ভেনি ভিডি ভিচি

‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’— একটি যুদ্ধ শেষে রোমান সম্রাট এভাবেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছিলেন ল্যাটিন ভাষায়। আর একঝাঁক তরুণ ও টগবগে উদ্যোক্তা উত্তরায় একই নামে রেস্তোরাঁ খুললেন।

মিথুন বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2014, 09:56 AM
Updated : 21 Jan 2015, 03:22 PM

এই তরুণদের মধ্যে কয়েকজনের রয়েছে বিশেষ পরিচয়, সে কথায় পরে আসা যাক।

শীতকাল শুরুর আগে আগে এক দুপুরে দিনের বেলা ভেতরে ঢুকে দেখা গেল হালকা আলোতে চলছে কয়েকেজনের পেটপূজা। একদিকে লাল দেয়াল অন্যদিকে সাদা।

চেয়ার টেবিল ছিমছাম সাজানো। খাবার সরবরাহকারীরা যে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত সেটা রেস্তোরাঁর সবচাইতে বড় নিন্দুকও স্বীকার করবেন।

শেফ কবির হোসেন এখানে আছেন এক্সিকিউটিভ শেফ ও অন্যতম কর্ণধার হিসাবে। তিনি কাজ করেছেন ইতালিতে বহুবছর।

পাঠক ‍নিশ্চই জানবেন ইতালিতে বহু বাংলাদেশি আছেন। আর এদের কেউ কেউ সেখানে শেফ হিসাবেও কাজ করেন। তাই অনেক বাংলাদেশি খাঁটি ইতালীয় রান্নায় হাত যে বেশ পাঁকিয়েছেন সেটা বোধ হয় অনুমেয়।

কবির হোসেন তাদের মতোই একজন। তবে তিনি শুধুই ‘গাইতে গাইতে গায়েন’ নন, অন্যদের মতো শুধু রেস্তোরাঁয় কাজ না শিখে নিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা।

তার দাবি ২০ বছর কাজে করেছেন ইতালিতে। তার পরের দাবিটি আবার বেশ সাহসী বলা চলে!

তিনি বলেন, “রোমে কাজ করেছি ইল কনভিভিও, অ্যাল চেপ্পোর মতো নামী রেস্তোরাঁয়।”

কথার ফাঁকে জানান ‘ইল কনভিভিও’ রেস্তোরাঁর নামী শেফ অ্যাঞ্জেলো ত্রইয়ানির মতো শেফের সঙ্গে কাজ করেছেন। ত্রইয়ানির রেস্তোরাঁ নাকি মিচেলিন স্টার পেয়েছিল ১৯৯৩ সালে।

দ্বিতীয় শেফ রিয়াজ খানও ইতালিতে কাজ করেছেন প্রায় ৮ বছর।

ম্যানেজিং ডিরেক্টর জিশান খুরশিদ মজুমদার ও শেফ হোসেন জানান, এই রেস্তোরাঁয় ব্যবহৃত সব চিজ আনা হচ্ছে খোদ ইতালি থেকে। হোসেনের ইতালিতে কর্মঅভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে বেশ সহায়ক ভূমিকা রেখেছে তা বোধ হয় অনুমেয়।

গরগোনজোলা, রিকোত্তো, পেকোরিনো, পারমেজানোর মতো চিজ উপকরণ হিসেবে এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে। বুফালা নামক বিশেষ ধরনের মোৎজারেল্লা আমদানি করার চেষ্টাও এরা করছেন বলে জানালেন।

এবার আসা যাক টগবগে তরুণ উদ্যোক্তাদের কথায়। জানা গেল এদের দুতিনজন বাংলাদেশে টেক জায়ান্ট গুগলের বিজনেস পার্টনার হিসাবে কাজ করছেন।

এই রেস্তোরাঁর একটি বিশেষ দিক হল সব অতিথিই প্রবেশের মুখে এর রসুইখানা ও তার কর্মকাণ্ড দেখতে পাবেন। আর ভেতরটা যে বেশ ঝকঝকে তা বাইরে থেকে টের পাওয়াটা কঠিন না।

রান্নাঘরের ভেতরে ঢুকলে মন ভালো হয়ে যাওয়ার জোগাড়! বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ভাবতেই পারেন, বিদেশে কাজ করা দুইজন শেফ যেখানে আছে তার বুঝি সবকিছুই হবে বিলাতি! ভুল একেবারেই ভুল! পুরো স্টিলের কাজগুলো দেশের চট্টগ্রামে করা! দেশ বোধ হয় সত্যি এগিয়ে যাচ্ছে!

‘ব্রিক ওভেন’ করা হয়েছে রেস্তোরাঁর বাইরে গা লাগোয়া জায়গায়। জানা গেল খুব শিগগিরই পিৎজা এখান থেকেই বানান হবে।

ফোকাচ্চা-সহ বেশ কিছু ইতালীয় রুটি এখানে মিলবে খাবারের সঙ্গে।

অন্যতম কর্ণধার আফফান মাহমুদ বলেন, “শুধু মাত্র পিৎজা আর পাস্তার বাইরে ইতালিতে আরও চমৎকার যে সব খাবার পাওয়া যায় তাও আমাদের মেন্যুতে রাখার চেষ্টা করেছি।”

তাই এখানে চাইলে মিলবে বিফের কিছু স্টেক, যেমন রোজ্জিনি বা তাগলিয়াতা। মুরগির ডিশও আছে বেশ কিছু।

আর চিকেন লিভার এখানে তৈরি হয় ভেনিস শহরের স্টাইলে। বাঙালির 'কলিজা খাওয়ার' অভ্যাস তো আর নতুন কিছু না! তাই আমাদের জিভে এই কলিজা খেতে বেশ লাগবে বলাই যায়।

ভাতে-বাঙালির চিন্তা নেই, এখানে আছে রিজোত্তো, তাও আবার কুমড়ার!

পিৎজা আছে ১২ রকমের। আকার ১২ ইঞ্চি। সাড়ে ৯শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ৪শ’ ৫০ টাকা। ক্লাসিক মারগেরিতা যেমন আছে তেমন আছে চার চিজের কোয়াত্রো ফরমাজ্জি।

আছে কফি আর ইতালীর স্বর্গীয় মিঠাই তিরামিসু।

১২০ জন বসতে পারবেন এইখানে। খোলা থাকে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।

২০ নভেম্বর রেস্তোরাঁটি যাত্রা শুরু করেছে। ঢাকায় খাঁটি ইতালীয় স্বাদের খাবার খেতে পারাটা খুব যে কষ্টকর তা কিন্তু নয়। আর এরই সর্বশেষ সংজোযন এই রেস্তোরাঁ।

এখন দেখার বিষয় ঢাকার ভোজন রসিকদের মন কতটা জয় করতে পারে এই 'ভেনি ভিডি ভিচি'! ঠিকানা: বাড়ি ৪৮, রোড ৪, সেক্টর ৩, উত্তরা, ঢাকা।