ক্লান্ত হওয়ার অন্য কারণ

শুধু কম ঘুমালেই নয়, ক্লান্ত লাগার অনেক কারণই থাকতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2014, 10:23 AM
Updated : 25 Sept 2014, 10:23 AM

ক্লান্তির জন্য মানসিক, শারীরিক, খাদ্যাভ্যাসসহ নানান বিষয় দায়ী হতে পারে। স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদনে সেই বিষয়গুলোই উল্লেখ করা হয়েছে। 

ব্যয়াম না করা

এনার্জি বা শক্তি খরচ হবে না ভেবে যদি ব্যয়াম না করেন তবে সেটা হবে ভুল। সুস্থ মানুষ যারা সপ্তাহে তিনদিন অন্তত বিশ মিনিট শরীরচর্চায় অভ্যস্ত হবেন তারা ছয় সপ্তাহ পরেই টের পাবেন নিজেকে কতটা কর্মচঞ্চল লাগছে।

প্রতিদিন ব্যয়াম করলে হৃদপিণ্ডের কাজ করার ক্ষমতা বাড়ে ও রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। ফলে শরীরে কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি সঠিকভাবে পৌঁছায়।

তাই বিছানা যতই আকর্ষণীয় হোক, তার কাছে যাওয়ার আগে অন্তত সামান্য সময়ের জন্য হলেও ব্যয়াম করুন।

পর্যাপ্ত পানি পান

টেক্সাস হেল্থ বেন হোগান স্পোর্টস মেডিসিনের পুষ্টিবিদ অ্যামি গুডসন জানান, শতকরা দুইভাগ পানি কমলেই মনে হবে শরীরে আর কোনও শক্তি নেই।

পানি শূণ্যতার কারণে রক্তের পরিমাণ কমে যায়। ফলে রক্ত হয়ে যায় ঘন। এজন্য হৃদপিণ্ড রক্ত ভালোমতো পাম্প করতে পারে না। যার কারণে রক্ত চলাচল ধীরে হয়, শরীরের পেশী ও বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেন ও পুষ্টি দেরিতে পৌঁছায় আর তখনই এনার্জি কমে যায়।

কোনও মানুষের পাউন্ড হিসেবে দেহের ওজন নিয়ে, দুই দিয়ে ভাগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে, তার দৈনিক সেই সংখ্যার আউন্স হিসাবে পানি পান করা উচিত বলে জানান গুডসন।

আয়রনের অভাব

শরীরে লৌহের অভাবেও ক্লান্ত লাগতে পারে।

গুডসন বলেন, “আয়রনের অভাবে পেশী ও কোষে প্রয়োজনের তুলনায় কম অক্সিজেন সরবরাহ হয়। তাই ক্লান্ত লাগে।”

অপর্যাপ্ত আয়রনের কারণে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূণ্যতা হয়। তাই এই পুষ্টিগুণ শরীরে পর্যাপ্ত রাখার জন্য চর্বি ছাড়া মাংস, কিডনি বিন, ডিম, গাঢ় সবুজ শাকসবজি, বাদাম খাওয়া উচিত।

আয়রন শরীরে ভালোমতো শোষণের ভিটামিন সি প্রয়োজন। তাই পাশাপাশি লালমরিচ, লাল ও সবুজ ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, পেঁপে, ফুলকপি খাওয়ার অভ্যেস করুন।

কাজ নিখুঁত করার চেষ্টা

আপনি যদি ‘পারফেক্টশনিস্ট’ হন, সবকাজ একদম নিখুঁতভাবে করতে চান, যা কখনই সম্ভব না— তাহলে আপনি বিরক্তবোধ করবেন আর ক্লান্ত হয়ে যাবেন।

কারণ, কাজ নিখুঁত করার চেষ্টায় খাটতে হয় বেশি, সময়ও লাগে বেশি।

নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের সাইকোলজির অধ্যাপক ইরিনি এস. লিভিন (পিএইচডি) বলেন, “এমন একটা কাজ শুরু করা হলো, যা শেষ করা কঠিন বা অসম্ভব, তারপর দিন শেষে ক্লান্ত। কারণ আত্মতৃপ্তি নেই।”

লিভিন পরামর্শ দেন, যে কোনও কাজ শেষ করার জন্য সময় হিসাব করে নেওয়া দরকার। নির্দিষ্ট সময়ের চাইতে বেশি সময় নিয়ে কোনও কাজ করলে কখনই ভালো হয় না।

নিজেকে তুচ্ছ ভাবা

অফিসের ‘বস’ হঠাৎ মিটিং ডাকলেই যদি মনে হয় আপনাকে বরখাস্ত করা হবে অথবা সাইকেল বা মটরসাইকেলে উঠলেই যদি মনে করেন দুর্ঘটনা ঘটবে, তাহলে আপনি সর্বনাশা ‘দুশ্চিন্তা’ রোগে ভুগছেন।

লিভিন জানান, এই ধরনের রোগ মানুষকে মানসিকভাবে অবশ করে দেয়। ফলে সেই মানুষটা সবসময় ক্লান্ত অনুভব করে।

এর থেকে নিস্তার পেতে বড় করে শ্বাস নিন আর ছাড়তে ছাড়তে ভাবুন কি আর অত খারাপ হবে। এছাড়া হালকা ব্যয়াম, হাঁটাহাঁটি আর পরিচিতজনের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলাপ করা— দুশ্চিন্তা কাটায়। সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে বাস্তবতা মেনে নিয়ে জীবন পার করা।

সকালে নাস্তা না করা

খাবার হচ্ছে শরীরের জ্বালানি। রাতে খাওয়ার পর যখন ঘুমাতে যাওয়া হয় তখনও শরীর এই জ্বালানি খরচ করে সারারাত রক্ত সরবরাহ ঠিক রাখে।

তাই সকালের নাস্তা হচ্ছে অনেকটা আবার জ্বালানি ভরার মতো বিষয়। ‘ব্রেকফাস্ট’ না করলে সারাদিন ক্লান্ত লাগতেই পারে।

গুডসন বলেন, “সকালের নাস্তা খাওয়া মানে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ায় ‘কিকস্টার্ট’ করানোর মতো বিষয়।”

তার পরামর্শ হলো, চর্বি ছাড়া মাংস, হোল গ্রেইন, ফলের রস, লো ফ্যাট মিল্ক, আমন্ড বাটার, ডিম, দুই টুকরা পাউরুটি টোস্ট এসব হতে পারে আদর্শ সকালে নাস্তা। যা সারাদিনের ক্লান্তিভাব দূর করবে।

‘জাঙ্ক ফুড’ খাওয়া

চিনিযুক্ত খাবার ও কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার শরীরে খুব দ্রুত শর্করা পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এসব খাবার সবসময় খেলে রক্তে স্বাভাবিকের চাইতে চিনির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে শরীর ক্লান্ত করে দেয়।

গুডসন বলেন, “রক্তে চিনির পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য চর্বি ছাড়া মাংস ও হোল গ্রেইন খাওয়ার অভ্যেস করা উচিত।”

‘না’ বলতে না পারা

সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়। আর সবার মন রক্ষা করে চলতে গিয়ে যদি সবসময় ‘হ্যাঁ’ করতে থাকেন তাহলে নিজেই একসময় বিরক্ত হয়ে ক্লান্ত হয়ে যাবেন। তাই ‘না’ বলার অভ্যেস করুন।

এমনকি ছুটির দিনে অফিসের ‘বস’ যদি আপনাকে কাজের কথা বলে সেটাও প্রত্যাখ্যান করুন।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের লাইসেন্সড ক্লিনিকাল মনোবিজ্ঞানি সুসান আলবের্স বলেন, “প্রথমে একা একা ‘না’ বলার প্র্যাকটিস করুন। যখন ‘না’ কথাটা আপনার কানে অভ্যস্ত হয়ে যাবে, তখন প্রয়োজনে ‘না’ শব্দটা মুখে উচ্চারণ করতে আপনার বাঁধবে না।”

অগোছালো অফিসটেবিল

যদি আপনার অফিসের টেবিল গোছানো না থাকে তবে কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হবে। এতে মস্তিষ্ক দ্রুত ক্লান্ত হয়ে আপনাকে করে ফেলবে দুর্বল।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের করা একটি জরিপ থেকে এই তথ্য বের হয়ে এসেছে। তাই পরের দিন সুস্থ মস্তিষ্কে কাজ করার জন্য আগের দিন অফিস ছাড়ার আগে নিজের অফিসটেবিল গুছিয়ে আসুন।

ছুটিতে কাজ

অবসর সময়ে বা ছুটি নিয়ে বেড়াতে যেয়ে যদি ‘ই মেইল’ দেখা, অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে অনলাইনে কাজ করেন তাহলে বেড়াতে গিয়ে পর্যাপ্ত আরাম হয় না। ফলে ছুটি থেকে ফিরে এসেও ক্লান্তি দূর হতে চায় না।

তাই ছুটিতে থাকলে অফিসের কাজ থেকে দূরে থাকুন। অবসর কাটিয়ে যখন আবার কাজে আসবেন, তখন নিজেকে আরও কর্মচঞ্চল ও সৃজনশীল লাগবে।

প্রযুক্তির আলো

ট্যাবলেট, স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের স্ক্রিনের আলো রাতের বেলা যদি বেশি মুখে পড়ে, তবে তা ঘুমের ব্যঘাত ঘটাতে পারে।

সঠিক সময়ে ঘুম ও জেগে ওঠার জন্য মেলাটনিন নামের যে হরমোন সবসময় কাজ করে, প্রযুক্তির এসব স্ক্রিনের আলো তা নিঃসরণে বাঁধা দেয়। বিশেষ করে রাতের বেলা এই কাজটা বেশি ঘটে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডা. তৌফিগ জানান, ডিজিটাল আলোর সংস্পর্শের প্রভাব একেকজনের উপর একেক রকম। তবে সাধারণভাবেই বলা যায়, রাতের বেলা ঘুমানো এক-দুই ঘন্টা আগে এসব ‘টেক টয়’ ব্যবহার না করাই ভালো।

আর ফেইসবুকে কে কী করলো, ঘুমাতে যাওয়ার আগে তা জানার জন্য যদি মনটা ছটফট করে তবে অন্তত আপনার ডিভাইসটি ১৪ ইঞ্চি দূরে রেখে কাজ করুন। এতে ঘুমের ব্যঘাত ঘটানোর জন্য দায়ী রশ্মি থেকে অন্তত বাঁচা যাবে।

অতিরিক্ত ক্যাফেইন

সকালে কফি খাওয়া ভালো। শরীর চাঙা রাখে। সারাদিনে তিনকাপ কফিই যথেষ্ট। তবে অতিরিক্ত কফি পান বা শরীরে বেশি ক্যাফেইন গেলে ঘুম ও জেগে ওঠায় ব্যঘাত ঘটায়। ফলে শরীর ক্লান্ত লাগে।

সম্প্রতি জার্নাল অফ ক্লিনিকাল স্লিপ মেডিসিন-এ প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ঘুমানোর অত্যন্ত ছয় ঘন্টা আগে সকল প্রকার ক্যাফেইন থেকে দূরে থাকতে হবে। এতে ঘুম ভালো হবে।

দেরিতে ঘুম ভাঙা

সাপ্তাহিক ছুটির আগের রাতে মজা করতে গিয়ে দেরিতে ঘুমানো, পরদিন দেরিতে ঘুম ভাঙা। ফলে ছুটির দিনের রাতেও ঘুমাতে দেরি। তারপর সপ্তাহ শুরুর দিনে কাজের মধ্যে ঘুম ঘুম ভাব। ক্লান্ত তো লাগবেই।

ডা. তৌফিগ বলেন, “ছুটির দিনেও সাধারণ দিনের মতো রুটিন করে ঘুমানো উচিত। বরং ছুটির দিনে সকালে উঠে দুপুরে ‘পাওয়ার ন্যাপ’ নিতে পারেন।”

তিনি আরও জানান, দুপুরে ২০ মিনিটের মতো হালকা ঘুম বা তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকলে, গভীর ঘুম দিয়ে ওঠার চাইতেও বেশি সতেজ লাগার সম্ভাবনা থাকে।

ছবির প্রতীকী মডেল: আলিফ।

ছবি: ই স্টুডিও।