সৈকতে ঘুড়ি উৎসব

বালুকাবেলায় হিমেল হাওয়ায় নীল আকাশে শত শত রঙিন ঘুড়ি! এই দৃশ্য দেখতে হলে যেতে হবে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2014, 05:50 AM
Updated : 21 Jan 2015, 03:19 PM

বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের আয়োজনে এই সৈকতে এখন বছরের দুটি দিন বসে দেশের সবচেয়ে বড় ঘুড়ি উৎসব। ‘বনের বাঘ থাকুক বনে, ঘুড়ি উড়ুক নীল গগনে’ এই স্লোগান নিয়ে এবারের ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হবে ৮ ও ৯ জানুয়ারি।

ঘুড়ি উৎসবের মূল আয়োজন হয় কক্সবাজারের লাবনী ও সুগন্ধা সমুদ্র সৈকতে। নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ উৎসব। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আকাশে এই দুই দিন উড়ে বেড়ায় রংবেরংয়ের হাজার ঘুড়ি।

উৎসবের প্রথম দিন সকালে সৈকতে চলে ঘুড়ি ওড়ানোর মহড়া। উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় এদিন বিকেলে। বিশেষ ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মহা ঘুড়ি ও পুষ্প ঘুড়ি উড্ডয়নের মাধ্যমে উৎসবের আনুষ্ঠানিক শুরু হবে।

উৎসবের মূল আকর্ষণ বেলাভূমিতে ঘুড়ি উড়ানো। প্রথম দিনে সৈকতের আকাশে ওড়ানো হবে নানান ধরনের ঘুড়ি। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— সহস্র ঘুড়ি, বড় আকারের পকেট ঘুড়ি, ড্রাগন ঘুড়ি, ট্রেন ঘুড়ি, সিরিজ ঘুড়ি, স্ট্যান্ড ঘুড়ি, বক্স ঘুড়ি। সূর্যাস্তের পর সৈকতে প্রজ্জ্বলন করা হবে মঙ্গল প্রদীপ, আকাশে ওড়ানো হবে ফানুস। দাহ্য করা হবে প্রকৃতি বৈরী দানবের প্রতিকৃতি। রাতেও বাদ থাকবে না ঘুড়ি ওড়ানো। অন্ধাকার আকাশে উড়ানো হবে আলোকিত ঘুড়ি।  

উৎসবের দ্বিতীয় দিন সকালে প্রস্তুতি পর্ব শেষে চলবে ঘুড়ি কাটাকাটি প্রতিযোগিতা। এদিন বিকেলে থাকবে মহিলা ও শিশুদের ঘুড়ি উড্ডয়ন প্রতিযোগিতা। সবশেষে সাংস্কৃতিক উৎসব আর পুরষ্কার বিতরণ।

আয়োজকদের একজন আল মামুন মৃধা জানালেন উৎসবটি সবার জন্যই উম্মুক্ত। তবে আয়োজক দলের সঙ্গে ঢাকা থেকে গিয়ে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে চাইলে আগে থেকে যোগাযোগ করতে হবে। যোগাযোগের ঠিকানা, বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন, ১, সিদ্ধেশ্বরী লেইন, ঢাকা। ফোন- ০২-৮৩৫১৭৩৬।

এখন ভ্রমণ মৌসুম। এ সময়ে তাই কক্সবাজার গেলে সৈকত ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে অংশ নিতে পারেন ব্যতিক্রমী এ উৎসবে। এছাড়া বেড়াতে পারেন হিমছড়ি, ইনানী, রামু, মহেশখালী কিংবা সোনাদিয়া দ্বীপে।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে পারেন সড়ক ও আকাশপথে। ঢাকা থেকে সরসরি কক্সবাজার যায় সোহাগ পরিবহন, টি আর ট্রাভেলস, গ্রীন লাইন পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সেন্টমার্টিন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহনের এসি বাস।

ভাড়া ১ হাজার ৭শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকা।

এছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক, ঈগল ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসের ভাড়া সাড়ে ছয়শ থেকে ৮শ’ টাকা।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান নিয়মিত ওড়ে কক্সবাজারের পথে।

কোথায় থাকবেন

কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। ধরণ অনুযায়ী এসব হোটেলের প্রতি দিনের রুম ভাড়া ১ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। কক্সবাজারের সর্বাধুনিক হোটেল হল কলাতলী সড়কে ওশেন প্যারাডাইস এবং লং বিচ, সৈকত সড়কে কক্স টুডে এবং সি-গাল।

এছাড়া কক্সবাজার সৈকতের কাছাকাছি অন্যান্য ভালো মানের হোটেল হল সুগন্ধা সৈকতে হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইস, লাবনী সৈকতে হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল মিশুক ইত্যাদি।

কলাতলী সড়কে হোটেল বিচ ভিউ, নিটল বে রিসোর্ট, কোরাল রিফ ইত্যাদি।

সৈকত ভ্রমণে প্রয়োজনীয় তথ্য

সমুদ্রে নামার আগে জোয়ার ভাটার তথ্য জেনে নিন। সৈকতে টাঙানো সবুজ পতাকা জোয়ারের নির্দেশ করে। এই সময়ে সমুদ্রে নামা নিরাপদ। ভাটার সময় লাল পতাকা টাঙানো থাকে। এসময়ে সমুদ্রে নামা যাবে না।

একই সঙ্গে একটু উপর নিচ করে দুটি লাল পতাকা টাঙানোর জায়গা বরাবর চোরাবালি কিংবা চোরা খাল নির্দেশ করে।

সাঁতার জানা থাকলেও সমুদ্রে নামার সময় লাইফ জ্যাকেট কিংবা টিউব নিয়ে নিন। সমুদ্রে নামতে ট্রাউজার কিংবা হালকা পোশাক পরিধান করুন।

লুঙ্গি ও শাড়িজাতীয় কাপড় পড়ে সৈকতে নামবেন না। ময়লা আবর্জনা বিশেষ করে কোন প্লাস্টিকজাতীয় দ্রব্য সৈকতে ফেলবেন না।