সম্প্রতি এক গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল থেকে গবেষকরা জানিয়েছেন, কোনও ডিভাইস ব্যবহার করে পড়ার কারণে দেহে বিরূপ প্রভাব ফেলে যা ঘুমে ব্যঘাত তৈরি করতে পারে।
ব্রিগাম অ্যান্ড উইমেন’স হসপিটাল (বিডব্লিউএইচ)’য়ের একদল গবেষক দেখতে পান, সন্ধ্যা এবং রাতের প্রথম দিকে আলোকসম্পাতের কারণে ঘুম সহায়ক হরমোন মেলাটোনিন প্রকাশে বাধা পায়। আর ‘সার্কাডিয়ান ক্লক’ বা যে মাধ্যমে আলো না থাকলেও শরীর চব্বিশ ঘণ্টার সময় নির্ধারণ করতে পারে সেটা পরিবর্তন করে ফেলে, ফলে ঘুমের সময়ও ঘুমানো কঠিন হয়ে যায়।
পেনসেলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির বায়োবিহেইভাইয়োরাল হেল্থের সহকারী অধ্যাপক অ্যানি-মারি চ্যাঙ বলেন, “ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ছোট-তরঙ্গদৈর্ঘ্য-সমৃদ্ধ আলো নিক্ষেপ করে, যাতে স্বাভাবিক আলোর চাইতে উচ্চমাত্রায় নীল আলো কেন্দ্রীভূত থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রাকৃতিক আলোর গঠনের চাইতে এই আলো অন্যরকম, যা ঘুম এবং সার্কাডিয়ান ছন্দের মধ্যে অনেক প্রভাব ফেলে।”
এই গবেষণার জন্য চ্যাঙ এবং তার সহকর্মীরা ১২ জন প্রাপ্ত বয়ষ্ককে দুই সপ্তাহ ধরে পর্যবেক্ষণ করেন। এ জন্য অংশগ্রহণকরীদের ঘুমানোর সময় যখন তারা বই পড়তো সেই সময় তাদের আই-প্যাডে পড়তে দেওয়া হয়।
গবেষকরা অংশগ্রহণকরীদের মেলাটোনিনের মাত্রা, ঘুমানো এবং পরদিন সকালের তৎপরতার পাশাপাশি ঘুম সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন।
দেখা গেছে ছাপা অক্ষরের বই পড়ার চাইতে ই-রিডারের আলোকপ্রক্ষেপনের ফলে অংশগ্রহণকরীদের ঘুমাতে প্রায় ১০ মিনিট দেরি হয় আর তাদের চোখের নড়াচড়া বা আরইএম (র্যাপিড আই মুভমেন্ট) ছিল খুবই কম।
চ্যাঙ বলেন, “সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, যারা ই-রিডার ব্যবহার করেছেন তারা বেশি ক্লান্ত হয়েছেন এবং পরদিন সকালে তাদের তৎপর হতে সময় লেগেছে।”
গবেষণাপত্রের রচয়িতারা জানান, যখন বেশিরভাগ মানুষ বিশেষ করে শিশু ও কিশোররা পড়া, যোগাযোগ, বিনোদনের জন্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বেছে নিয়েছেন তারা এরইমধ্যে কম ঘুমের অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই ধরনের ডিভাইসের উপর মহামারী সংক্রান্ত গবেষণার দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল মূল্যায়নের দ্রুত প্রয়োজন রয়েছে।
প্রসেডিংস অফ দি ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সে জার্নালে এই ফলাফল প্রকাশিত হয়।
ছবি: রয়টার্স।