২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি বিজড়িত মোট ২১টি বিমান, দুটি হেলিকপ্টার ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত দুটি রাডার নিয়ে সাজানো হয়েছে।
মাত্র বিশ টাকার বিনিময়ে প্রবেশ করা যাবে বাংলাদেশের বিমানের ইতিহাস নিয়ে সাজানো উঠানে।
ঢুকতেই চোখে পড়বে সবগুলো বিমানকে ছাপিয়ে মাথা উচু করে থাকা রাডারগুলো। এদের মাঝখানে বিশাল পাখা মেলে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম যাত্রীবাহী বিমান 'বলাকা'।
রাশিয়ার তৈরি 'বলাকা' প্রথম আকাশে ওড়ে ১৯৫৮ সালে। প্রধানত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কাজেই ব্যবহৃত হত— জানালেন জাদুঘরের টিকেট অফিসের প্রধান ও গাইড আতিয়ার রহমান।
পরে ১৯৭৩ সালে এই বিমান সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে জানালেন তিনি।
'বলাকা'কে ঘিরেই রয়েছে জাদুঘরের আরেকটি আকর্ষণ। ত্রিশ টাকার টিকেটের বিনিময়ে দর্শনার্থীরা প্লেনের ভেতরে ঢোকার সুযোগ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যেতে পারবেন একবারে ককপিট পর্যন্ত। দর্শনার্থীদের জন্য ভেতরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তবে ককপিটে এই ব্যবস্থা নেই।
বিমানটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দর্শনার্থীদের জুতা খুলে বিমানে ঢুকতে হবে। তবে জুতার নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাই বিমানের ঢোকার আগে নিজ দায়িত্বে জুতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিতে হবে।
জাদুঘরের আরেকটি আকর্ষণ হল ঐতিহাসিক ডাকোটা বিমান। যা ১৯ অগাস্ট বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে উপহার দেয় ভারত। মুক্তিযুদ্ধের ক্রান্তিলগ্নে এ বিমানটি ব্যবহৃত হয়েছিল। তাছাড়া বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর সূচনায় এই বিমানের বিশেষ ভূমিকা ছিল।
ডাকোটার পাশাপাশি জাদুঘরে স্থান পেয়েছে 'অ্যালিউট' হেলিকপ্টার। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনীর সেনানিবাসে আঘাত হানা হয়েছিল এই হেলিকপ্টার দিয়ে। তারপর হেলিকপ্টারটি ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছে।
বিমানবাহিনীর যাত্রী পরিবহনের প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত কানাডায় তৈরি একটি 'অটার' উড়োজাহাজ রাখা হয়েছে জাদুঘরে। এই বিমানও ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে।
অন্যান্য বিমানগুলোর মধ্যে আছে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত এফ-৮৬ যুদ্ধবিমান। মুক্তিবাহিনীর তিনটি হান্টার জেট। মিগ-২১এফএল ও ন্যাট বিমান। এছাড়াও আছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত জার্মান গ্লাইডার, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি টি-থার্টি সেভেন, চীনের তৈরি এফ টি-ফাইভ প্রশিক্ষন বিমান, সোভিয়েত ইউনিয়নের এমআই-এইট হেলিকপ্টার ইত্যাদি। প্রতিটি বিমানের সামনেই পাবেন এর পরিচয় এবং ইতিহাস।
জাদুঘরের প্রবেশপথের পাশেই 'নীলাদ্রি' দোকানে পাওয়া যাবে বিমানবাহিনীর স্মারক। মুক্তিযুদ্ধে বিমানবাহিনীর শহীদদের স্মরণ করতে তৈরি করা হয়েছে শহীদ কর্নার। এছাড়াও বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য ছোট একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। পেটপূজার জন্য একটি রেষ্টুরেন্টও আছে।
শুক্র ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে জাদুঘর সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে। তবে সোম থেকে বৃহস্পতি দুপুর ২টা থেকে জাদুঘরের গেট খোলা হয়। জাদুঘর সপ্তাহের ৬ দিনই রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা।
রক্ষণাবেক্ষণের কাজে রবিবার জাদুঘরটি বন্ধ রাখা হয়।
জাদুঘরটির নির্মাণকাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে আরও কয়েকটি ঐতিহাসিক বিমান যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন আতিয়ার রহমান।
ছবি: শিশির।