অন্যতম কর্ণধার কামরুল আহসান হাবীব টেলিফোনে চট্টগ্রাম থেকে জানালেন, ১৯৯৭ সাল থেকেই রেস্তোরাঁর ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন।
বিভিন্ন কাজে এক সময় ভারতে যাওয়া হতো, আর সেখান থেকেই ভারতীয় খাবারের প্রতি একধরনের ভালো লাগা জন্মায়, কথার ফাঁকে জানান হাবীব।
বনানীর ১০ নম্বর রোডের ৬৮ নম্বর বাড়িতে অবস্থান এই রেস্তোরাঁর। পোশাকি নাম ‘হান্ডি-ইন্ডিয়ান বিস্ত্রো’।
এই বিস্ত্রো শব্দটির ব্যবহার কিছুটা কৌতুহল জাগায়। অক্সফোর্ডের আভিধানিক অর্থে এই শব্দটির মানে ‘ছোট ও অনাড়ম্বর রেস্তোরাঁ’।
তবে ‘হান্ডি’ মোটেই ছোট নয়। ২৫০ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। রেস্তোরাঁর ভেতরটা বেশ ‘ইনফরমাল’, অর্থাৎ সবাইকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি বোঝা যায়।
দুই তলা রেস্তোরাঁর উপরের তলায় রসুই ঘরের কর্মকাণ্ড।
অন্দরসজ্জায় বিশেষত্য কিছু চোখে না পড়লেও কাচের ভেতর থেকে বাইরের অংশের সবুজাভ ভাবটি কিছুটা হলেও চোখে প্রশান্তি দেবে।
এখানে ম্যানেজার হিসাবে আছেন আমজাদ হোসেন। তার রয়েছে রেস্তোরাঁ কাজে ৩২ বছরের অভিজ্ঞতা! রয়েছে হোটেল ম্যানেজমেন্টের ওপর পড়াশোনাও।
এবার আসা যাক আসল জায়গায়, অর্থাৎ খাবারের কথায়। মেন্যু হাতে নিলে মনে হবে মাঝারি সাইজের একখানা বই বোধহয় পড়তে দেয়া হলো! পাতা ওল্টালেই অবশ্য এর শানে নুযুলটা বোঝা যাবে। খাবারের পদের সংখ্যা দুইশর কম না।
খাবারে ‘খাঁটি’ স্বাদ রাখতেই দুই জন শেফ আনা হয়েছে ভারত থেকে। সবমিলিয়ে ২৫ জনের বহর রসুইঘর সামলান।
স্টার্টারে মাসালা পাপড় ভালোই লাগার কথা। পরিবেশনের ও রংয়ের বাহারের কারণে চোখেও বেশ লাগবে।
আর কর্মরত দুই ভারতীয় শেফের হাত যে কাঁচা নয় তা হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি খেলেই টের পাওয়া যায়। তবে মনে রাখবেন ভারতীয় ঘরানায় বিরিয়ানি কিন্তু আমাদের দেশের মতো ছোট চাল (চিনিগুড়া, কালিজিরা ইত্যাদি) দিয়ে রান্না করা হয়না! ব্যবহৃত হয় লম্বা আকারের বাসমতি।
তবে বিরিয়ানির খাসির মাংস বেশ নরম ও খেতেও দারুণ। মাংসে মসলার ব্যবহার পরিমিত, তাই উদরের চাহিদা বেড়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু গুরুপাক বেশি হলে তো অনেকসময় অস্বস্তি হতে পারে, তখন কী করা? জানতে চাইলে ম্যানেজার আমজাদ এক ‘ডাব্বা’ তেল এনে রাখলেন টেবিলে।
জানালেন, ‘আমাদের কিচেনে ঢোকে শুধু স্বাস্থ্যসম্মত সূর্যমুখী তেল।’ তাই এই ধরনের কোনো সমস্যা হবেনা বলেই দাবি তার।
তিনি অবশ্য আরও বড় একটি দাবি করেন, ‘হান্ডির হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি ঢাকার সেরা।’
এই বিরিয়ানির দাম ৩০০ টাকা। প্রন বিরিয়ানিও পাওয়া যায় এখানে, এমনকি আছে সবজি বিরিয়ানিও।
পনির মাসালা দোসা দেখতে ভারি! বেশ বড় এর সাইজ! সঙ্গে চার ধরনের সস তো আছেই! ১৭০ টাকা গুনতে হবে দোসা খেতে চাইলে।
‘মুর্গ লাজাবাব মাখানি’ এখানকার একটি শেফ স্পেশাল পদ। তান্দুরে শেকে কিছুটা ঝোলের মতো করে তৈরি এই ‘লাজাবাব’।
নরম আর হালকা ঝোলে তন্দুরির পোড়া গন্ধ আর মাখনের মিশ্রণ জিভে জল আনার উপযোগী।
হোম মেইড গুলাব জামুন বেশ নরম, মিষ্টি আর খেতেও সুস্বাদু। দু-চারটি বেশি গুলাব জামুন মুখে উবে গেলেও দোষের কিছু হবে না।
এখানে পানীয় আছে বিস্তর, তবে লাস্যির কথা বিশেষভাবে বলতেই হয়। যারা ভারতীয় স্টাইলের লাস্যি খেয়েছেন তারা জানবেন ঘনত্ব বেশি থাকে ওই পানীয়তে। আর বরফের আধিক্যে দইয়ের আসল স্বাদও হারিয়ে যায়না! নোনতা ও মিষ্টি দুই স্বাদেই মিলবে দই। ১০০ টাকার এই লাস্যি স্বাদ আর দামে ঢাকার অন্যতম সেরা নিঃসন্দেহে।
দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে সুবিধা করে ঢুঁ মারতে পারেন।
এখানে খাবারের দামের সঙ্গে ভ্যাট ও সার্ভিস চার্জ যোগ হবে। টেইক অ্যাওয়েতে দিতে হবে শুধু ভ্যাট।
ছবি: হাসান বিপুল