সমাধিক্ষেত্র

মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর মৃতদেহ সৎকারের জন্য রয়েছে কবর, শ্মশান ও গ্রেইভইয়ার্ড।

সৈয়দ রিয়াদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2014, 03:07 AM
Updated : 11 Sept 2014, 03:07 AM

হঠাৎ আত্মীয়স্বজন কিংবা পাড়া প্রতিবেশির কারও মৃত্যু হলে, মৃতদেহ সৎকার নিয়ে চিন্তায় পড়তে হয়। সত্যিকার অর্থে সে সময় মৃত ব্যক্তির সন্তান কিংবা পরিবারে সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এমন বিপদের দিনে প্রতিবেশিরাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

মৃতদেহ সৎকারের জন্য রাজধানীতে বেশ কয়েকটি কবরস্থান, গ্রেইভইয়ার্ড (খ্রিস্টানদের কবর) ও শ্মশান রয়েছে। সেগুলো নিয়েই এই প্রতিবেদন।

ঢাকার কবরস্থান

মুসলমানদের মৃতদেহ কবর দেওয়ার জন্য ঢাকার সিটি করর্পোরেশন পরিচালিত ছয়টি কবরস্থান রয়েছে। এগুলো হল— জুরাইন গণকবরস্থান, আজিমপুর গণকবরস্থান, মিরপুর বুদ্ধিজীবি কবরস্থান, বনানী কবরস্থান, উত্তরা ৪নং সেক্টর গণকবরস্থান ও উত্তরা ১২নং সেক্টর গণকবরস্থান।

নিয়ম: সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত এসব কবরস্থানে কবর দেওয়ার জন্য খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হয় না। মৃতদেহ ধোয়ানো, দাফনের জন্য কাফন ও জানাজা (মৃত ব্যক্তি সমাধিস্থ করার আগে বিশেষ প্রার্থনা) করে নিয়ে গেলে সরকারের নির্ধারিত সাড়ে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা ফি পরিশোধ করার মাধ্যমে কবর দেওয়া যায়।

মিরপুর বুদ্ধিজীবি কবরস্থান, উত্তর ১২নং সেক্টর, আজিমপুর গণকবরস্থান ও জুরাইন গণকবরস্থানে বাঁশ, চাটারি, গোর খনন খরচ বাবদ প্রায় ৮শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা লেগে যায়।

বর্তমানে বনানী, উত্তরা ৪নং সেক্টরে চাটারি বাঁশ ও গোর খনন বাবদ লাগবে প্রায় ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।

আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম থেকে যেসব বেওয়ারীশ লাশ এসব কবরস্থানে যায় সেগুলোর জন্য কোনও প্রকার খরচ দিতে হবে না। কবরস্থানগুলোতে মৃতদেহ ধোয়া ও জানাজার ব্যবস্থা রয়েছে। এসবে জন্য কোনও চার্য বা ফি দিতে হয় না।

মেয়াদি পদ্ধতিতে কবরস্থান নেওয়ার নিয়ম 

কবরের জন্য বর্তমানে জায়গা বিক্রি করার ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বিভিন্ন মেয়াদের জন্য কবর নেওয়া যায়। মেয়াদ ভিত্তিক কবর নেওয়া হলে, সিটি কর্পোরেশন মেয়াদি কবরগুলো মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পর্যন্ত সংরক্ষিত রাখে।

বর্তমানে মিরপুর বুদ্ধিজীবি কবরস্থান, উত্তরা সেক্টর ১২ নং কবরস্থান, আজিমপুর গণকবরস্থান ও জুরাইন গণকবরস্থানে ফি বাবদ ১০ বছর মেয়াদের জন্য ৩ লক্ষ টাকা, ১৫ বছরের জন্য ৬ লক্ষ টাকা, ২০ বছরের জন্য ৯ লক্ষ টাকা, ২৫ বছরের জন্য ১১ লক্ষ টাকা ফি পরিশোধ করতে হয়।

বনানী ও উত্তরা ৪নং সেক্টর গণকবরস্থানে ১০ বছর মেয়াদের জন্য ৫ লক্ষ টাকা, ১৫ বছরে জন্য ৮ লক্ষ টাকা, ২০ বছরের জন্য ১২ লক্ষ টাকা, ২৫ বছরের জন্য ১৫ লক্ষ টাকা ফি পরিশোধ করতে হয়।

শ্মশান

ঢাকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মৃতদেহ পোড়ানো ও কবর দেওয়ার জন্য রয়েছে দুইটি শ্মশান। একটি পোস্তগোলা মহাশ্মশান অপরটি লালবাগ কামরাঙ্গীরচর শ্মশান। হিন্দু সমাজ কর্তৃক পরিচালত আরেকটি শ্মশান রয়েছে সবুজবাগ থানার রাজারবাগে, কালীবাড়ি শ্মশান।

শ্মশানে মরদেহ পোড়ানোর জন্য দাহ্য সামগ্রী যেমন ঘি, লাকড়ি ইত্যাদি মৃতের পরিবার বহন করেন। একটি মৃতদেহ পোড়ানোর জন্য প্রায় ১০ থেকে ১২ মন লাকড়ির প্রয়োজন হয়। শ্মশানগুলোর কাছেই এসব লাকড়ির দোকান রয়েছে।

এসব শ্মশান ও কবরে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নিয়োগকৃত গোর খোঁড় ও ডোম রয়েছে। শ্মশানে পোড়ানো ও শ্মশানের পাশে কবর দেওয়ার জন্য কোনও ফি দিতে হয় না। শ্মশানগুলোর পাশে প্রার্থনার জন্য রয়েছে মন্দির।

ঢাকায় খ্রিস্টান কবর

ঢাকায় তিনটি খ্রিস্টান কবর রয়েছে। একটি ওয়ারীর টিপুসুলতান রোডে, দ্বিতীয়টি হলিক্রস স্কুল রোড তেজগাঁয়ে এবং তৃতীয়টি রায়েরবাজার খ্রিস্টান কবর। খ্রিস্টান কবরগুলো দেখাশোনা করে সেন্ট্রাল ক্যাথলিত চার্চ কাকরাইল।

কাকরাইল চার্চ ক্যাথলিক ফাদার চঞ্চল জানান, খ্রিস্টান মৃতব্যক্তির সমাহিত করার আগে কবরে কিংবা খ্রিস্টান চার্চে প্রার্থনা করার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রার্থনা করার জন্য আরও আছে তেজগাঁ, আসাদগেইট, কাকরাইল, মিরপুর, বনানী ও বনশ্রী ক্যাথলিক চার্চ।

খরচ: মৃতদেহ সমাধিস্থ করার জন্য সেন্ট্রাল চার্চ কাকরাইল শাখায় ২ হাজার টাকা (বিশেষ ক্ষেত্রে ৩ হাজার টাকা) ফি প্রদান করে সমাধিস্থ করা হয়।

বর্তমানে মেয়াদি পদ্ধতিতে কবর নেওয়ার জন্য ১৫ বছরে ৩৫ হাজার টাকা ফি পরিশোধ করতে হয়। মেয়াদ শেষে ৫ বছরের জন্য ৫ হাজার টাকা ফি প্রদানের মাধ্যমে কবরের মেয়াদ নবায়ন করা যায়।

বৌদ্ধদের শ্মশান

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মৃতদেহ দাহ্য করার জন্য বৌদ্ধ সম্প্রদয়ের আশুলিয়া বোধি জ্ঞান ভাবনা কেন্দ্রে একটি শ্মশান রয়েছে।

এছাড়া সবুজবাগ থানায় রাজারবাগ কালীবাড়ি হিন্দু শ্মশনটি হিন্দুদের পাশাপাশি বৌদ্ধ শ্মশান হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।

মৃতদেহ পোড়াতে শ্মশানগুলোতে খরচ হয় প্রায় ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা।

বাসাবো শ্মশানের আনন্দ মিত্র ভিক্ষু জানান, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য সরকারিভাবে কোনও শ্মশান না থাকায় তারা রাজারবাগ হিন্দু শ্মশানে মৃত দেহের শেষ কাজ সম্পন্ন করেন।