সুন্দরবনে রাসমেলা

সুন্দরবনের দুবলারচর। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বনের ছোট্ট এই দ্বীপে প্রতিবছর কার্তিক-অগ্রহায়ণের পূর্ণিমা তিথিতে বসে রাসমেলা। অসংখ্য হিন্দু পুণ্যার্থী আর পর্যটক এ উৎসবে শামিল হতে দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসেন বনের পাশের ছোট্ট এই চরে।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2014, 09:53 AM
Updated : 17 Oct 2014, 09:53 AM

এই উপলক্ষে পাঁচ দিনের একটি মেলাও বসে দুবলার চরে। এই বছর রাস মেলার শুরু ৬ নভেম্বর থেকে। রাসমেলা দেখার সঙ্গে সঙ্গে তাই সুন্দরবন থেকেও বেড়িয়ে আসতে পারেন।

সুন্দরবন ঘেঁষে বঙ্গোপসাগরের কোলে জেগে ওঠা ছোট্ট দ্বীপ দুবলার চর। কুঙ্গা এবং মরা পশুর নদীর মোহনার এই চরে বহুকাল ধরে চলে আসছে রাস মেলা। দুবলার চরের রাস মেলার ইতিহাস নিয়ে নানান মত প্রচলিত আছে।

সুন্দরবনের নীলকমলের কেওড়াশুটি জঙ্গল। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

জানা যায় ১৯২৩ সালে ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসারী হরি ভজন নামে এক হিন্দু সাধু এই মেলা শুরু করেছিলেন। এই সাধু চব্বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে গাছের ফলমূল খেয়ে অলৌকিক জীবনযাপন করতেন। অন্য একটি মতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ শত বছর আগের কোনও এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপমোচন এবং পুণ্যলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। সেই থেকে শুরু হয় রাস মেলা।

আবার কারও কারও মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এ উপলক্ষেই দুবলার চরে পালিত হয়ে আসছে রাস উৎসব।

রাস পূর্ণিমার সকালে দুবলার চরে প্রার্থনারত পুণ্যার্থীরা। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

দুবলার চরে পুণ্যস্নানরত এক পুণ্যার্থী। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

দুবলার রাস মেলায় দেশের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও বিদেশ থেকে প্রচুর পুণ্যার্থী ও পর্যটকের সমাগম ঘটে। প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর এ উৎসবে অংশ নেন। বিভিন্ন রকম হস্তশিল্প সামগ্রীর সমাগম ঘটে এ মেলায়। হিন্দুদের নানান পূজার্চনার ফাঁকে সন্ধ্যায় ওড়ানো হয় ফানুস।

মেলার মূল প্রার্থনা হয় ভোরের প্রথম জোয়ারে পুণ্য স্নানের মধ্য দিয়ে। এইদিন সূর্য ওঠার আগেই সমুদ্রের বেলাভূমিতে প্রার্থণায় বসেন পুণ্যার্থীরা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রেও জোয়ার শুরু হয়। জোয়ারের পানি পুণ্যার্থীদের ছুঁলেই স্নানে নামেন তারা। তিন মাস বিরতির পর সুন্দরবনে মাছ ধরার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় রাস মেলার এই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে।

দুবলার চরে কয়েক হাজার জেলের বসবাস। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এসব জেলেরা এখানে সাধারণত শুঁটকি তৈরি করেন। এ জায়গায় তাই দেখা যাবে জেলেদের জীবনধারা। এছাড়া জেলেদের মাছ ধরার নানান দৃশ্য আর কলাকৌশলও দেখা যাবে দুবলার চরে।

দুবলার চরে সূর্যোদয়। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

সুন্দরবনের নীলকমল অভয়ারণ্যে দেশি-বিদেশি পর্যটক। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

দুবলার চরে এবারের রাস উৎসব দেখানোর ব্যবস্থা করেছে বেসরকারী ভ্রমণ সংস্থা বেঙ্গল ট্যুরস। রাস মেলা ছাড়াও সুন্দরবনের আকর্ষণীয় জায়গা নীলকমলের জঙ্গলে বেড়ানোর সুযোগ থাকছে এ ভ্রমণে।

প্রতিষ্ঠানের পরিচালক রফিকুল ইসলাম নাসিম জানালেন, এ বছর রাস মেলায় বিশেষ ছাড়ে ভ্রমণ প্যাকেজের ব্যবস্থা করেছে তারা। ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হবে এ ভ্রমণ। খুলনা-সুন্দরবন-খুলনা, ৩ দিন ২ রাতের এ ভ্রমণে জনপ্রতি খরচ হবে ৯ হাজার ৫শ' টাকা, বিদেশিদের জন্যে ১৩ হাজার ৫শ' টাকা।

খুলনা থেকে বেঙ্গলের নিজস্ব জলযানে চেপে দুবলার চর, নীলকমলসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ। ভ্রমণ মূল্যে অন্তর্ভুক্ত খুলনা-সুন্দরবন-খুলনা যাতায়াত, লঞ্চের দ্বৈত কেবিনে থাকা, ভ্রমণকালীন খাবার, সুন্দরবনে প্রবেশ মূল্য, অস্ত্রসহ নিরাপত্তা কর্মী, গাইড সেবা প্রভৃতি।

যোগাযোগ: বাড়ি ৪৫, রোড ২৭, ব্লক এ, বনানি, ঢাকা। ফোন ০১৭৭৫১০৫৩৫১।