ঢাকায় রোমের পিৎজা

দূরে নয়, ঘরের বসেই পাবেন ইতালীয়দের হাতে তৈরি পিৎজা

মিথুন বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2014, 03:57 PM
Updated : 22 Nov 2014, 11:26 AM

ইতালির ফেররি পরিবারের এক সময় ব্যবসা ছিল পাকিস্তানের করাচিতে। মূলত টেক্সটাইলের ব্যবসা তাদের ইউরোপ থেকে টেনে এনেছিল এশিয়াতে। এমনকি এই ব্যবসার কারণেই এই পরিবার একসময় থিতু হয়েছিল তাইওয়ানেও! এমনটাই জানালেন কাতেরিনা ডন।

আর এরই ধারাবাহিকতায় ফেররি পরিবারের বাংলাদেশে আগমন নব্বইয়ের দশকে। এই পরিবারের সদস্য কাতেরিনা বলেন তার নিজের পড়াশোনাও বাংলাদেশেই হয়েছে।

রোম শহরকে ইতালির রাজধানী হিসেবে আমরা যে চিনি তা কিন্তু ইংরেজি ভাষায়। ইতালীয় ভাষায় এই ‘ইটারনাল সিটি’কে ডাকা হয়- রোমা নামে। আর তাই বুঝতে পারছেন কেন এর নাম পিৎজা রোমা।

ছবি: পিৎজা রোমা ও তানজিল আহমেদ জনি

ছবি: পিৎজা রোমা ও তানজিল আহমেদ জনি

এই ফেররি পরিবারের আরেক সদস্য ২৪ বছরের তরুণ ফিলিপ্পো। মাত্রই ৩-৪ মাস আগে ঢাকায় এসেছেন। বড় হয়েছেন প্রিয় জন্মভূমি রোমেই। তবে বয়সে তরুণ হলেও আড়াই বছর কাজ করেছেন রোমের টোটো ১৯২২ নামের এক নামকরা পিৎজেরিয়াতে (পিৎজার রেস্তোরাঁ)। প্রায় শতবর্ষের এই পিৎজেরিয়ার অবস্থান রোম শহরের স্প্যানিশ স্টেপসের সন্নিকটে।

তো এই পিৎজেরিয়াতেই কাজ ছেড়ে দিয়েই ফিলিপ্পো সোজা ঢুকে পড়েছেন পিৎজা রোমার রসুইঘরে। বেশ হাসিখুশি তরুণ এই ফিলিপ্পো, কথা বলার সময় ‘চিরাচরিত’ ইতালীয় ভঙ্গিতে হাত-পা নেড়েই কথা বলেন! এ এস রোমা ফুটবল দলেরও বড় সমর্থক ফিলিপ্পো।

আর এটাও জানাতে ভুললেন না যে, ঢাকাতে যতই ভালো লাগুক-- প্রিয় শহর প্রায়ই তার মনে পড়ে যায়।

তো মাতৃভূমির প্রতি যার এত টান তার হাতের পিৎজাতেও ওই টান অটুট থাকবে এই আশা তো আর দোষের কিছু নয়।

‘পিৎজা বানাতে গেলে বিশেষ একধরনের ‘প্যাশন’ বা ভালো লাগাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ বলেন ফিলিপ্পো। কারণ পিৎজা তৈরি করতে যে উপাদানগুলি ব্যবহৃত হয় তা অন্তত ইতালিতে খুব বেশি দামি বা দুর্লভ কিছু না। আর তাছাড়া রোমান ঘরানার পিৎজা হয় খুবই পাতলা গোছের। অনেকটা আমাদের চাপাতির থেকে একটু মোটা বলা যায়।

‘আর এই পিৎজাগুলোতে আমেরিকান ঘরানায় অনুপ্রাণিত ‘গোছা গোছা’ করে টপিং দেয়া হয় না।’ এটিও জানালেন পিৎজা রোমার এই শেফ। সুতরাং সহজাত সুস্বাদু এই মন্ত্রটাই বেরিয়ে আসবে প্যাশন আর উপকরণের ব্যবহারে, ফিলিপ্পোর এটাই মোদ্দাকথা। আর কিছু ‘গোপন’ বিষয়তো আছেই তা কী আর এই তরুণ খুলে বলবেন?!      

এখানে পিৎজা মিলবে সবমিলিয়ে প্রায় ১৪-১৫ ধরনের। ক্ল্যাসিক মার্গেরিতা আবার এখানে বুফালা নামক চিজের সঙ্গেও পাওয়া যাবে। এই চিজ হল বিশেষ মোৎজারেল্লা, যা তৈরি হয় জলমহিষের দুধ থেকে। আর তাতে ক্রিমের পরিমাণ বেশি থাকে। এই চিজ নিয়ে আসা হয় খোদ ইতালি থেকে।

বাজিল বা টমেটোর মতো পচনশীল উপকরণ চাইলেই তো আর ইতালি থেকে নিয়ে আসা যায় না; আর তাই পিৎজা রোমা কতৃপক্ষ বাংলাদেশে থাকবার জ্ঞান ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন। দেশের কিছু অঞ্চলে ব্যক্তিগত ও কিছু বেসরকারি উদ্যোগে বাজিল বা রকেটের মতো বিদেশি সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। আর তাই এই ‘ফ্রেশ’ সবজিগুলোই ব্যবহার করা হয় এখানে।

বাজিলের গন্ধ শুঁকে ইতালির বা ইউরোপের তুলনায় ঝাঁজ বেশি লাগল বলে জানালে ফিলিপ্পো বলেন, ‘এটার গন্ধ কিছুটা আলাদা তবে এই সবজির সতেজতা কিন্তু পিৎজাকে স্বাদ এনে দেয়।’

আলুর তৈরি ‘পাতাতে’ পিৎজাও এখানে মিলছে। তাছাড়াও আছে কোয়াত্রো ফরমাজ্জি অর্থাৎ চার রকমের চিজের তৈরি পিৎজা। মোৎজারেল্লা, পারমেজানো, ফেতা আর গরগোনজোলা চিজ দিয়ে।

নাপোলি অঞ্চলের পিৎজা নাপোলেতানাও চাইলেই মিলবে।

আর বিশেষ একটি জিনিস হল এখানকার ‘সান ড্রাইড’ টমেটো আসে ইতালি থেকে। একবার যিনি ইতালিয়ান টমেটো খেয়েছেন, তিনি এর স্বাদ জেনেছেন! আর ইতালি থেকে নিয়ে আসা সান ড্রাইড টমেটোও কিন্তু পিৎজাতে ব্যবহৃত হয়। মেদিতেরানিও পিৎজায় স্বাদ আসবে টমেটো সস, পালংশাক, ফেতা, পারমেজান আর মোৎজারেল্লা চিজের।

এছাড়াও টুনা, মাশরুম, অ্যানচভি, বিফ সালামি ইত্যাদি তো আছেই। 

আর দেশি জিভের জন্য আছে তান্দুরি পিৎজাও!    

পিৎজা রোমা কিন্তু শুধু রোমের স্বাদের পিৎজাই বিক্রি করে না। এখানে পানিনিও বিক্রি হয়, সহজ ভাষায় পানিনিকে ইতালিয়ান ঘরানার স্যান্ডউইচ বলা যেতে পারে।

৪ রকমের পানিনি পাওয়া যাবে। টুনা ও টমেটো, চিকেন, পেপেরনি আর পারমেজিয়ানো চিজের স্বাদের পানিনি মিলবে এখানে। বাইরে বিশেষ ইতালিয়ান ঘরানার ব্রেডের সঙ্গে গ্রিল্ড চিকেন বা দারুন নরম ও গ্রিল্ড ক্যাপসিকাম খেতে বেশ মজা এতে কোন সন্দেহ থাকার কারণ নেই। 

আর তাই রোমানদের হাতে বানানো এই পিৎজা খেতে চাইলে চলে যেতে পারেন ফেইসবুকে! আর ইতালিয়ান খাবারের স্বাদকে তো অনেকেই বলেন ‘সিনফুল’!    

ভালো কথা, এই পিৎজেরিয়া বিক্রির ধরন কিন্তু সম্পূর্ণ ‘ডিজিটাল’ মাধ্যমে। মানে এদের কোনো রেস্তোরাঁ নেই। পুরো বিকিকিনিই চলে ফেইসবুকের মাধ্যমে, অর্ডার দিলে মোটর সাইকেলে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়। খেতে চাইলে যেতে হবে এই পেইজে www.facebook.com/PizzaRomaBD

দুই সাইজের পিৎজা পাওয়া যায় এখানে। রেগুলারের দাম ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকা। আর বড় সাইজের জন্য গুনতে হবে ৯০০ থেকে ১৩০০ টাকা।

পানিনির দাম ৫০০ টাকা।

অর্ডার দেওয়া যাবে সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।  

খাবারের ডেলিভারি এখন, বনেদি এলাকা বলে পরিচিত, গুলশান ১-২, বনানী, বারিধারা ও বারিধারা ডিওএইচএস, নিকেতন, মহাখালি ডিওএইচএস ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাতেই সীমাবদ্ধ।   

ছবি: পিৎজা রোমা ও তানজিল আহমেদ জনি