প্রেগো

বিশ্বজুড়ে ইতালিয়ান খাবারের বিশেষ সমাদর নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের অন্তত ঢাকা শহরে ইতালীয় খাবারের গ্রহণযোগ্যতাও দিনদিন বাড়ছে এটি বললে ভুল হবে না।

মিথুন বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2014, 06:49 PM
Updated : 25 Sept 2014, 01:11 PM

ঢাকায় এখন কিছু রেস্তোরাঁয় ‘আসল’ বা তার কাছাকাছি স্বাদের ইতালীয় খাবারও পাওয়া যায়। ইতালিতে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় কাজ করেছেন এমন অনেক শেফই এখন দেশে ফিরে কাজ করছেন। এক-দুইজন নিজেরাই খুলেছেন রসুইখানা।

যাইহোক আসল স্বাদের ইতালীয় খাবারের জন্য ঢাকার অন্যতম স্থান হলো ‘প্রেগো’। গুলশান দুইয়ের পাঁচতারকা হোটেল ওয়েস্টিনের ২৩ তলায় এই রেস্তোরাঁ। কাচে ঘেরা রেস্তোরাঁয় বসে শহরের বড় এলাকা দেখা যাবে অনায়াসেই। রাতে বা বৃষ্টির দিনে তা একটু ‘ম্যাজিক্যাল’ লাগবে।

টি-বোন স্টেক

'ভ্যানিলা ইনডালজেন্স' ছবি ওয়েস্টিন

১২০ জনের বসার ব্যবস্থা থাকা এই রেস্তোরাঁর অন্দরসজ্জা বেশ আধুনিক। প্লেটগুলি বেশ রংচঙা। গ্লাস, কাটলারিজ যে যত্নে সাজানো, দেখে ছবি মনে হতে পারে। বৈদ্যুতিক বাতির মৃদু আলোর সঙ্গে বাইরে থেকে আসা প্রাকৃতির অবারিত আলোর মিশ্রণ চমৎকার এক আবহ আনে। এছাড়া বারান্দায় বসে খেতে চাইলে সে ব্যবস্থাও আছে।  

ওয়েস্টিনের এক্সিকিউটিভ শেফ শুভব্রত মৈত্র জানান, প্রেগোর বিশেষত্ব হলো উচ্চমানের আমদানীকৃত উপকরণ। ইতালীয় খাবারে টাটকা উপকরণের ব্যবহারও বিশেষভাবে উল্লেখ্য।

প্রেগোতে আছে ‘ওপেন কিচেন’। খাবার টেবিলে বসেই দেখতে পাবেন রসুইঘরের সব কর্মকাণ্ড।

মৈত্রর ভাষায় ‘লুকোচুরির কোনও সুযোগ নেই’!

প্রেগোর অন্দরসজ্জা

টি-বোন স্টেক

মোৎজারেল্লা চিজ প্রতি দুই সপ্তাহে নিয়ে আসা হয় খোদ ইতালি থেকে। এই চিজ আবার মহিষের দুধ থেকে তৈরি।

শেফ মৈত্র বলেন ‘এই চিজ হয় খুবই নরম, পিৎজাতে কামড় দিলেই চিজের অংশ লম্বাভাবে বাড়তে থাকবে মুখ থেকে হাতে ধরে রাখা খাবারের টুকরার মাঝে।’  

মেন্যুতে খাবারের নাম ইতালীয় ও ইংরেজিতে পাশাপাশি লেখা।

স্টার্টারে অক্টোপাস সালাদ মন্দ হবেনা। আর ‘আরানচিনি’ হতে পারে আমাদের জন্য আদর্শ। এটি মূলত ডিপ ফ্রাইড রাইস বল আর ভেতরে মোৎজারেল্লা চিজ ও টমেটোর সস।

জানা গেল ইতালি থেকে নিয়ে আসা টমেটো থেকে প্রেগোতেই বানানো হয় এই সস।

পাস্তা হিসেবে আলিও ওলিয়ো নিলে জিভে রসুনের স্বাদ যেভাবে এসে লাগবে, তাতে ইতালিয়ান হার্বসের ফ্রেশনেসও টের পাবেন পরতে পরতে। আর ওলিভ অয়েলের উপস্থিতি তো ইতালীয় খাবারের স্বাভাবিক ভাবেই থাকছে!

পিৎজা

প্রেগোর অন্দরসজ্জা

ইতালি দেশটির বিশাল অংশ ঘিরেই আছে সমুদ্র। আর তাই এদের খাবারে সিফুডের ব্যবহার মোটেও নতুন কিছু নয়। প্রেগোর পিৎজাও রয়েছে সিফুডের স্বাদ বেছে নেয়ার সুযোগ।

লক্ষণ জয়সী এখানকার টিম লিডার হিসাবে আছেন কয়েকবছর ধরে। জানান, গ্রিল্ড গলদা চিংড়ির পিৎজার জন্য ভ্যাট বাদে গুনতে হবে ১৭৯০ টাকা।

আছে সিফুড পাস্তা, যাতে থাকবে কালামারি, মাসলস, কাটলফিশ আর স্পিাইসি টমেটোর সস।

আর গ্রিল্ড চিকেন সুপ্রিমের জন্য ভ্যাট ছাড়া দিতে হবে ১৭০০ টাকা। বিফ লাজানিয়ার জন্য পড়বে ১৫৫০ টাকা।

টি-বোন স্টেকটি পুরু আর সঙ্গের ‘ম্যাশ পটেটো’ ও সবজির রং চোখের জন্য ভালো। আর জিভের জন্য ভালো এর স্বাদ!

প্রেগোর অন্দরসজ্জা

ওপেন কিচেন

মিঠাই হিসাবে ‘ভ্যানিলা ইনডালজেন্স’ দেখেই জিভে জল আসলে আপনাকে দায়ী করা যাবেনা মোটেও! সহজ স্বাদের ভ্যানিলা আর মুখে লেগে থাকবে বহুক্ষণ!

দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে জয়সীর জানান, এমন চমৎকার পরিবেশে উচ্চমানের আমদানীকৃত উপকরণে তৈরি আসল স্বাদের ইতালিয়ান খাবারের জন্য এর চেয়ে কমে অতিথিদের খাবার পরিবেশন করাটা একটু কঠিনই বটে।      

আগামী ঈদুল আজহার পরে কুকিং ক্লাস চালু করার পরিকল্পনা করছে এই রেস্তোরাঁ। সকালের এই ক্লাসের পর শিক্ষার্থীরা নিজেদের রান্নাই লাঞ্চ হিসাবে খেতে পারবেন। 

ওপেন কিচেন

ইতালিয়ানদের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত একটি বিষয় হলো এদের ‘লাভ অব লাইফ’, যা কিনা এদের খাবারেও অনেকটা প্রতিফলিত হয়।

এই ‘লাভ অব লাইফে’র কিছুটা স্বাদ প্রেগোতে গেলে পেতে পারেন!

ছবি: হাসান বিপুল।