়া ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা।

প্রয়োজনীয় তথ্য

যদি সাঁতার না জানেন তবে পানিতে নামবেন না, লেকের পানি বেশ গভীর। লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করতে পারেন। কাট্টলি বিলে রাতে থাকার কোনও সুযোগ নেই। বিকেলেই ফিরে আসতে হবে।

কাট্টলি বিল বিষয়ক যে কোন তথ্য ও সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন: ০১৫৫৬-৭১০০৪৩, ০১৮১৫৮৫৬৪৯৭ (সিএইচটি ট্র্যাভেল)।

ছবি: লেখক।