আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ !

মাইক্রোসফটের বিল গেটস থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, হলিউডের জেনিফার লোপেজ থেকে বলিউডি হালের ‘ক্রেইজ’ সানি লিয়নি, ‘ভিনগ্রহের’ ফুটবলার লিয়নেল মেসি থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের মাস্টার ব্লাস্টার ক্রিকেটার ক্রিস গেইল- সবাই বরফ জলে নিজেদের শরীর ভিজিয়েছেন।

মিথুন বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2014, 10:54 AM
Updated : 2 Sept 2014, 10:54 AM

এমনকি খোদ বাংলাদেশেই কয়েকজন এই কাণ্ড করেছেন। হঠাৎ কী এমন হল, যে বালতিতে রাখা বরফ পানিতে ভিজেছেন সবাই আর সেই ভিডিওগুলো আপলোড করছেন সামাজিক গণমাধ্যমে আর তাতেই পড়ছে ‘হাজারও’ হিট?

কোথা হতে এল আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ?

অ্যামিয়োট্রফিক লেটেরাল স্ক্লেরোসিস বা এএলএস হচ্ছে মানুষের শরীরের অন্যতম দূরারোগ্য একটি ব্যাধি। এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা ও  চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা কাজে সাহায্য তহবিল যোগানের জন্যই ‘অভিনব’ প্রয়াস- এই আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ।

ব্যাপারটি অনেকটা অনেকটা এমন, বরফ গলানো বা মেশানো এক বালতি পানি মাথায় ঢেলে ভিডিও আপলোড করতে হবে অনলাইনে। এটা করতে পারলেই কেবল আপনি চ্যালেঞ্জটি ছুঁড়ে দিতে পারবেন আরও একজনের দিকে। আর যাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে সে যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজটি না করতে পারে, তাহলে জরিমানা হিসেবে এএলএস অ্যাসোসিয়েশনে ১০০ ডলার দান করতে হবে। সেটিই এখন করছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকারা। নিজেরা তো অংশ নিচ্ছেনই, অন্যদেরকেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছেন।

আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন চাইনিজ কোম্পানির দুই কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব জিন বো এবং জু চেন। ছবি: রয়টার্স।

টোকিওর সফ্টব্যাংক কর্প এর চিফ এক্সিকিউটিভ মাসায়োশি সনের আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ। ছবি: রয়টার্স।

এএলএস হলে কী হয়?

এটি ধীরে ধীরে মানুষের স্নায়ুর ক্ষমতা কমিয়ে ফেলতে শুরু করে। প্রথমে মস্তিষ্কের স্নায়ু দূর্বল করে দেয়। এরপর মেরুদণ্ড ও শেষে সারা শরীরের স্নায়ুর ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। সরল ভাষায়, মানুষ তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করতে পারে না। এখন পর্যন্ত মানুষ এই রোগের কোনও প্রতিরোধক অথবা যুৎসই চিকিৎসা প্রথা এখনও উদ্ভাবন করতে পারেনি। 

কত মানুষের এই রোগ আছে?

শুধু আমেরিকাতেই বছরে ৫ হাজার ৬শ’র মতো মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয় বলে জানায় এএলএস অ্যাসোসিয়েশন (এএলএসএ)। এই রোগে যে কেউই আক্রান্ত হতে পারে, মানে এতে কোনও নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠি অথবা বর্ণ অথবা বয়সের উপর বা অঞ্চলের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই।  

এ পর্যন্ত কত টাকা উঠেছে?

এএলএস আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ থেকে এখন পর্যন্ত ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল জমা পড়েছে বলে ২৯ অগাস্টের রিপোর্টে বলেছে পশ্চিমা সাময়িকী ফোর্বস। প্রতিবেদনে এই বরফ জলে ভেজাকে ‘জনসেবার ব্লকবাস্টার’ বলে উল্লেখ করা হয়! এএলএস-এ তাদের ওয়েবসাইটে ৩ মিলিয়ন মানুষকে অর্থদান করার জন্য জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ নিয়েছিলেন আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ। ছবি: রয়টার্স।

কানাডার ইউকোনের প্রধান ডারেল পোলাস্কি, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ক্রিস্টি ক্লার্ক এবং নুনাভাটের পিটার টাপটুনা নিয়েছিলেন এএলএস-এর আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ। ছবি: রয়টার্স।

বঙ্গদেশে আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ! 

আমাদের দেশেও কয়েকজন এই ঠান্ডা পানিতে ভিজেছেন। অন্যকেও ছুঁড়েছেন চ্যালেঞ্জ! ম্যাগিন্টো ডিজিটালের রিয়াদ হোসেনের আইস বাকেট চ্যালেঞ্জের ভিডিওতে দেখা গেছে পানি ঢেলেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।

হাসান বলেন, "যদিও আমাদের দেশে এএলএস রোগের সচেতনতা বিষয়ক কর্মকাণ্ড নেই তবে এই চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেও যদি আমরা কোনও ধরনের জনসেবামূলক কিছু করতে পারি, তবে ক্ষতি কি!" 

আর বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এই বরফজলে নিজেদের ভিজিয়েছেন বেশ মহৎ একটি উদ্দেশেই। তারা ঠিক করেছেন টাকা তুলে দান করবেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। জানান এসিয়াটিকের সিনিয়র স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানার শাফাত আলী। এই চ্যালেঞ্জে এশিয়াটিকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সারা জাকেরও অংশ নিয়েছেন।   

গ্রে বাংলাদেশের এমএ মারুফও সহকর্মীর ছুঁড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন বলে জানান। তিনি এএলএস সচেতনতা তৈরিতে সোশাল মিডিয়ায় মানুষের বৈশ্বিক অংশগ্রহণের ব্যাপারটিকে দেখছেন অনেকটা সোশাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক একটি ঘটনা হিসেবে। যেহেতু আমাদের দেশ থেকে আমেরিকাতে দান করা সম্ভব নয় তাই প্রবাসী এক বন্ধুকে ১০ ডলার তহবিলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।       

আঞ্চলিক প্রভাব

ভারতে রাইস বাকেট চ্যালেঞ্জ চালু হয়ে গেছে সোশাল মিডিয়ায়, এই খবর আবার বিলেতের ‘দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট’ও ছেপেছে। এটি শুরু করেছেন হায়দ্রাবাদের মাঞ্জু লাতা কালাইনিদিহি নামের এক সংবাদিক। দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত মানুষকে এক বালতি চাল প্রদান করবেন এইটাই চ্যালেঞ্জ। পত্রিকাটি আরও জানায়, এটি ভারতে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে।

এক বালতি চাল নিয়ে কী কী হচ্ছে তা জানতে হবে দেখুন ফেইসবুকে #‎RiceBucketChallenge

বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। এখানেও চলছে চাল ভর্তি বালতি চ্যালেঞ্জ। বিস্তারিত জানা যাবে: https://www.facebook.com/events/751241381604094/

আইস বাকেট চ্যালেঞ্জকে ফোর্বসের প্রতিবেদনে ‘জনসেবার ব্লকবাস্টার’ বলাটা বোধ হয় একেবারে বেমানান হয়নি। একেইতো এত সব নাম, তায় আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকাদের এই বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে অংশগ্রহণ। এছাড়া হাল জামানায় 'ভিজুয়াল কালচার'এ মানুষের বিশেষ আগ্রহ আর সোশাল মিডিয়ায় মানুষের দুর্নিবার আকর্ষণ এই জনসেবামূলক কাজে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বা অংশগ্রহনকে বোধ হয় খাটো করে দেখার মতো উপায় থাকছে না।