সাত মসজিদ রোডের খাবারের আয়োজন

রাজধানীর ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোড ও এর আশপাশের রাস্তাগুলোতে আছে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ। এদের মধ্যেই ১০টি রেস্তোরাঁ নিয়ে এই প্রতিবেদন।

মামুনুর রশীদ শিশিরমিথুন বিশ্বাস ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2014, 10:37 AM
Updated : 21 Jan 2015, 03:33 PM

সিলান্ত্রো

৪৯ সাত মসজিদ রোড

ধনেপাতাকে আমেরিকানরা এই নামেই ডাকে। আর আমাদের মতোই মেহিকানরাও (মেক্সিকো) তাদের খাবারে এই ধনেপাতা ব্যবহার করে থাকে বিস্তর।

তবে এই রেস্তোরাঁয় ঢুকলে মন ভালো হয়ে যেতে পারে! সামনের ঢোকার মুখ থেকেই অন্যরকম এক ধরনের আবহ আছে। হালকা গাছ আর বাঁশের চিকের সঙ্গে ‘তৈরি করা’ ঢোকার রাস্তার কয়েকটি পাথরের আহ্বান আর ভেতরের আলো আঁধারি পরিবেশ মন খারাপের বিষয় হতেই পারে না!

ভেতরে তো আরও সুন্দর! এক দিকে যেমন আলোর খেলা তেমনি দেয়ালেও আছে এক ধরনের  সৃষ্টির আনন্দ! 'ভাঙা' দেয়ালে আবার ঝুলে আছে কিছু ছবি। আর সব মিলিয়ে এক রকম রঙিনভাব! স্বপ্নিল মনে হলে দোষ দেওয়াটা কঠিন হবে।

চমৎকার এই অন্দরসজ্জা করেছেন তানিয়া আফরোজ।

তানজিল ফিরদাউস জানান তিনি পশ্চিমা একটি দেশে থাকার সময় লাতিন আমেরিকান খাবার ও জীবনযাত্রার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন।

আর তাই এখানে মিলবে কিছু দক্ষিণ আমেরিকান খাবার। মেহিকান ট্যাকোজের দাম ২৯৫ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পড়বে। এনচিলাদাজ পড়বে  ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা। নাচোজ ২৯৫ টাকা, তোস্তাদাস ২৯৫ থেকে ৩৯৫ টাকা। পেরুভিয়ান চিকেন ৫৯৫ টাকা।  স্টেক ৭৭৫ থেকে ৯৭৫ টাকা।

কফি ও চায়ের পাশাপাশি অংকিং ও ব্ল্যাক জ্যাকের মত ড্রিংকও আছে। ভালো কথা এই ব্ল্যাক জ্যাক কিন্তু জামের তৈরি! 

চা বার

৪৭, সাত মসজিদ রোড 

শুধু মাত্র চা বিক্রি হয় এখানে। এবং হরেক পদের। সঙ্গে কিছু স্নাক্স।

আবিদ হোসেন এখানে কাজ করছেন কিছুদিন ধরে। জানালেন ২০০৫ সালে শুরু হয় এর যাত্রা। সব মিলিয়ে ২২ রকম ফ্লেইবারের চা মিলবে এখানে।

সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত ১০টা অবধি খোলা থাকে এই চায়ের দোকান। ২৫ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হবে এখানে চা খেলে। এখানে বিলাতের বিখ্যাত টোয়াইনিং’য়ের চা যেমন পাওয়া যায় আবার তেমনি শ্রিলঙ্কার উদীয়মান ব্রান্ড ডিলমার চাও পাওয়া যায়।   

 

ক্রিম অ্যান্ড ফাজ 

প্লট ৯১, রোড ১২/এ ‍সাতমসজিদ রোড

আবাহনী মাঠের পাশেই এই ক্রিম অ্যান্ড ফাজ। রিক ভিনসেন্ট প্যারিস এখানকার ব্যবস্থাপক। জানালেন কফি বিনস আসে নর্থ এন্ড কফি থেকে।    

স্যান্ডউইচ মিলবে বিফ চিকেন আর সবজির। ১৬০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা এর দাম। এখানকার আইসক্রিম আসে থাইল্যান্ড থেকে। ১৮ রকম স্বাদের মধ্যে চকোলেট, ভ্যানিলা আর হেইজেলনাট ফ্লেইবার সব চাইতে জনপ্রিয় বলেন ম্যানাজার। এক স্কুপ ১৭৫ টাকা। এখানে ওয়াফেলসও মিলবে।  

সকাল ১১টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত তরুণ গ্রাহক বেশি আসেন আর রাতে প্রধানত গ্রাহকরা আসেন পরিবার নিয়ে জানান এখানকার ম্যানাজার।

একটি কথা না বললেই নয়। এখানকার খাবার সরবরাহকারীরা হাসি বা সম্ভাষণের বেলায় বেশ পটু। রেস্তোরাঁতো সেবা খাতেরই অংশ, সেখানে এই জিনিষ তো বাঞ্ছনীয়ই হওয়ার কথা!

ওয়াইফাই আছে।

বেল্লা ইতালিয়া

১০/এ সাত মসজিদ রোড

এই শাখা খুলেছে প্রায় আড়াই বছর আগে জানান ম্যানেজার আরিফ খান। তবে উনি নিজে এই রেস্তোরাঁর অন্য শাখায় কাজ করছেন সেই ২০০০ সাল থেকেই।

বেল্লা ইতালিয়া ঢাকার যে ভোজনরসিকরা 'খাঁটি' ইতালীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন তাদের কাছে যে বেশ পছন্দের এটা বলাটা বোধ করি বাড়াবাড়ি হয় না। ৯২ জনের বসার ব্যবস্থা আছে এখানে। অন্দরসজ্জা সাদামাটাই বলা চলে।

পিৎজা এখানে বেশি জনপ্রিয় হল বোলোনেজে, পিৎজা বেল্লা ইতালিয়া আর ফুঙ্গি সসেজ (মাশরুম ও মুরগির সসেজ)।

পাস্তার মধ্যে এই শাখায় জনপ্রিয় ফেতুচিনে আল ফ্রেদ্দো। স্প্যাগেত্তি ইতালীয়রা ঐতিহ্যগতভাবেই একটু শক্ত খেতে পছন্দ করে। আর তা খেতে চাইলে অর্ডার দেবার সময় শুধু বলতে হবে, আপনি 'আল দেন্তে' খেতে চান। এই পাস্তা দাঁতে একটু একটু করে লাগবে খাবার সময়। লাজানিয়াও পছন্দ অনেকের।  

দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খেলা। ওয়াইফাই আছে।    

ডি পাপাই অ্যান্ড মিস ভ্যানেলি

একই ঠিকানায় এর অবস্থান শুধু ভিন্ন ফ্লোরে। ১০০ জন বসতে পারবে আর আছে একটি কিডস জোনও।

শিফট ইনচার্জ মনির চৌধুরী জানান, মূলত পশ্চিমা দুটি ব্রান্ডের ফ্রাঞ্চাইজি খাবারের দোকান এটি।

এখানে পিৎজা পাস্তা, চিকেন ফ্রাই প্রধান খাবার।

ক্যাফে দ্রুম

৪৯/এ সাত মসজিদ রোড

বেশ উচুতে এই রেস্তোরাঁ। সাজসজ্জায় সবুজের আধিক্য চোখ এড়ানো দায়। 

তেরো তলার উপর থেকে ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোডের ব্যস্ত দৃশ্যও দেখা যাবে এখান থেকে বেশ পরিষ্কারভাবে।

প্রায় সবগুলো টেবিলের পাশেই পাবেন টবে রাখা ছোট ছোট গাছ। বাইরের বারান্দায় মাথার উপর খোলা অংশে বসার জন্য আছে পাটের দড়ির মোড়া আর পাশে সবুজ গাছের সমারোহ।

''বন্ধুদের সঙ্গে খেতে খেতে গল্পগুজব করার মতো করেই রেস্তোরাঁটি তৈরি।” বললেন ক্যাফে দ্রুমের কর্ণধার তৃষা সামিরা।

ক্যাফে দ্রুমে কফির পাশাপাশি পানীয় হিসেবে পাবেন লেমোনেইড, জিরা পানি, কয়েক ধরনের শেইক, ফলের জুস ও চা।

এই ক্যাফের আব্দুর সবুর জানান খাবারের মধ্যে পেরি পেরি চিকেন, বার-বি-কিউ চিকেন, টি-বোন স্টেক ও সিচ্যুয়ান স্টেক বেশ জনপ্রিয়। পেরি পেরি চিকেন ৫২৫ টাকা, বার-বি-কিউ চিকেন ৩৩০ টাকা আর টি-বোন স্টেক ৭৫০ টাকা পড়বে।

গোধূলিতে খোলা অংশ বেশ মন মাতানো লাগবে।

সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। 

 

হ্যালো ধানমণ্ডি

একই বিল্ডিংয়ে অবস্থান এই রেস্তোরাঁর। এখানেও আছে ছোট একটি কিড’স জোন। রেস্তোরাঁয় বসতে পারবেন ৯০ জন।

ইতালীয়, থাই খাবার এখানে মিলবে। আছে কিছু ফাস্ট ফুডও। কিছু মেহিকান (মেক্সিকান) খাবারও পাওয়া যায় এখানে।

স্টেক পাবেন ৪২৭ টাকা থেকে ৭৫৭ টাকায়। তবে ফালুদার দাম ২৪৭ টাকা কেন তা বোঝা যায় নি!

সেট মেনু থেকে তিন পদ নিলে ২২৭ টাকা আর দুই পদ নিলে দিতে হবে ১৯৭ টাকা।

আইসক্রিম আছে ইগলুর তৈরি। 

সেট মেনুর পাশাপাশি চিকেন ও ওয়াইট সসের তৈরি পাস্তা আর ডাবল ডেকার বার্গার এখানে জনপ্রিয় বলে জানান ম্যানেজার সুজন মাহমুদ।

ফ্লেইবারস মিউজিক ক্যাফে

র‌্যাংগস কে বি স্কোয়ার, ৭ তলা, সাত মসজিদ রোড  

নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এখানে গান-বাজনার আয়োজন হয়। এখানকার আশিকুর রহমান জানান গানের ব্যবস্থা করা হয় প্রতি বৃহস্পতিবার।

ভেতরে কিছুটা আলো আঁধারি চোখে পড়ল।

রহমান জানালেন, এখানকার জনপ্রিয় খাবারের তালিকা-- গ্রিলড চিকেন ৪১৫ টাকা, মিট বল স্প্যাগেত্তি ৩৯৫ টাকা আর চাওমিন ২৯৯ টাকা।

সেট মেনু আছে পাঁচ রকমের। পাওয়া যাবে লাঞ্চ ও ডিনারে। ২৩৫ টাকা থেকে ৬৯৯ টাকা গুনতে হবে।

 

অজ

রোড ৭/এ, বাড়ি নাম্বার ৬০।

সাত মসজিদ রোড থেকে একটু ভিতরে এর অবস্থান। ঢুকতেই এক ধরনের ‘সৌন্দর্য’ চোখে পড়বে।

গাছপালা প্রচুর!

ম্যানেজার কাওসার আহমেদ জানান, অজর শুরু ২০১০ সাল থেকে। ভেতরে সবুজের আবহ যেমন আছে তেমনি এক ধরনের জাহাজিভাব আছে। বাথরুমের ভেতরের সেটআপ এবং লাইট দেখলে সেই ‘কুহক’ আরও পোক্ত হবে!

চিকের ব্যবহার আছে কয়েকভাবে। আবার বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি গ্রামাঞ্চলের মাছ ধরার যন্ত্র 'খলুই'ও ঝোলানো আছে ২-৩ টি!

আর নিচ তলায় বসলে দেয়ালের আলোর অবস্থান নিয়ে 'খেলা'টাও বেশ মনে লাগতে পারে। ব্যবহৃত স্টিলের তৈরি কিছু শিল্পকর্ম ঝুলছে উপর থেকে।

খালেদ মাহমুদ এই অন্দর ও বাহির সাজানোর চমৎকার কাজটি করেছেন বলে জানা গেল।

নিচে ও দোতলায় বসার ব্যবস্থা আছে এখানে। যেখানেই বসবেন আবহ পাবেন অন্যখান থেকে ভিন্ন।

এখানে অতিথিরা বেশি পছন্দ করেন পাস্তা, নাসি গোরেং, লেমন গার্লিক চিকেনের মতো খাবার। দাম যথাক্রমে ২৮৯, ১৯৩ ও ৪১৯ টাকা।

আর পানীয়ের নামে রয়েছে বেশ মজা! 'গোলাপি এখন গ্লাসে' (তরমুজ) অবশ্য পাওয়া যাবে শুধু গরমকালে। তবে 'শর্বরী শরবত' মিলবে যখন তখন। এককালের চিত্র নায়িকার নামেই মনে হল রাখা হয়েছে এই নাম।

 

গ্লোরিয়া জিন'স কফিজ

৬৭, জিএইচ হাইটস, সাতমসজিদ রোড

আউটলেট ম্যানেজার শেখ সাদি জানান, চলতি বছর ডিসেম্বরের ১ তারিখে এই শাখা খুলেছে অস্ট্রেলিয়ার কফি ব্র্যান্ড।

৬৭ জনের সাংকুলান হবে এখানে। সকাল ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকছে এই কফি শপ। চাহিদা বাড়লে আরও রাত পর্যন্ত এই শপ খোলা রাখার চিন্তা ভাবনা চলছে বলে জানা গেল।

বিগ ব্রেকফাস্ট মিলবে সকালে। আর সারাদিন-রাত জুড়ে কফি আর হালকা স্ন্যাকসের পাশাপাশি পাস্তা, সালাদ এমনকি বার্গারও।

এসপ্রেসো ১৮০ টাকা, ক্যাপুচিনো আর লাত্তে ১৭৪ টাকা। এখানকার বিশেষ আকর্ষণ হল 'লা মার্জোকো'র কফি মেশিন। এটি পৃথিবীর অন্যতম সেরা কফি তৈরির মেশিন হিসেবে পরিচিতি বলে জানান গ্লোরিয়া জিন’সের ব্যবস্থাপক মোরশেদ এলাহী।

পাস্তা ৪৯৫ টাকা থেকে ৭৯৮ টাকা পর্যন্ত।

ছবিঃ মামুনুর রশীদ শিশির।