পাখি সমাবেশ

পাখির সঙ্গে বাঙালির রং-রসের সম্পর্কটা বহু পুরানো। প্রবাদ-প্রবচনে যেমন আছে পাখি, তেমনি ঘরের কোণে কিংবা খাবার টেবিলেও আছে পাখি।

শরীফ আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2014, 01:09 PM
Updated : 21 Jan 2015, 03:10 PM

আর শান্তির পায়রা তো সারা বিশ্বের যুদ্ধাংদেহী আর নিস্তরঙ্গ মানুষকে এক কাতারে নিয়ে আসতে পারে, সেখানে আর বাঙালিকে আলাদাভাবে নিজেকে জাহির করতে হয় না।

তবে এই যে ধরুন, পরিযায়ী বা অতিথি পাখির কথা। কি এক অমোঘ টানে মাইলের পর মাইল উড়ে, অবশ্যই বাধা-বিপত্তি পেড়িয়ে, যা কিনা এদেশে এসেও পোহাতে হয়, তারা বাংলাদেশে ছুটে আসে! আবহাওয়া তো অবশ্যই একটা কারণ, তারপরও কেন জানি মনে হয়, ঠিকুজি খুঁজলেও হয়তোবা কোন এক আদি ঐকান্তিক যোগাযোগের সুত্র পাওয়া যেতে পারে।

সে যাই হোক, পাখি যে এখন আর তেমন একটা নেই এদেশে, সে কথা আর সভা-সমাবেশ করে বলতে হবে না। এমনিতেই মানুষ তা জানে। আর দেশের বাইরে তো আকসার মানুষ এ নিয়ে কথা বলে। তারপরও পাখি দেখবার সুযোগ পেলে কেইবা তা ছাড়তে চায়, তার উপর যখন নেই নেই রব উঠছে চারধারে।

এমনি এক পাখি সমাবেশ ঘটেছে ঢাকার ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারিতে। নাহ, বড়সড় জলাধার কিংবা শতবর্ষী কোন বটবৃক্ষ নেই সেথায়। তবে গ্যালারিতে আছে ৫১টি অনবদ্য ফ্রেম। যেই ফ্রেমে ‘আপাত’ বন্দি আমাদের পছন্দের কিছু পাখি। আর খোলা আকাশে উড়ে-ঘুরে বেড়ানো এইসব পাখিকে ফ্রেমবন্দি করেছেন ‘বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব’য়ের আলোকচিত্রীরা।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের জন্মেরও প্রায় ২০ বছর পেরুলেও, দলগত এরকম আয়োজনে কখনও দেখা যায়নি তাদের। বরং প্রতিবছর শীতকালে অনেকটা নিয়ম করে পাখি দেখতে যাওয়া, পাখি শুমারির সঙ্গে যুক্ত থাকা কিংবা প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আড্ডা দেওয়াটাই ছিল রীতিসিদ্ধ কাজ। এমনিতে ক্লাবের সদস্যদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত বা দলগতভাবে অন্যান্য আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে থাকলেও, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রযোজনায় আয়োজিত প্রথম আলোকচিত্র প্রদর্শনী এটি।

মোট একুশজন আলোকচিত্রীর ছবি দেখতে পাওয়া যাবে এই প্রদর্শনীতে। অবশ্য দেখতে না বলে উপভোগ বলাটাই বরং বেশি ভালো হবে মনে হয়। যে পাখির সঙ্গে অন্তহীন যাত্রাকে মিলিয়ে বাউন্ডুলে গান আছে-
‘খাচার ভিতর অচিন পাখি, কেমনে আসে যায়, তারে ধরতে পারলে মন বেড়ি দিতাম পাখির পায়।’

সেই পাখিকেই এবার প্রদর্শনীতে দেখা যাবে অনন্য সব ভঙ্গিমায়। আর কত রকমের পাখি এখানে। অন্তত আট-প্রৌঢ়ে শহুরে জীবনযাপন করলে এত জাতের পাখি যে কারও দেখা সম্ভব নয় তা জানালেন, প্রদর্শনী দেখতে আসা লুনা ফেরদৌসী।

যেহেতু ছবি নির্বাচনে নান্দনিকতাকেই প্রাধাণ্য দেয়া হয়েছে, সুতরাং এই কথা নির্ধিদায় বলাই যায়, না দেখলেও পস্তাবেন। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুগে সবচেয়ে দুর্যোগ সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে, আমাদের নিজস্বতা হারিয়ে ফেলবার আশংকা যে আমাদের ক্রমেই গ্রাস করে নিচ্ছে।

প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘পাখির দেশ’। আসলেই কি তাই? বাংলাদেশ কি আসলেই পাখির দেশ? সে প্রশ্নের উত্তর হয়ত আজকের দিনে মেলা ভার, তাই বলে যাও যৎসামান্য পাখি এখনও এই বৈরি পরিবেশে টিকে আছে আমাদের দেশে, তা যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই। ক্লাবের ট্রেজারার ওমর শাহাদাতের কথাতেও সেই সুরই প্রতিধ্বনিত হল।

“প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য হল সবাইকে আমাদের পাখি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। এছাড়া এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে আমরা সবাইকে পাখি সংরক্ষণের বার্তাও পৌছে দিতে চাই।”

নান্দনিকতার সাহায্য দিয়ে এমন আহ্বান, ক’জনাই বা জানায়। তাই নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। প্রদর্শনী দেখবার পাশাপাশি কেউ যদি, এমনিতেও ক্লাবের সদস্য হতে কিংবা সময় কাটাতে যেতে চান যে ব্যাপারেও তারা যথেষ্ঠই দিলখোলা। তবে সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ শর্ত একটাই, আপনাকে পাখির প্রেমে মজতে হবে।      

শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী শেষ হল ৮ ডিসেম্বর, সোমবার।

ছবি: ফায়হাম ইবনে শরীফ