নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আদ্যোপান্ত

জেনে নিন এই আইনের আওতায় নির্যাতন বলতে আসলে কোন কোন বিষয়গুলো বোঝানো হয়েছে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2014, 11:13 AM
Updated : 21 Jan 2015, 03:28 PM

সম্প্রতি চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপী’ ক্রিকেটার রুবেল বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে আলোচিত হয়েছেন। এই আইন নারী ও শিশুকে নির্যাতনে হাত থেকে বাঁচাতে বেশ কার্যকর।

আবার হয়রানির উদ্দেশ্যে কেউ যদি এই আইন ব্যবহার করেন তাহলে সেটার প্রতিকারই বা কী?

এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট, ব্যারিস্টার অ্যাট ল' রুমিন ফারহানা।

নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধগুলো কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে বেশি কার্যকর বিধান সম্বলিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ নামে এই আইন প্রণয়ন করা হয়। পরে এই আইনের কিছু ধারা সংশোধন করে ২০০৩ সালে প্রণীত হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন ২০০৩।

এই আইন দিয়ে যে অপরাধগুলো বিচার নিশ্চিত করা হয়ছে তারমধ্যে অন্যতম হল যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, নারী বা শিশু পাচার, নারী ও শিশু অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত মৃত্যু, নারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা, যৌন পীড়ন, ভিক্ষাবৃত্তি ইত্যাদির উদ্দেশ্যে শিশুর অঙ্গহানী ইত্যাদি।

যেহেতু এই আইনের অধীন স্বীকৃত অপরাধগুলো শিকার নারী ও শিশুর সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তার বিষয়টি সরাসরি জরিত তাই এই আইনে বর্ণিত অপরাধের শিকার হয়েছেন এ ধরনের নারী বা শিশুর ব্যাপারে সংঘটিত অপরাধ বা সেই সম্পর্কিত আইগত কার্যধারার সংবাদ বা তথ্য বা নাম-ঠিকানা বা অন্য কোন তথ্য কোন সংবাদপত্রে বা অন্য কোন সংবাদ মাধ্যমে এমনভাবে প্রকাশ করা যাবে না, যাতে সেই নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ পায়।

এই আইন ভেঙে যদি কোনও সংবাদপত্র, টিভি বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ভিকটিম নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ করে তাহলে দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের প্রত্যেকে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ডে বা অনুর্ধ এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

ব্যরিস্টার রুমিন ফারফানা

অনেক সময় দেখা যায় পূর্ব শক্রতার জের ধরে অনেকে এই আইনের অধীনে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। যদি দেখা যায় কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা দায়ের কারেছেন তাহলে অভিযোগ দায়েরকরী ব্যক্তি এবং যিনি অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন উভয়ই অনধিক সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং সেই সঙ্গে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইবুনাল সংঘঠিত অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও মামলার বিচার করতে পারবে।

অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি পুলিশ বা অন্য কোন ব্যক্তির মাধ্যমে অপরাধ সংগঠনের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে তাহলে ধরা পড়ার ১৫ দিনের মধ্যে অপরাধ তদন্ত শেষ করতে হবে।

আর যদি অপরাধি ব্যক্তিকে হাতেনাতে ধরা না যায় তাহলে তদন্তের আদেশ প্রাপ্তির তারিখ হতে পরবর্তী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

যদি কোন কারণে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করা না যায় তাহলে তদন্তকারী কার্মকর্তা কারণ লিপিবদ্ধ করে অতিরিক্ত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে অপরাধের তদন্ত কাজ সম্পন্ন করবেন।

এর মধ্যেও যদি তদন্ত কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব না হয় তাহলে তদন্তের আদেশ প্রদানকারী ট্রাইবুনাল উক্ত অপরাধের তদন্ত ভার অন্য কোন কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করতে পারবেন। অর্থাৎ এই আইনের অধীন মামলা একটি ‘স্পেশাল ট্রায়াল’ বা দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য বলা আছে।

জামিনের বিষয়ে মনে রাখা প্রয়োজন যে, এই আইনের অধিন সকল অপরাধ অ-জামিনযোগ্য (non bailable) হবে।

এই আইনের অধিনে অভিযুক্ত বা শাস্তিযোগ্য কোন ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দিতে হলে অভিযোগকারী পক্ষকে অবশ্যই শুনানীর সুযোগ দিতে হবে। অভিযোগকারী পক্ষকে শুনানীর সুযোগ না দিয়ে জামিন দেওয়া যাবে না।

এছাড়াও আদালত যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে যার বিরুদ্ধ অভিযোগ আনা হয়েছে তার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার যুক্তসংযত কারণ আছে তাহলেও জামিন দেওয়া যাবে না।

তবে নারী বা শিশু বা শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ট্রাইবুনাল জামিন মঞ্জুর করতে পারে।

এই আইনে এখন জামিনের বিধানের কঠোরতা কিছুটা শিথিল করে উপযুক্ত ক্ষেত্রে শর্তপূরণ সাপেক্ষে কিছু অভিযুক্তকে জামিন মঞ্জুরীর এখতিয়ার ট্রাইবুনালকে প্রদান করা হয়েছে।

বাদীপক্ষকে শুনানীর পর যদি অভিযুক্ত নারী, শিশু, বৃদ্ধ, রুগ্ন বা প্রতিবন্ধি হয় তাহলে ট্রাইবুনাল তাকে জামিনে মুক্তি দিতে পারবে।

ট্রাইবুনাল যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রাথমিক বিবেচনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার জোড়ালো সম্ভাবনা নাই বা জামিন দেওয়া হলে ন্যায় বিচার বিঘ্নিত হবে না, তাহলে কারণ উল্লেখ করে তাকে জামিনে মুক্তি দিতে পারবে।

সর্বশেষ সংশোধনীর ফলে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব না হলে মূল অভিযুক্তকে জামিনে মুক্তি দেওয়া যাবে না।

ট্রাইবুনাল কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ, রায় বা দণ্ড দ্বারা সংক্ষুব্ধ পক্ষ, আদেশ, রায় বা দণ্ডের তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করতে পারবে।