তাই এই গরমে পরার জন্য বেছে নিতে পারেন স্লিভলেস পোশাক। বর্তমান ফ্যাশনের সঙ্গে মানানসই স্লিভলেস যে কোনো পোশাক ফ্যাশনেবল হওয়ার পাশাপাশি গরমেও স্বস্তি এনে দেয়। তবে স্লিভলেস পোশাক পরার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন শালীনতা বজায় থাকে।
অনুষ্ঠানে পরার জন্য শাড়ির সঙ্গে অনেকেই এখন বেছে নিচ্ছেন স্লিভলেস ব্লাউজ। শাড়ির সঙ্গে মানানসই ভিন্ন রংয়ের স্লিভলেস ব্লাউজ দেখতে দারুণ ফ্যাশনেবল। আর যারা শাড়ি এড়িয়ে চলতে চান তারা পরতে পারেন স্লিভলেস কামিজ, কুর্তি বা টপস।
মায়াসির ফ্যাশন হাউজের কর্ণধান মাহিন খান বলেন, “পঞ্চাশের দশকে, ৬০ থেকে ৭০-এর দশকেও আমাদের দেশে নারীরা স্লিভলেস পরত। তবে সেটি সীমাবদ্ধ ছিল সমাজের অভিজাত শ্রেণির মধ্যেই। ঠিক তেমনি এখনও যদি সাধারণ একটি মেয়ে স্লিভলেস পরে বাসে চেপে ইউনিভার্সিটি বা অন্য কোথাও যেতে চায়, তাহলে তার দু’একটি কটূক্তি শুনতে হতে পারে। এটি পুরোপুরি আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়।”
তবে মাহিন খানের মতে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যে কেউ স্লিভলেস পোশাক পরতে পারে। আর যারা স্লিভলেসে অভ্যস্ত নন তারাও চাইলে ছোট গলার সঙ্গে খানিকটা চওড়া ঘাড়ের স্লিভলেস পোশাক পরতে পারেন।
“স্লিভলেস জামার সঙ্গে ছোট গলাই বেশি ভালো। এতে পোশাকটিও মার্জিত লাগবে। তাছাড়া কলার দেওয়া গলার স্টাইলেও স্লিভলেস ভালো মানায়”, বললেন মাহিন খান।
ফ্যাশন ঘর বিবিয়ানার কর্ণধার লিপি খন্দকার বলেন, “স্লিভলেস আমাদের দেশের ফ্যাশনে উঠে এসেছে বেশ কিছুদিন ধরেই। তবে স্লিভলেস পোশাকটি নিজের সঙ্গে মানানসই কিনা সে বিষয়ে লক্ষ রাখা খুবই জরুরি। হাত যাদের মোটা তাদের স্লিভলেসে এড়িয়ে চলা উচিত। মূলত সরু এবং দীর্ঘ হাতেই স্লিভলেস বেশি মানায়।”
“যাদের কাঁধ কিছুটা চওড়া তারাও স্লিভলেস পরতে পারেন। এক্ষেত্রে জামার শোল্ডার ১ ইঞ্চি বা ১.৫ ইঞ্চি বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। এতে করে কাঁধের চওড়াভাবটা কিছুটা কম মনে হবে”, বললেন লিপি খন্দকার।
তবে স্লিভলেস পরতে হলে হাতের সৌন্দর্যের দিকটা বিশেষ লক্ষ রাখা জরুরি। কারণ স্লিভলেস পরতে হলে হাত পুরোটাই বের হয়ে থাকে। আর গরমে রোদের তাপে হাতের অনেকটা ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই হাত রোদ থেকে বাঁচাতে এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রয়োজন বিশেষ যত্ন।
ফারজানা শাকিলস বিউটি পার্লারের কর্ণধার ফারজানা শাকিল স্লিভলেস পরার ক্ষেত্রে হাতের কিছু বিশেষ যত্নের বিষয়ে জানালেন।
তিনি বলেন, “স্লিভলেস পোশাক পরার ক্ষেত্রে হাত এবং আর্মপিটের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে হাত এবং আর্মপিটের অবাঞ্ছিত লোম দূর করা দরকার। এটি ঘরে বা পার্লারে করা যায়। ঘরে করতে হলে বাজারে হেয়ার রিমুভিংয়ের জন্য বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করা যায়। তবে এতে করে লোম ভিতর থেকে পরিষ্কার হয় না, তাই ত্বকে কালচে দাগ পড়ে যায়। এক্ষেত্রে সব থেকে বেশি কার্যকরী হল ওয়াক্সিং। এতে ত্বক পুরোপুরি লোমমুক্ত করা সম্ভব।”
ঘরোয়া উপায়েও হাতের যত্ন নেওয়া যায় বলে জানান ফারজানা শাকিল। তিনি বলেন, “সপ্তাহে তিনদিন হালকা গরম পানিতে হাত ভিজিয়ে রেখে স্ক্রাবিং করে হাতে প্যাক লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই সাধারণ চর্চায়ই হাত সুন্দর হবে।”
মুখের ত্বকের জন্য আমরা যে স্ক্রাব ব্যবহার করি, হাতের ত্বকের জন্য এর থেকে ভিন্ন স্ক্রাব ব্যবহার করা প্রয়োজন। কারণ হাতের ত্বক, মুখের ত্বকের তুলনায় ভিন্ন।
ফারজানা শাকিল ঘরোয়া উপায়ে স্ক্রাবার এবং হাতের জন্য প্যাক তৈরি উপায় জানিয়ে দেন।
এরপর ১ চামচ মুলতানি মাটি, ১ চামচ চন্দনগুঁড়া, ১ চামচ মধু, খানিকটা টক দই এবং ১টি কলা একসঙ্গে মিশিয়ে স্ক্রাবিংয়ের পর হাতে লাগিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ রাখার পর শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে হাতের ত্বক সুন্দর হবে।
তবে ফারজানা শাকিল প্রতিদিনই স্লিভলেস না পরার পরামর্শ দেন। কারণ গরমে স্বস্তি মিললেও অতিরিক্ত রোদের তাপে হাতের ত্বক পুড়ে যেতে পারে। তাই মাঝে মাঝে ফুল স্লিভ বা থ্রি-কোয়ার্টার হাতার ড্রেস পরলে হাতের ত্বকের ক্ষতি কম হবে।
তাছাড়া স্লিভলেস পরলে অবশ্যই রোদে বের হওয়ার কিছুক্ষণ আগে পুরো হাতে সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরামর্শ দেন ফারজানা শাকিল।