মাংস খান রয়েসয়ে

আসছে কোরবানির ঈদ। অন্যান্য বছরের মতো এবারও কি পণ করেছেন, 'রেড মিট' একেবারেই খাবেন না! আবার মনের কোনায় কোথাও হয়তো সন্দেহ জাগছে আগের বছরগুলোর মতো এবারও প্রতিশ্রূতি রাখাটা সম্ভব নাও হতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2014, 12:51 PM
Updated : 15 Sept 2014, 10:54 AM

ঈদের দিনে তো পরিবারের সবার একত্র হওয়া, দুপুরে মাংসের রেজালা, খাবার শেষে আয়েশি বিকেলে চায়ের সঙ্গে মায়ের হাতের কাবাব, কোফতা কিংবা গ্রিল বিফ সহযোগে আড্ডার সুযোগ তো আর প্রতিদিনই আসে না। আর মাংস ছাড়া বাঙালি মুসলমানে উৎসবও পুরোপুরি জমে না।

কী করার আছে তাহলে?

এই বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ আসফিয়া আজিম।

কয়েকটি সাধারণ বিষয় জানা থাকলে ’রেড মিট খাবো না’- ধরনের প্রতিশ্রূতির প্রয়োজন হবে না। আসুন জেনে নেই সেই নিয়মগুলো।

১. ডায়েটেশিয়ানদের মতে দিনে ৩ আউন্স এর বেশি মাংস খাওয়া উচিত না। এই ৩ আউন্সের হিসেব কষতে 'মেজারিং টুল' জোগাড় করার দরকার নেই। একটা তাসের কার্ডের ক্ষেত্রফলের সমান মাংসের মাপ হলো ৩ আউন্স। এই পরিমাণ মাংস খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

২. বিরিয়ানি, রেজালা, কাবাব— এ ধরনের গুরুপাক খাবারের পর প্রচুর পানি পান করুন। কারণ প্রোটিন হজমের সময় বিভিন্ন এনজাইম নিঃসরণ হয় প্রোটিনকে শোষনের জন্য। তবে এই এনজাইম নিঃসরণের সময়ে অ্যামোনিয়া-জাতীয় এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ শরীরে তৈরি হয়। দেহ থেকে এই বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে অতিরিক্ত পানি পান প্রয়োজন।

৩. মাংস মোটেও সহজপাচ্য খাবার নয়। তাই মাংস খাওয়ার সময় ভালোমত চিবিয়ে খান। মাংস ভালোমতো চিবালে পাকস্থলী থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস্ট্রিক জুস বের হবে যা পরিপাকে সাহায্য করবে।

৪. মাংস খাওয়ার পর ডেজার্টে কি খাবেন, জানেন? এক ফালি পেঁপে। এটা মাংস হজমে ম্যাজিকের মতো সাহায্য করে।

৫. পোলাও, মাংসের সঙ্গে শসা-টমেটোর সালাদ দুর্দান্ত। তবে মাংসকে সহজপাচ্য করতে চাইলে, তাড়াতাড়ি হজম করতে চাইলে শসা-টমেটোর বদলে আনারসের সালাদ খান। আনারসে ব্রোমেলিন নামে এক ধরনের এনজাইম আছে যা মাংসের মতো গুরুপাক প্রোটিনকে ভেঙে হজমের উপযোগী করে।

৬. এছাড়া 'লিন মিট’ বা চর্বি ছাড়া মাংস খেলে তা তুলনামূলক কম সময়ে হজম হয়। মাংসে চর্বি বেশি থাকলে তা হজম করতে শরীরকে অনেক বেশি পরিমাণ এনজাইম ক্ষরণ করতে হয়। যা শরীরের জন্য সবসময় ভালো নাও হতে পারে।

৭. আমাদের দেশের রান্নায় অনেক ধরনের মসলা ব্যবহার করা হয়। ফলে মসলাও মাংস হজমে সাহায্য করে থাকে। তবে অতিরিক্ত মসলাদার খাবার আবার উল্টোভাবে হজম শক্তিকে দুর্বলও করে দেয়।

৮. যেসব রেসিপিগুলোতে মাংস অনেক্ষণ মেরিনেট করে রাখার প্রয়োজন হয় অথবা ভিনেগারে বা দইয়ের ব্যবহার আছে এমন ধরনের রান্না ঈদের মেন্যুতে রাখুন। অনেকক্ষণ মেরিনেট করার ফলে কিংবা ভিনেগার বা দইয়ে ভিজিয়ে রাখলে মাংস আপনা থেকেই সহজপাচ্য হয়ে যায়।

৯. ছোট টুকরা করে মাংস রান্না করুন। এভাবে রান্না করলে মাংস হজম করা সহজ। টিকিয়া কাবাবে যেহেতু মাংসের কিমা ব্যবহার করা হয় তাই এই কাবাব অন্যান্য কাবাবের থেকে ভালো।

১০. উৎসবের আনন্দে, আড্ডায় খাওয়া-দাওয়া করতে অনেক সময়েই রাত হয়ে যায়। মাংস হজম হতে যেহেতু সময় বেশি লাগে তাই রাতের খাবার ৮টার মধ্যে খেয়ে ফেলাই উচিত। না হলে পরদিন হয়ত পেট ব্যাথায় কষ্ট পেতে পারেন।

১১. একদিনে অনেক ধরনের প্রোটিন না খাওয়াই ভালো। ঈদের উৎসবে প্রায় প্রতিদিনই খাসীর রেজালা, গরুর ভুনা, মুরগির রোস্ট, কোফতা, কাবাব চলতেই থাকে। একটু সামলে বুঝেশুনে শরীরকে সইয়ে খান। আপনি শরীরের দিকে নজর দিলে শরীরও আপনাকে বিপদে ফেলবে না।